Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 4:01 pm

এক মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন বেড়েছে ২৪ শতাংশ  

নিজস্ব প্রতিবেদক: মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন ক্রমেই বাড়ছে। এক মাসের ব্যবধানে এ লেনদেনের পরিমাণ বেড়েছে ২৪ শতাংশ। গত অক্টোবরে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৯১ কোটি টাকা। আলোচ্য মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মীদের বেতন-ভাতা পরিশোধের হার বেড়েছে প্রায় ১৪৯ শতাংশ। এদিকে সর্বশেষ হিসাবমতে, দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহকসংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৭৭ লাখ।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন ক্রমেই বাড়ছে। গত আগস্টে লেনদেন ছাড়িয়ে গিয়েছিল হাজার কোটি টাকা। লেনদেনে নতুন সীমা আরোপ করায় মোবাইল ব্যাংকিংয়ে লেনদেন কিছুটা কমেছে।

জানা গেছে, গত ১১ জানুয়ারি হুন্ডি এবং অপব্যবহার রোধে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের লেনদেনের সীমা কমায় বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই নির্দেশে বলা হয়, এখন থেকে কোনো মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবে পাঁচ হাজার টাকা বা তার বেশি নগদ অর্থ জমা বা উত্তোলনে গ্রাহককে পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডের ফটোকপি দেখাতে হবে, যা এজেন্টকে তার রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করতে হবে। রেজিস্টারে গ্রাহকের সই বা টিপসই সংরক্ষণের নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিনের টাকা উত্তোলনের সীমা ২৫ হাজার থেকে কমিয়ে ১০ হাজার টাকায় নির্ধারণ করা হয়, তবে দিনে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার টাকা জমা দেওয়া যাবে। মাসে ১০ বারের বেশি অর্থ উত্তোলন করা যাবে না। এক মাসে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা যাবে। আর জমা মাসে সর্বোচ্চ ২০ বার বা সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা দেওয়া যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গত অক্টোবর শেষে দেশে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের গ্রাহক সংখ্যা ছাড়িয়েছে পাঁচ কোটি ৭৭ লাখ। এক মাসের ব্যবধানে সক্রিয় হিসাবের সংখ্যা ছয় দশমিক ৭৫ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে দুই কোটি ৭৯ লাখ। গত সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার আওতায় খোলা হিসাবের মধ্যে সক্রিয় হিসাব ছিল তিন কোটি। জানা গেছে, নিয়ম অনুযায়ী, কোনো অ্যাকাউন্ট থেকে টানা তিন মাস কোনো ধরনের লেনদেন না হলে তা ইন্যাকটিভ বা নিষ্ক্রিয় অ্যাকাউন্ট হিসেবে বিবেচিত হয়। আর তিন মাসের মধ্যে একটি লেনদেন হলেই তা সক্রিয় হিসেবে বিবেচিত। অবশ্য বড় কোনো অনিয়ম না পাওয়া গেলে অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে না ব্যাংক।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, অক্টোবর মাস শেষে ব্যাংকগুলোর মনোনীত এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সাত লাখ ৭৪ হাজার ৮৯২ জন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এজেন্টের সংখ্যা ছিল সাত লাখ ৭৩ হাজার ২৮৩ জন। ফলে এক মাসে এজেন্ট বেড়েছে শূন্য দশমিক ২১ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, অক্টোবর মাসে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশ ইন ট্রানজেকশন হয়েছে ১১ হাজার ৭২২ কোটি ২১ লাখ টাকা। এ সময়ে ক্যাশ আউট ট্রানজেকশন হয়েছে ১০ হাজার ৫৮৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। সেপ্টেম্বর মাসে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি পর্যায়ে ট্রানজেকশন হয়েছে চার হাজার ৪৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় সেপ্টেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে প্রবাসীরা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ পাঠিয়েছেন সাত দশমিক এক শতাংশ বা ছয় কোটি ২৬ লাখ টাকা। অন্যদিকে এক মাসের ব্যবধানে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বেতন পরিশোধের হার বেড়েছে প্রায় ১৪৯ শতাংশ। অক্টোবর মাসে এই মাধ্যমে বেতন পরিশোধ করা হয়েছে ৩৮২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। গ্যাস-বিদ্যুৎসহ মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় অক্টোবর মাসে ইউটিলিটি বিল পরিশোধ করা হয়েছে ২৩৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। আগের মাসের তুলনায় অক্টোবর মাসে অন্যান্য বিল বাবদ লেনদেন ৯ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে দেশের ১৯টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং করার অনুমোদন পেলেও ১৮টি ব্যাংক বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং চালু করেছে। এর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ‘বিকাশ’ এবং ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের ‘রকেট’ মোবাইল ব্যাংকিং এ সেবায় এগিয়ে রয়েছে। দ্রুততম সময়ে একস্থান থেকে অন্যস্থানে টাকা পাঠানোর অন্যতম জনপ্রিয় মাধ্যম মোবাইল ব্যাংকিং। বর্তমানে এ সেবা ব্যবহার করেই মানুষ তাদের পরিবার-পরিজন ও নিকটাত্মীয়ের কাছে বেশি টাকা পাঠাচ্ছেন।