Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 9:05 am

এক লাফে পানির তিনগুণ দাম বাড়াচ্ছে রাজশাহী ওয়াসা

মেহেদী হাসান, রাজশাহী: রাজশাহী পানি সরবরাহ ও পয়োনিষ্কাশন কর্তৃপক্ষ (ওয়াসা) এক লাফে পানির দাম তিনগুণ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বর্ধিত দাম আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকর হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। পানির বাড়তি দামের বিষয়ে ওয়াসা তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট ও পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়েও প্রচার করছে। তবে পানির দাম বৃদ্ধি করায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন সাধারণ মানুষ।

জানা গেছে, সিটি করপোরেশনের পানি সরবরাহ শাখাকে আলাদা করে ২০১০ সালের ১ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত হয় রাজশাহী ওয়াসা। প্রতিষ্ঠানটি ২০১১ সাল থেকে রাজশাহী মহানগরে পানি সরবরাহের কাজ করছে। বর্তমানে শহরে দৈনিক পানির চাহিদা ১২৫ মিলিয়ন লিটার। এর বিপরীতে ওয়াসা দৈনিক ১০৪ মিলিয়ন লিটার পানি সরবরাহ করে। এখন ১০৩টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে পানি উত্তোলন করে তা পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করছে ওয়াসা। ৭১২ কিলোমিটার পাইপলাইনের মাধ্যমে এ পানি নগরে সরবরাহ করা হয়।

রাজশাহী মেস মালিক সমিতি, রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদসহ বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা পানির দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদ করেছেন। অবিলম্বে ওয়াসা পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে আন্দোলনের হুমকিও দিচ্ছেন তারা। তবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষ বলছে, সেবার মান বৃদ্ধির ফলে উৎপাদন খরচের সঙ্গে সমন্বয় করেই মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এটি দেশের অন্য নগরের চেয়ে এখনও কম।

ওয়াসার বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ১ ফেব্রুয়ারি থেকে প্রতি এক হাজার লিটার পানির মূল আবাসিক স্থলে ছয় দশমিক ৮১ টাকা এবং বাণিজ্যিক স্থলে ১৩ দশমিক ৬২ টাকায় নির্ধারণ করা হলো। বিজ্ঞপ্তিতে পাইপের ব্যাস ও ভবনের তলার ভিত্তিতে নতুন মূল্য নির্ধারণের তালিকা প্রকাশ করার কথা বলা হয়েছে।

রাজশাহী ওয়াসা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে প্রতি এক হাজার লিটার পানি উত্তোলন, পরিশোধন ও সরবরাহে ওয়াসার খরচ হয় আট টাকা ৯০ পয়সা। এত দিন আবাসিক সংযোগে প্রতি এক হাজার লিটার পানির দাম ধরা হতো দুই টাকা ২৭ পয়সা। দাম বাড়িয়ে তা করা হয়েছে ছয় টাকা ৮১ পয়সা। বাণিজ্যিক সংযোগের ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি থেকে একই পরিমাণ পানির মূল্য ধরা হয়েছে ১৩ টাকা ৬২ পয়সা। এ পানির দাম আগে ছিল চার টাকা ৫৪ পয়সা। আগের মূল্যের তুলনায় আবাসিক ও বাণিজ্যিক উভয়ের ক্ষেত্রেই পানির দাম তিনগুণ বাড়ানো হচ্ছে।

অন্যদিকে ওয়াসার যেসব সংযোগে মিটার নেই, সেগুলোর ক্ষেত্রে সংযোগ পাইপের ব্যাস ও ভবনের তলার ওপর নির্ভর করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আবাসিক স্থলে আধা ইঞ্চি পাইপে নিচতলার জন্য মাসে সর্বনি¤œ ১৫০ টাকা ও ১০ তলার জন্য ৮২৫ টাকা মূল্য ধরা হয়েছে। এক ইঞ্চি পাইপে নিচতলায় ৩৭৫ টাকা এবং ১০ তলায় দুই হাজার ৭০ টাকা। দ্বিতীয় থেকে নবম তলা পর্যন্ত কিংবা ১০ তলার ওপরের তলার জন্য পানির বিল আনুপাতিক হারে বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

নগরীর ১নং সেক্টরের মেসের কয়েকজন শিক্ষার্থী শেয়ার বিজকে বলেন, পানির দাম ঘোষণার কারণে মেসের মালিক আগামী মাস থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন। এমনিতেই খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। তার মধ্যে পানির দাম বৃদ্ধি আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। ওয়াসার এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করতে হবে।

রাজশাহী মেস মালিক সমিতির সভাপতি এনায়েতুর রহমান বলেন, এ মুহূর্তে পানির দাম বাড়ানো হলে সেটা আবারও শিক্ষার্থীদের মধ্যেই পড়বে। তাই তারা চান, এ মুহূর্তে পানির দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে ওয়াসা সরে আসুক। কারণ শিক্ষার্থী বা মেস মালিক কেউই ভালো নেই।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান শেয়ার বিজকে বলেন, ওয়াসার পানি নিরাপদ নয়, খাওয়া যায় না। তারা নগরবাসীকে সুপেয় পানি নিশ্চিত করবে বলে বলেছিল, কিন্তু করেনি। ব্যাকটেরিয়াযুক্ত পানি পান করে পেটের পীড়াসহ নানা রোগে ভুগছেন নগরবাসী। এ সময়ে পানির দাম বাড়ানো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। ওয়াসা এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না এলে নগরবাসীকে নিয়ে কঠোর আন্দোলন করা হবে।

এ বিষয়ে রাজশাহী ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) জাকীর হোসেন বলেন, সারাদেশের অন্যান্য জায়গার তুলনায় পানির দাম কম রাজশাহীতে। ওয়াসা প্রতিষ্ঠার পর সবশেষ ২০১৪ সালে পানির দাম বাড়ানো হয়েছিল। ১ ফেব্রুয়ারি থেকে কার্যকরের সিদ্ধান্ত নেয়া পানির মূল্যও অনেক কম।

তিনি আরও বলেন, সরকারের ওপর নির্ভর করে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। এটাকে নিজের আয় দিয়ে চলার মতো সক্ষমতা অর্জন করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে। পানির উৎপাদন খরচও বেড়েছে, সেবার মানও বৃদ্ধি করা হয়েছে। তাই পানির দাম বাড়ানো হয়েছে।