Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:48 pm

এখনও ডিজিটাল হয়নি সরকারের ৬৩% সেবা

হামিদুর রহমান: দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক ও মোবাইল ফোন গ্রাহক বিপুল হারে বাড়ছে। ফলে ডিজিটাল সেবায় আগ্রহও বাড়ছে মানুষের। তবে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে ২০০৮ সালে দেয়া সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী ‘রূপকল্প-২০২১’ বাস্তবায়নের মাত্র ৬ মাস বাকি। তবে এখনও ডিজিটালের বাইরে রয়ে গেছে সরকারের অর্ধেকের বেশি সেবা।   

আইসিটি ডিভিশনের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে সিটিজেন সেবা রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। এর মধ্যে মানুষ এখন প্রায় ১ হাজার ১১৯টি বা ৩৭ শতাংশ সেবা অনলাইনের মাধ্যমে তথা ডিজিটালি গ্রহণ করছে। অর্থাৎ এখনও ৬৩ শতাংশ সেবা অনলাইনের প্ল্যাটফর্মের আওতায় আসেনি। যদিও যে সেবাগুলো বাকি আছে, তা ২০২১ সালের মধ্যেই ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের আওতায় আসবে বলে মনে করছে আইসিটি ডিভিশন। অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ২ হাজারেরও বেশি সেবা ডিজিটাল করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অনলাইনে বর্তমানে যে সেবাগুলো পাওয়া যাচ্ছে তার মধ্যে রয়েছেÑবাস-ট্রেনসহ বিভিন্ন টিকিট, বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, গ্যাস বিল, জš§ নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র সংশোধন, জমি রেজিস্ট্রেশন, হজ নিবন্ধন, টিসি করপোরেশন বিল, ভ্যাট-ট্যাক্স, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন ফ্রি, অনলাইনে বিভিন্ন বুকিং, অনলাইনে কেনাকাটার মতো প্রায় ১ হাজার ১১৯টি সেবাগুলো পাওয়া গেলেও বহু প্রয়োজনীয় সেবাগুলো এখনও ডিজিটালের বাইরে। এখনও ডিজিটাল হয়নি তা হলোÑমৃত্যু সনদ, বিয়ের রেজিস্ট্রেশন, ডিভোর্স রেজিস্ট্রেশন, সম্পদ রেজিস্ট্রেশন (কার কী পরিমাণ সম্পদ), ঋণ আবেদন, ত্রাণ সহায়তা নিবন্ধন, ব্যবসায়িক সার্টিফিকেট, শিক্ষা সনদ সংশোধন, জমি সাবকবলার মতো প্রায় ২ হাজার সেবা এখনও ডিজিটাল হয়নি। 

প্রাপ্ত তথ্যমতে, জনগণকে সরকারি সব সেবা ডিজিটাল পদ্ধতিতে দিতে সরকার ‘একসেবা’ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে। ডিজিটাল দেশ বিনির্মাণ ঘোষণার ১২ বছর পর ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি মাইগভ.অ্যাপ থেকে সরাসরি সরকারি দপ্তরে অনলাইনে আবেদন প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে; যা ই-নথির মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা যায়। তবে একসেবা ও মাইগভ.অ্যাপের মাধ্যমে বর্তমানে মাত্র ১৭২টি সরকারি সেবা অনলাইনে আবেদন করা যায়। অথচ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও অধিদপ্তরের প্রায় দুই হাজার ৫০০ সেবার জন্য জনগণকে এখনও হাতে লিখে আবেদন করতে হয়।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে অনেক সেবা ডিজিটাল হলেও তা আংশিক। যেমন বিদ্যুৎ সংযোগের আবেদনটি অনলাইনে করা গেলেও এরপর সংযোগ পেতে আবার গ্রাহককে ঘুরতে হয় এই টেবিল থেকে ওই টেবিলে। আবার মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করা গেলেও গ্রাহককে কাছে সেই বিল পৌঁছে দিতে মানুষকেই আসতে হয়।

জানতে চাইলে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তফা জব্বার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বর্তমান বাংলাদেশ অনেক দেশের তুলনায় বহুগুণে এগিয়ে। এই অল্প সময়ে বাংলাদেশ যতটা উন্নতি করেছে পৃথিবীর কোনো দেশই স্বল্প সময়ে এতটা উন্নতি করতে পারেনি। ২০০৮ সালে নির্বাচনী ইশতেহারে রূপকল্প-২০২১ নিয়ে বাংলাদেশের যে দিনবদলের কথা বলা হয়েছে আমরা তা করছি। কেবল সরকারি সেবাই নই, দেশের বেসরকারি খাতেও ডিজিটাল সেবা প্রদান করছে। এখন দেখা যাচ্ছে দেশে সিটিজেন সেবা ৩ হাজারেরও বেশি, এটি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ভবিষ্যতে আরও বাড়বে। সেগুলোর সেবাও দেয়া হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘করোনার পরিস্থিতির কারণে অনেক ক্ষতি মেনে নিতে হচ্ছে। নাগরিকদের জন্য আমরা প্রায় দেড় হাজারের মতো সেবা ডিজিটাল করেছি। আরও যে সেবাগুলো বাকি আছে আমরা আশা করছি, এই বছরের মধ্যেই সম্পূর্ণ করতে পারব।’     

বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশ সম্পূর্ণ রূপে ডিজিটালাইজ হলে একদিকে কাজের গতি বাড়বে, অন্যদিকে জবাবদিহিতাও বাড়ছে। ডিজিটালাইজ হলে দেশে ঘটে যাওয়া বিভিন্ন দুর্ঘটনার কারণও শনাক্ত করা যাবে। কী কারণে দুর্ঘটনা ঘটল, সেখানে কারও দায়িত্বে কি কোনো অবহেলা বা গাফিলতি ছিল কি না সেগুলোও শনাক্ত করা যাবে, জবাবদিহিতাও নিশ্চিত হবে।