নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি জুলাইয়ের প্রথম তিন সপ্তাহ রেমিট্যান্স প্রবাহ ভালো ছিল। তবে চতুর্থ সপ্তাহ এসে রেমিট্যান্স প্রবাহে ব্যাপক পতন হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১ থেকে ৬ জুলাই পর্যন্ত দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ৩৭ কোটি ডলার। ৭ থেকে ১৩ জুলাই এসেছে ৬০ কোটি ৮১ লাখ ডলার। ১৪ থেকে ২০ জুলাই এসেছে ৪৫ কোটি ডলার। এই সাত দিনে গড়ে রেমিট্যান্স এসেছে ৬ কোটি ৪২ লাখ ডলার। আর ২১ থেকে ২৭ জুলাই পর্যন্ত এসেছে ১৩ কোটি ৮০ লাখ ডলার। চতুর্থ সপ্তাহ গড়ে তা এসেছে ১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার। অর্থাৎ তৃতীয় সপ্তাহের চেয়ে চতুর্থ সপ্তাহ রেমিট্যান্স প্রবাহ কমেছে ৬৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, ১ থেকে ২৮ জুলাই পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছে ১৬৫ কোটি ডলার। অথচ গত জুন মাসের ১ থেকে ২৮ তারিখ পর্যন্ত রেমিট্যান্স এসেছিল ২৩৭ কোটি ৪৫ লাখ ডলার। সেই হিসাবে রেমিট্যান্স কমেছে ৩০ দশমিক ৫১ শতাংশ। খাতসংশ্লিষ্টরা জানান, শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী সংঘাত-সংঘর্ষ, ইন্টারনেট বন্ধ ও কারফিউর প্রেক্ষাপটে গত এক সপ্তাহে (২১ থেকে ২৭ জুলাই) রেমিট্যান্স উল্লেখযোগ্য পরিমাণে কমে গেছে। এছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় চলমান ‘রেমিট্যান্স শাটডাউন’ প্রচারণার প্রভাব পড়েছে।
দেশে দীর্ঘদিন ধরে ডলার-সংকট চলছে। এ সংকট কাটাতে প্রবাসী আয়সহ বিদেশ থেকে অর্থ আনতে নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মধ্যে ডলারের দাম নির্ধারণের ক্ষেত্রে আগের তুলনায় তদারকি কমানো হয়েছে। পাশাপাশি যে কোনো ধরনের অর্থ বৈধপথে দেশে আনার ক্ষেত্রে যে নিয়মকানুন রয়েছে, তা শিথিল করেছে। যার ইতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রবাসী আয়ে। সর্বশেষ জুন মাসে রেকর্ড ২৫৪ কোটি ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসে, যা ছিল ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। প্রবাসী আয়ের এই গতি গত ১৮ জুলাই পর্যন্ত মোটামুটি স্বাভাবিক ছিল। তবে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ঘিরে সৃষ্ট সহিংসতা বেগবান হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ১৮ জুলাই রাত থেকে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করা হয়। পরদিন ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত থেকে কারফিউ জারি করে সরকার। এরপর রোববার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত ব্যাংক বন্ধ ছিল।
ইন্টারনেট সংযোগ না থাকায় ব্যাংকের অনলাইন লেনদেনও বন্ধ ছিল। কয়েক দিন লেনদেন বন্ধের পর ২৪ জুলাই সীমিত পরিসরে ব্যাংক চালু হয়। ওইদিন লেনদেন চলে বেলা ১১টা থেকে ৩টা পর্যন্ত ৪ ঘণ্টা। ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ থাকায় ১৯ থেকে ২৩ জুলাই বৈধপথে তথা ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে প্রবাসী আয় আসাও সম্ভব ছিল না। এ সময়ের মধ্যে যারা বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় পাঠিয়েছেন, গত বুধবার ব্যাংক খোলার প্রথম দিনেই তা দেশের ব্যাংকে জমা হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু সেটি হয়নি।
এদিকে চলতি জুলাইয়ে রেমিট্যান্সের প্রবাহ কমার সম্ভাবনা থাকায় বাংলাদেশ ব্যাংক গত রোববার কিছু ব্যাংককে রেমিট্যান্স সংগ্রহে নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি দরে কেনার মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে বেশি দরে রেমিট্যান্স সংগ্রহ করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ডেপুটি গভর্নর মৌখিকভাবে একডজন ব্যাংককে নির্দেশ দিয়েছেন। যেসব ব্যাংক রেমিট্যান্সের একটি বড় অংশ পায়, এমন ব্যাংকগুলোকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়।