নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনা মহামারির মধ্যে এ বছরও পক্ষকাল দেরিতে একুশের বইমেলা শুরু হলেও, তা বরাবরের মতো মাসব্যাপী চালানোর পক্ষেই বলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ‘অমর একুশে গ্রন্থমেলা-২০২২’ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। এর মধ্য দিয়ে বাঙালির ‘প্রাণের মেলা’র ৩৮তম আসর শুরু হলো।
কভিড সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বইমেলা পিছিয়ে দেয়া হয়। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু করে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মেলা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। তবে সংক্রমণের হার এখন কমে যাওয়ায় মেলা এক মাস চালাতে চাইছে বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, ‘সংক্রমণ কমলে মেলার সময় কিছুটা বাড়াতে পারব। সে জন্য আমরা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার অপেক্ষায় আছি।’
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের প্রকাশকদের পক্ষ থেকেও একটা দাবি এসেছে যে, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম দিন ১ মার্চ, সে হিসেবে মার্চ মাস পর্যন্ত এটা চালাতে পারে। আমি মনে করি, যে বইমেলাটা আমরা এক মাস চালাতে পারি। তবে সেটা আপনারা নিজেরাও দেখবেন ভেবে। কারণ আমি একা তো আর কিছু বলতে পারব না। এটা আপনাদেরই কতটুকু করতে পারবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশের বইমেলা যে শুধু বইয়ের মেলা নয়, সকলের মিলনমেলা, সেদিক বিবেচনায় মেলার সময়ের ব্যাপ্তি বাড়ানোর কথা বলেন সরকারপ্রধান। বইমেলায় আসার ক্ষেত্রে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি।
সরকারের টিকা কার্যক্রম নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে টিকা দিচ্ছি। বুস্টার ডোজও দেয়া হচ্ছে। যারা নেননি অবশ্যই তাদের টিকা এবং বুস্টার ডোজটা নিয়ে নিতে হবে। যাদের দুটো নেয়া হয়ে গেছে তারা বুস্টার ডোজ নেবেন। যাদের এখনও টিকা নেয়া হয়নি, তারা সবাই কিন্তু টিকাটা নেবেন। টিকাটা নেয়া থাকলে আপনি একটু সুরক্ষিত থাকেন।’
মহামারির কারণে সশরীরে মেলায় উপস্থিত থাকতে না পারায় আক্ষেপ প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার দুঃখ হলো যে, করোনার কারণে আমি ঘরবন্দি। ভাগ্যিস ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছিলাম, তাই অন্তত এই ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে আপনাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হচ্ছে।’
বইমেলা ঘিরে নিজের শৈশব স্মৃতি স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘সেই স্কুল জীবন থেকে আমরা তো সব সময় ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে আসতাম আন্দোলন-সংগ্রাম করতে। তারপর বাংলা একাডেমি প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর বাংলা একাডেমিতে যখন বইমেলা শুরু হলো, আমার তো মনে হয় যে কোনো বইমেলা বাদ দিইনি। সারাদিন এই বইমেলায় ঘুরে বেড়ানো এটা তো আমাদের একটা অভ্যাসই ছিল। কিন্তু যখন প্রধানমন্ত্রী হয়ে গিয়েছি, তখনই পায়ে শেকল পড়ল। নিরাপত্তার অজুহাতে আর ওই বইমেলায় আগের মতো স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগটা থাকেনি। আবার যখন বিরোধী দলে ছিলাম, তখন আবার গিয়েছি, তখন আবার সুযোগ ছিল। এখন তো সেই ২০০৯ সাল থেকে এই বন্দিদশায় আছি। আর করোনাকালীন আরও বেশি বন্দি হয়ে গেছি।’
বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে বইমেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ, সংস্কৃতিবিষয়ক সচিব মো. আবুল মনসুর, বাংলা একাডেমির সভাপতি সেলিনা হোসেন, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস) সভাপতি মো. আরিফ হোসেন বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী খালিদ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার-২০২১ জয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।
মেলায় মোট ৩৫টি প্যাভিলিয়নসহ একাডেমি প্রাঙ্গণে ১০২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৪২টি এবং সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৩২টি প্রতিষ্ঠানকে ৬৩৪টি ইউনিটসহ মোট ৫৩৪টি প্রতিষ্ঠানকে ৭৭৬টি ইউনিট বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।