শেয়ার বিজ ডেস্ক
বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া ১ লাখ রোহিঙ্গাকে যুক্তরাজ্যে পুনর্বাসনের অনুরোধ জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
গত রোববার (২৬ জুন) রুয়ান্ডার রাজধানী কিগালিতে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রসকে এ অনুরোধ করেন আব্দুল মোমেন। কিগালিতে কমনওয়েলথ পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের ফাঁকে আব্দুল মোমেন ও এলিজাবেথ ট্রস আলোচনা করেন। আজ সোমবার (২৭ জুন) বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আব্দুল মোমেন বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে ১১ লাখ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত হওয়া মিয়ানমারের নাগরিকের ভার বহন করা আর সম্ভব হচ্ছে না। যুক্তরাজ্য যদি ১ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে পুনর্বাসন করে, তাহলে তারা আরও উন্নত জীবন পাবে এবং বাংলাদেশেরও অন্যায্য ভার লাঘব হবে।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিজাবেথ ট্রাস রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের উদার আতিথেয়তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের প্রস্তাবটি বিবেচনা করবে যুক্তরাজ্য। তবে রোহিঙ্গা সমস্যার সবচেয়ে ভালো সমাধান হলো, মিয়ানমারে তাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন।
মিয়ানমারের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় ব্রিটিশ সরকারের উদ্বেগ প্রকাশ করে ট্রাস রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাজ্যের অব্যাহত প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করে আশ্বাস দেন, আসিয়ান ও এর সহযোগী জি৭ দেশগুলোর সঙ্গে যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য মিয়ানমারের ওপর চাপ বাড়াবে।
ড. মোমেন বলেন, ‘যুক্তরাজ্য গত তিন বছরে মিয়ানমারে ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বিনিয়োগ করেছে এবং ৫০০ মিলিয়নেরও বেশি দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য করেছে। তাদেরও রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে।’
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাজ্যে উচ্চশিক্ষার জন্য আসা শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন স্টুডেন্ট ও বিজনেস ভিসা দেয়ার কার্যক্রম আবারও ঢাকা থেকে পরিচালনার অনুরোধ জানান। এতে প্রতি বছর ৭ থেকে ৮ হাজার শিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য যুক্তরাজ্যে যেতে পারবে বলে তিনি জানান।
বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে দুই দেশের রাজধানীতে বৈশ্বিক নারী শিক্ষা সম্মেলন, জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে নেতাদের সংলাপ ও রোহিঙ্গা সম্মেলন আয়োজনের বিষয়ে একমত হন।
বাণিজ্য সম্পর্কের প্রেক্ষাপটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন যুক্তরাজ্যের করবিহীন জিএসপি সুবিধার মেয়াদকে ২০২৯ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর অনুরোধ করেন।
তিনি মহামারি-পরবর্তী পরিস্থিতিতে বাংলাদেশি তৈরি পোশাকশিল্পের বিভিন্ন ক্ষয়ক্ষতির বিস্তারিত তুলে ধরেন, যার মধ্যে আছে যুক্তরাজ্যের খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে আসা অর্ডার বাতিল হওয়া ও তাদের অনেকের পণ্য বুঝে পেয়েও মূল্য পরিশোধে ব্যর্থতা।
দুই মন্ত্রী একমত হন, আগামীতে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী এবং প্রয়োজনে একটি ‘মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল’ তৈরি করা উচিত। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন খুব শিগগির বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য এলিজাবেথ ট্রাসকে অনুরোধ জানান।
বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সায়দা মুনা তাসনিম।