আ. ফ. ম. আবদুল হাই, মৌলভীবাজার: সততা, নিষ্ঠা, আন্তরিকতা ও কঠোর পরিশ্রম মানুষকে সাফল্যের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দেয়। এ বৈশিষ্ট্যগুলো যার মধ্যে আছে, তার অগ্রযাত্র্রা অবশ্যম্ভাবী। তেমনি একজন সফল মানুষ মোসাব্বির আল মাসুদ। যিনি ১৯৮৪ সালে মাত্র ৩০ হাজার টাকা পুঁজি নিয়ে পোলট্রি ব্যবসা শুরু করেন। এরপর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। বলতে গেলে তিনি এখন বৃহত্তর সিলেটের উদ্যোক্তাদের রোল মডেল।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলার হাইল-হাওরপাড়ের নোয়াগাঁও গ্রামে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘আল মাসুদ ফিশারি অ্যান্ড ডেইরি’। ৬০ একর জমির ওপর স্থাপন করা হয়েছে এ প্রকল্প। এলাকায় আমিষ ও প্রোটিনের কিয়দংশ জোগান দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মাধ্যমে তিনি নিজে স্বাবলম্বী হয়েছেন, শতাধিক দরিদ্র বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও করেছেন। প্রকল্পটি আরও বর্ধিতকরণের কাজ চলছে। শেষ হলে ধারণা করা হচ্ছে, এখানে কয়েক হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
খামারের সফলতা সম্পর্কে মাসুদ বলেন, ‘একসময় অর্থনৈতিক কষ্টে ছিলাম। ১৯৮৪ সালে এলাকার অনেক বেকার যুবক মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমান। আমারও মধ্যপ্রাচ্যে যাওয়ার সুযোগ ছিল। পরিবারেরও সম্মতি ছিল। তবে আমি দেশে থেকেই কিছু একটা করতে চেয়েছিলাম।’ তিনি মনে করেন, টাকা খরচ করে প্রবাসে না গিয়ে সঠিক পরিকল্পনা, সততা, পরিশ্রম থাকলে অল্প পুঁজিতে দেশেই অর্থনৈতিকভাবে সফলতা পাওয়া সম্ভব।
আল মাসুদ ফিশারি অ্যান্ড ডেইরিতে মাছ চাষের জন্য রয়েছে ৩৩টি পুকুর। রয়েছে ১০০টি শঙ্কর প্রজাতির গরু। দুটি দেশি ও চারটি লাল জাতের মুরগির খামারে রয়েছে ১৪ হাজার মোরগ। আরও আছে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সবজি খামার।
বৃহত্তর সিলেটে একমাত্র তার পুকুরেই দেশি পাবদা মাছের চাষ হচ্ছে। মাছের খাদ্য আমদানি করেন না মাসুদ। এর পরিবর্তে খামারে তৈরি করেন মাছের খাবার। মোরগের বিষ্ঠা, গোবর, খৈল, ভূষি, অচোগুঁড়া ও লবণ দিয়ে মাছের খাবার তৈরি করেন। প্রতি বছর গড়ে প্রায় পাঁচ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয় এখান থেকে।
পুকুরের চারপাশে রয়েছে সহস্রাধিক তেজপাতা গাছ। রয়েছে আম্রপালি আম, রুপালি আম, পেঁপে, দেশি কুল, বাউকুল ও আপেলকুল গাছ।
মুরগির খামারে প্রতিদিন প্রায় সাত হাজার ডিম পাওয়া যায়। ১০০টি শঙ্কর প্রজাতির গরু থেকে প্রতিদিন ১৪০ লিটার দুধ পাওয়া যায়। এ দুধ থেকে ছানা ও ঘি তৈরি করেন মাসুদ। আরও ৩০০টি গরুর শেড তৈরির কাজ চলছে।
মাসুদ জানান, প্রথম দিকে দিনের বেলা মুরগির পরিচর্চা ও রাতের বেশিরভাগ সময় পাহারা দিয়ে সময় পার করতাম। একটু লাভের মুখ দেখার পর একজন কর্মচারী নিয়োগ দিই। ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে খামারের পরিধি। ২০১১ সালে নোয়াগাঁও গ্রামে কিছু জমি কিনে করে গড়ে তুলি ফিশারি।
আনন্দের পাশাপাশি সফল এ উদ্যোক্তার মনে একটু ক্ষোভও রয়েছে। তিনি জানান, গরুর চিকিৎসা ও পরামর্শের জন্য কয়েকবার উপজেলা ভ্যাটেরিনারিতে আবেদন করলেও আজ পর্যন্ত কোনো প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা তার খামারে আসেননি। তবে খামারে শঙ্কর প্রজাতির গরু ও মুরগির চিকিৎসা নিশ্চিত করতে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দিয়েছেন।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের আর্থিক সহায়তা পেয়েছেন মাসুদ। আল মাসুদ ফিশারি অ্যান্ড ডেইরির সফলতা প্রসঙ্গে কৃষি ব্যাংকের মৌলভীবাজার আঞ্চলিক কার্যালয়ের এজিএম বলেন, ‘খামারটি এলাকার পুষ্টি ও আমিষের ঘাটতি পূরণে ভূমিকা রাখছে। এটি সিলেট অঞ্চলের একটি সফল প্রতিষ্ঠান। এ প্রকল্পে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক ঋণ হিসেবে আর্থিক সহায়তা করেছে। ভবিষ্যতেও ব্যাংকের এ সহায়তা অব্যাহত থাকবে।’
Add Comment