প্রতিনিধি, যশোর: যশোরের বাজারে হু হু করে বেড়েই চলেছে সবজির দাম। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে অধিকাংশ সবজির দাম প্রতি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অবিরাম বৃষ্টির কারণে সবজির ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে; এ কারণে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি পড়েছে। তবে ভোক্তারা বলছেন, দুর্যোগের দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা সবজির আকাশচুম্বী দাম নিচ্ছেন। এদিকে মূল্যবৃদ্ধির ফলে বেকায়দায় পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ ও নিন্মমধ্যবিত্ত শ্রেণির লোকরা।
যশোরের বড়বাজারে এ সপ্তাহে প্রায় প্রতিটি সবজির মূল্য অস্বাভাবিকহারে বেড়েছে। এমনিতেই ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে মাসখানেক ধরে সবজির বাজার অস্থিতিশীল, তার ওপর সম্প্রতি অবিরাম বৃষ্টিতে ক্ষেত নষ্ট হওয়ার কারণে বাজারে এর প্রভাব পড়েছে। বিক্রেতারা জানান, সবজির অগ্নিমূল্যের কারণে ক্রেতারা বাজারমুখো হচ্ছেন না। বাজার অনেকটা ফাঁকাই।
সরেজমিন গিয়ে যশোর এইচএমএম রোডের দু’ধারে সবজি বিক্রেতাদের প্রায় অলস সময় বসে কাটাতে দেখা যায়। খুচরা বিক্রেতা মো. আল-আমিন বলেন, তিনি বাজারে নতুন ওঠা ফুলকপি প্রতি কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। বেগুন বিক্রি করছেন ৭০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। উচ্ছে বিক্রি করছেন ৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৬০ টাকা। ঢেঁড়স বিক্রি করছেন ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। পটোল বিক্রি করছেন ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা।
এছাড়া ঝিঙে বিক্রি করছেন ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। লাউ প্রতিটি বিক্রি করছেন ৫০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ টাকা। পালংশাক বিক্রি করছেন ৪০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ৩০ টাকা। তাছাড়া এদিন বাজারে কুশি ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, আমড়া ৪০ টাকা, ওল ৫০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা, কাঁচকলা ৫০ টাকা, টমেটো ৯০ টাকা, শসা ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে সবজির দাম বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে এইচএমএম রোডের পাইকারি সবজি ব্যবসায়ী ‘আরিফ ভাণ্ডার’-এর স্বত্বাধিকারী শাহাবুদ্দিন মাতব্বর জানান, মে মাসের শেষ সপ্তাহে দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণে সবজির ক্ষেত একেবারে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। সেখান থেকে চাষিরা কোনোরকম ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন। কিন্তু বর্তমানে অবিরাম বৃষ্টিতে আবারও সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়েছে। অনেক জায়গায় এখনও ক্ষেতে পানি জমে আছে। এ কারণে বাজারে সরবরাহে ঘাটতি পড়ে সবজির দাম বেড়েছে। নতুন করে আবাদে চাষিদের আরও বেশ কিছুটা সময় লাগবে।
এদিকে বাজার করতে আসা ক্রেতা চুড়িপট্টির বাসিন্দা মো. আবু বক্কার অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের মতো নি¤œ মধ্যবিত্তদের আর বাজার করা সম্ভব হচ্ছে না। বাঁচার তাগিদে খেতে হয় বলে বাজারে এসেছি। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে এভাবে সবজির দাম বাড়লে সামনের দিনগুলোতে না খেয়ে থাকতে হবে।’
পশ্চিম বারান্দিপাড়ার বাসিন্দা ক্রেতা মাছ ব্যবসায়ী হাজি সালাহউদ্দিন আক্ষেপ করে বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় আম্পান বা সম্প্রতি অবিরাম বৃষ্টিতে সবজির ফসল ক্ষতি হয়েছে ঠিকই, কিন্ত একদিনে একেবারে সব সবজির ক্ষতি হয়েছে এমনটা নয়। উঁচু জায়গার ক্ষেত থেকে জমা পানি নেমে যাওয়ায় সবজি আবার প্রাণ ফিরে পেয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির দোহাই দিয়ে ব্যবসায়ীরা বাজারে সবজির দাম বাড়িয়ে দিচ্ছেন। হঠাৎ করে কেজিতে ১০-২০ টাকা বাড়তে পারে না। বাজার মনিটরিং অব্যাহত থাকলে আমাদের মতো সাধারণ মানুষ প্রকৃত মূল্যে নিত্যপণ্য কিনতে পারতাম।’
এ বিষয়ে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর যশোর জেলা মার্কেটিং অফিসার সুজাত হোসেন খান বলেন, কৃষি বিপণন আইন-২০১৮ অনুযায়ী আড়ত থেকে পাইকারি মূল্যে পণ্য কিনে খুচরা দোকানিরা পচনশীল সবজিতে ২০-২৫ ভাগ মূল্য সংযোজন করে বিক্রি করতে পারবেন। এর বেশি মূল্য নিলে তাদের বিরুদ্ধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে। করোনার কারণে একটু শিথিল করা হয়েছে, তবে আমরা খুব শিগগিরই বাজারে অভিযানে নামব।