মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: করোনার ছুটি-পরবর্তী সময়ে বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে পুঁজিবাজারে। প্রায় ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বাজারে স্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। ফলে পুঁজিবাজারে সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ছে। অক্টোবরে পুঁজিবাজারে আসে ৭৫ হাজার বিনিয়োগকারী। তবে এক মাসের ব্যবধানে তা দ্বিগুণ হয়ে গেছে। শুধু বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটার তালিকাভুক্তির খবরে পুঁজিবাজারে এসেছে দেড় লাখ বিনিয়োগকারী।
গত ছয় মাসে পুঁজিবাজারে আসার অনুমতি পায় ১৪টি প্রতিষ্ঠান। মূলত এসব কোম্পানি আসার খবরে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। তবে দীর্ঘদিন পর বহুজাতিক কোম্পানি রবির তালিকাভুক্তির খবরে বাজারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে এই কোম্পানির আইপিওর খবরে বাজারে এসেছেন প্রায় দেড় লাখ বিনিয়োগকারী।
সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল) থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, অক্টোবর শেষে মোট বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৩ লাখ ৫৯ হাজার ৯৯০টি। নভেম্বর শেষে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৫ লাখ আট হাজার ৮৯২টি। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে এক লাখ ৪৮ হাজার ৯০২টি। এর মধ্যে নারীদের বিও অ্যাকাউন্ট রয়েছে প্রায় ৩৭ হাজার। ব্রোকারেজ হাউসগুলোয় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যারা এ সময় বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন তাদের সবারই উদ্দেশ্য প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগ করা।
বিষয়টি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করলে তারা জানান, দীর্ঘ ১০ বছর পর পুঁজিবাজারে বহুজাতিক কোম্পানি রবি আসায় তাদের প্রত্যাশা অনেক। যে কারণে তারা এ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করার জন্য বিও অ্যাকাউন্ট খুলেছেন। তারা এ কোম্পানিটিকে গ্রামীণফোনের সঙ্গে তুলনা করছেন।
গ্রামীণফোনের চেয়ে আর্থিক অবস্থার বিবেচনায় অনেক পিছিয়ে রবি আজিয়াটা। এই কোম্পানি মাত্র চার পয়সা ইপিএস নিয়ে বাজারে আসছে। কোম্পানিটি বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা কতটা পূরণ করতে পারবে, তা বুঝতে তালিকাভুক্তির পর এক বছর সময় লেগে যাবে। তবে বিষয়টি নিয়ে এখনই নেতিবাচক মন্তব্য করছেন না বাজারসংশ্লিষ্টরা।
একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, অনেক বিনিয়োগকারী আছেন যারা পুঁজিবাজারে প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগ করতে ভালোবাসেন। তারা অনেকেই বছর শেষে অ্যাকাউন্ট নবায়ন করেন না। নতুন আইপিও এলে তারা আবারও নতুন অ্যাকাউন্ট খোলেন। তিনি বলেন, রবির আইপিওর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি ছিল, যে কারণে তারা পুঁজিবাজারের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। বিনিয়োগকারীরা এখন অনেক বেশি সচেতন। তারা দুর্বল কোম্পানির আইপিও যেমন এড়িয়ে চলেন, তেমনি ভালো কোম্পানি এলে তার প্রতি আগ্রহ দেখান। এটা বাজারের পুঁজিবাজারের জন্য ভালো লক্ষণ।
এদিকে পুঁজিবাজারে প্রতি সর্ব সাধারণের আগ্রহকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম। তিনি বলেন, পুঁজিবাজার যাতে ভালো হয় সে জন্য আমরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যাচ্ছি। পুঁজিবাজারের প্রতি ধীরে ধীরে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরে আসছেÑএটা ভালো খবর। প্রত্যাশা করছি, আগামী বছর বাজারের অবস্থা ভালো হবে।
স্মরণকালের (২০১০ সালের) ভয়াবহ ধসের পর আর স্বরূপে ফিরতে পারেনি পুঁজিবাজার। মাঝে মধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারও পতনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যার ধারাবাহিক ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে। গত ছয় বছরে নবায়ন না করায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৯ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট। বর্তমানে বাজারচিত্র বদলে যাওয়ায় আবারও পুঁজিবাজারে ফিরছেন বিনিয়োগকারীরা।
নিয়মানুযায়ী, জুনে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়।
এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেওয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।