এক যুগ পর পুঁজিবাজারে সোনালি দিন ফিরেছে

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে ২০১০ সালে সবচেয়ে বড় ধস হয়। এর আগে ২০০৯ সালে রমরমা ছিল পুঁজিবাজার। এরপর দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও পুঁজিবাজারের অবস্থান আর ভালো হয়নি। মাঝে কয়েকবার বাজার ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। আবার নিম্নমুখী হয়েছে বাজার। অবশেষে দীর্ঘ এক যুগ পর পুঁজিবাজারে সুদিন ফিরেছে। এরপর দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রয়েছে। ফলে বাজার নিয়ে আবার ভাবতে শুরু করেছেন বিনিয়োগকারীরা।

সাম্প্রতিক বাজারচিত্রে দেখা যায়, একই সঙ্গে বাড়ছে প্রায় সব ধরনের শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটদর। একই সঙ্গে বাড়ছে সূচক ও বাজার মূলধন, বর্তমানে যা রেকর্ড অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে (গতকাল পর্যন্ত) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৪৯ দশমিক ৫৩ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে ছয় হাজার ৭৪৮ দশমিক ৯২ পয়েন্টে। ডিএসইর এ সূচকটি চালুর পর থেকে সর্বোচ্চ অবস্থানে ওঠে। এর আগে সূচক কখনও এ পর্যায়ে পৌঁছায়নি। রের্কড পর্যায়ে রয়েছে ডিএসইর অন্যান্য সূচক। অপর সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ্ সূচক ৯ দশমিক ৭৯ পয়েন্ট ও ডিএসই-৩০ সূচক শূন্য দশমিক শূন্য পাঁচ পয়েন্ট বেড়ে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৪৬৮ দশমিক ৮৩ ও দুই হাজার ৪২৭ দশমিক ৬২ পয়েন্টে।

এদিকে বর্তমানে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার মূলধন সর্বোচ্চ অবস্থানে রয়েছে। বর্তমানে ডিএসইর বাজার মূলধন রয়েছে পাঁচ লাখ ৪৯০ হাজার কোটি টাকা, যা আগে কখনও হয়নি। বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, বাজারে বর্তমান যে পরিস্থিতি রয়েছে, তা বিরাজ করলে অচিরে বাজার মূলধন ছয় লাখ কোটি টাকা হয়ে যাবে।

অন্যদিকে বর্তমানে ধারাবাহিকভাবে দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার বেশি লেনদেন হচ্ছে। বাজারের সার্বিক পরিস্থিতি এমন থাকলে অচিরে লেনদেন তিন হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। তাদের মতে, বাজার পরিস্থিতি ঠিক থাকলে সূচক কত হলে লেনদেন কত হচ্ছে, তা ভাবার বিষয় নয়।

পুঁজিবাজারের ইতিহাসে মাত্র এক দিন তিন হাজার কোটি টাকার বেশি লেনদেন হতে দেখা যায়। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর ডিএসইতে সর্বোচ্চ লেনদেন হয়। সেদিন লেনদেনের পরিমাণ ছিল তিন হাজার ২৪৯ কোটি টাকা।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এখন পর্যন্ত পুঁজিবাজারের সার্বিক যে পরিস্থিতি রয়েছে তাকে ভালো বলতে হবে। এখনও স্বাভাবিক রয়েছে পুঁজিবাজার। তবে খেয়াল রাখতে হবে, বাজার যেন ২০১০ সালের মতো না হয়। তেমন কোনো পরিবেশ সৃষ্টি না হয়। কয়েক দিন আগে বিমা কোম্পানির শেয়ারদর একটু বেশি বেড়ে গিয়েছিল, এখন আবার দর কমছে। এটা স্বাভাবিক বাজারের লক্ষণ। তবে এর মাঝেও বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। তাদের বিনিয়োগ করতে হবে কোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে।

একই বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো পর্যায়ে রয়েছে। লেনদেন যা হচ্ছে তাও সন্তোষজনক। আমরা চেষ্টা করছি পুঁজিবাজার পরিস্থিতি যেন আরও ভালো হয়। এজন্য আমরা ভালো কোম্পানির আইপিওর অনুমোদন দিচ্ছি। সবমিলে পুঁজিবাজারের অনুকূল পরিবেশ বিরাজ করছে।

প্রসঙ্গত, ২০১০-১১ সালে কয়েক দিনের ব্যবধানে বাজারে বেশিরভাগ শেয়ার অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। হুজুগে মেতে মৌলভিত্তি যাচাই না করে বিনিয়োগকারীরা এসব অতিমূল্যায়িত শেয়ার কেনেন। পরবর্তী সময়ে বাজারে পতন হলে তাদের বড় ধরনের লোকসানে পড়তে হয়, যার মাশুল তারা আজও দিয়ে যাচ্ছেন। ২০১০ সালের শেষদিকে যারা বিনিয়োগ করেছিলেন, তারাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। সে সময় মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে ডিএসইর সূচক প্রায় ১২০০ পয়েন্ট বেড়ে ৮৯১৮-এ অবস্থান করে। আর ডিএসইর লেনদেন গিয়ে দাঁড়ায় ৩২৪৯ কোটি টাকায়। কোনো কোনো শেয়ার ৩০০ থেকে ৪০০ শতাংশ পর্যন্ত অতিমূল্যায়িত হয়ে পড়ে। এর পরপর বাজারে ধস নামে। ২০১০ সালের ৫ ডিসেম্বর এক দিনের ব্যবধানে সূচকের পতন হয় ৬০০ পয়েন্ট। পরবর্তী সময়ে সূচক সাড়ে তিন হাজারের ঘরে নেমে যায়। লেনদেন চলে যায় ২০০ কোটি টাকার নিচে। সে সময় যারা অতিমূল্যায়িত শেয়ার কিনেছিলেন, তারা আজও লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেননি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০