আয়নাল হোসেন: দেশে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নিত্যপণ্যের দাম। চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ ও আলু থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের দামই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত চার দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি দেশি রসুনের মূল্য বেড়েছে সর্বোচ্চ ২০ টাকা। রাজধানীর খুচরা বাজারগুলোয় খোঁজ নিয়ে এই তথ্য জানা গেছে।
রাষ্ট্রয়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবারও প্রতিকেজি দেশি রসুন বিক্রি হয়েছিল ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। গত রোববার দাম বেড়ে তা বিক্রি হয় ৯০ থেকে ১১০ টাকায়। অর্থাৎ মাত্র চার দিনের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১০ থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত, যা শতকরা হিসাবে বেড়েছে কেজিপ্রতি ১৭ দশমিক ৬৫ শতাংশ। তবে গত বছর একই সময়ে প্রতি কেজি দেশি রসুনের মূল্য ছিল ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। গত বুধবার প্রতিকেজি বিদেশি রসুনের দাম ছিল ৬৫ থেকে ৮০ টাকা, যা গত রোববার বিক্রি হয় ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। এক বছর আগে একই রসুন বিক্রি হয়েছিল ১৪০ থেকে ১৬০ টাকায়।
গতকাল বিকালে রাজধানীর হাতিরপুল বাজার থেকে রসুন কিনেছিলেন আকবর আলী নামে বেসরকারি অফিসের একজন কর্মকর্তা। তিনি জানান, গত সপ্তাহের বাজেটের সঙ্গে চলতি সপ্তাহের মিল নেই। পেঁয়াজ, রসুন ও তেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন পণ্যের দামই বাড়তির দিকে। অথচ তাদের আয়ের পরিমাণ আগের চেয়ে কমেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে তাদের সমস্যা আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।
রসুন আমদানিকারকরা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে সম্প্রতি রসুনের দাম কিছুটা বেড়েছে, যার প্রভাব বাংলাদেশেও পড়েছে। আগে প্রতিটন চীনা রসুনের দাম ছিল ৮৭০ ডলার, যা বর্তমানে ৯০০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে। তবে দেশের পাইকারি বাজারে বর্তমানে যে দামে রসুন বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রতি কেজিতে ১০ টাকা লোকসান হচ্ছে তাদের। চাহিদার তুলনায় বাজারে সরবরাহ বেশি থাকায় অনেকেই দাম কমিয়ে বিক্রি করছেন।
রসুন আমদানিকারক রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজারের মেসার্স সুরমা বাণিজ্যালয়ের স্বত্বাধিকারী ঝুটন সাহা জানান, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন মোকাম, কোল্ড স্টোরেজ এবং পাইকারি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের কাছে বিপুল পরিমাণ রসুন মজুত রয়েছে। চীনে রসুনের দাম বাড়লেও দেশে তেমন বাড়ার সম্ভাবনা নেই। সরকারের নজরদারি থাকায় কেউ অবৈধ সুযোগ নিতে পারবেন না বলে জানান তিনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে প্রতি বছর কী পরিমাণ রসুনের চাহিদা রয়েছে, কী পরিমাণ আমদানি হচ্ছে, আর কী পরিমাণ উৎপাদন হচ্ছেÑসে-সংক্রান্ত সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সরকার কিংবা ব্যবসায়ীদের কাছে নেই। এ কারণে প্রায়ই অস্বাভাবিকভাবে আমদানি হওয়ায় ব্যবসায়ীরা লোকসান গোনেন। আবার সরবরাহ সংকটে চড়া দামে কিনতে হয় ভোক্তাদের। গত বছর প্রতি কেজি রসুনের মূল্য ৪০০ টাকা পর্যন্ত ঊঠেছিল।
জানা গেছে, চীনা রসুন আকারে বড় হওয়ায় সহজে তা ছেলা যায়, আর এ কারণে গৃহবধূ, দেশের বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁ ও নানা ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠানে চীনা রসুন ব্যবহার হয়ে আসছে। তবে স্বাদে ও গন্ধে দেশি রসুন অতুলনীয়। ফলে এখনও অনেক মানুষ দেশি রসুন ব্যবহার করেন।
গতকাল করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের টাস্ক ফোর্স কমিটির বৈঠকে দেশের চলমান ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে আলোচনা করা হয়। নিত্যপণ্যের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সভায় পর্যালোচনা করা হয়। সেখানে রসুন, আদা, পেঁয়াজসহ বিভিন্ন পণ্যের মজুত, আমদানি ও সরবরাহ এবং মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সভায় আলোচনা করা হয়। দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুত রয়েছে, আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। পেঁয়াজের সংকট বা মূল্য বৃদ্ধির কোনো সংগত কারণ নেই। পেঁয়াজের অবৈধ মজুত বা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টির মাধ্যমে মূল্য বৃদ্ধির চেষ্টা করা হলে আইন মোতাবেক কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।