মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: ঈদুল আজহার বাকি আর মাত্র কয়েক দিন। এখনও জমে ওঠেনি যশোরের পশুহাটগুলো। তবে বাণিজ্যিক খামার পর্যায়ে কিছু পশু বেচাকেনা শুরু হয়েছে। এছাড়া পশুহাটের ঝামেলা এড়াতে গ্রামের গৃহস্থের কাছেও ছুটছেন অনেক ক্রেতা। সে কারণে পশুহাটের চেয়ে খামার ও গৃহস্থ পর্যায়েই বেশি পশু বেচাকেনা হবে বলে মনে করছেন অনেকেই।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলার ২১টি স্থায়ী হাটে কোরবানির পশু বিক্রি হবে। স্থায়ী ২১টি হাটের মধ্যে সদর উপজেলায় চারটি, ঝিকরগাছায় দুটি, শার্শায় দুটি, মণিরামপুরে তিনটি, কেশবপুরে দুটি, অভয়নগরে তিনটি, বাঘারপাড়ায় চারটি ও চৌগাছায় একটি রয়েছে। এছাড়া স্থায়ী হাটের পাশাপাশি কোরবানির দিন কাছাকাছি এলে আরও কিছু অস্থায়ী হাট বসে। সেখান থেকেও মানুষ কোরবানির পশু কেনে।
এসব হাটে আসা পশু ঠিকঠাক আছে কি না, তা যাচাই করতে ২৪টি ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম কাজ করছে বলে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে।
যশোরের ২১টি স্থায়ী হাটের মধ্যে বাঘারপাড়ার চাড়াভিটা হাটটি বড় হাটগুলোর মধ্যে একটি। কোরবানির মৌসুম বাদে বছরজুড়েই প্রতি বুধবার এ হাটে পশু বেচাকেনা হয়। তবে কোরবানির মৌসুমে বুধ ও শনিবার দুদিনে পশুহাট জমে ওঠে। গত শনিবার ছিল কোরবানি উপলক্ষে প্রথম হাট। তবে এদিন হাটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গরু উঠলেও বেচাকেনা ছিল না বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান।
এ হাটের ইজারাদার আজিজ সরদার জানান, কোরবানি উপলক্ষে এ হাটের বেচাকেনা জমতে আরও সময় লাগবে। হাটে কিছু গরু উঠলেও ক্রেতার দেখা মেলেনি। তিনি বলেন, দক্ষিণাঞ্চলের যে কয়টি পশু বিক্রির বড় হাট রয়েছে তার মধ্যে চাড়াভিটার এ হাট অন্যতম। এখান থেকে প্রতিবছর কোরবানি উপলক্ষে কোটি কোটি টাকার গরু বিক্রি হয়। মহাসড়কের পাশের হাট হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতারা এখানে ছুটে আসেন। তবে এবছর কেমন বেচাকেনা হবে, তা আপাতত বলতে পারছি না। হাটগুলোয় বেচাকেনা বাড়বে বলে মনে করছি।
হাটে কথা হয় গরু ব্যবসায়ী মতিয়ার রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, এ বছর কোরবানি পশু বিক্রির বিষয়টি হাটে সীমাবদ্ধ থাকছে না। অধিকাংশ ক্রেতারা গৃহস্থ পর্যায়ের পাশাপাশি সরাসরি বাণিজ্যিক খামারে গিয়ে কিনতে আগ্রহী। এর বড় কারণ হলো হাট থেকে গরু কিনে তা বাড়ি নিয়ে যাওয়া, খাজনা দেয়া, পশুর খাবার জোগান দেয়ার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। এজন্য হাটের চেয়ে পাড়া-মহল্লা ও গ্রামে বেশি গরু বিক্রি হচ্ছে।
যশোরের রূপদিয়া হাটে শুক্রবার কথা হয় ব্যবসায়ী হযরত আলীর সঙ্গে। তিনি বলেন, যশোরের বাইরের জেলার বড় ব্যবসায়ীরা গ্রামে গ্রামে টাকা নিয়ে খামার পর্যায় থেকে গরু কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। খামার থেকে তারা গরু কিনতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন। এর কারণ হলোÑহাটে যে ঝামেলা থাকে, সেটি খামার বা গৃহস্থ পর্যায় থেকে গরু কিনলে তা থাকে না। কারণ হাটে একসঙ্গে ১০-১৫টি গরু একসঙ্গে কিনলে ওইসব ব্যবসায়ীর হাট ইজারাদারের টাকাসহ বিভিন্ন খাতে কয়েকগুণ টাকা গুনতে হয়। এসব কারণে ব্যবসায়ী ও বিক্রেতারা তাদের সুবিধার জন্য এসব পথ অনুসরণ করছেন।
এদিকে জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী এ বছর যশোর জেলায় কোরবানির জন্য যে পশু লালন-পালন করে প্রস্তুত রাখা হয়েছে, তা মোট চাহিদার চেয়ে প্রায় পাঁচ হাজার। ফলে কোরবানির পশুর সংকটের কোনো শঙ্কা নেই বলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা দাবি করছেন।
এ বিষয়ে যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক বলেন, এ বছর যশোরে কোরবানির জন্য কোনো গরু-ছাগলের সংকট থাকবে না, বরং উদ্বৃত্ত থাকবে। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমণের ঊর্র্ধ্বগতির বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা জেলার পশুর হাটগুলোয় স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য ২৪টি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। পশুহাটের আগতদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহ প্রদানের পাশাপাশি সুস্থ-সবল পশু বিক্রির বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে।
জানা যায়, কোরবানি উপলক্ষে যশোর জেলায় গবাদিপশুর চাহিদা রয়েছে ৯১ হাজার ১৮৮টি। এর মধ্যে গরু ২৭ হাজার ৯৫৫টি, ছাগল ৬২ হাজার ৬৭৬টি ও ভেড়া ৫৫৭টি। চাহিদার বিপরীতে কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৯৫ হাজার ৭১০টি গবাদিপশু। এর মধ্যে গরু ২৯ হাজার ১৭০টি, ছাগল ৬৫ হাজার ৯৮৩টি এবং ভেড়া ৫৫৭টি। উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা চার হাজার ৫২২টি। এর মধ্যে এক হাজার ২১৫ গরু ও ছাগল তিন হাজার ৩০৭টি।