বড়পুকুরিয়া কয়লা দুর্নীতি

এখনও বহাল তবিয়তে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা

মো. রজব আলী, দিনাজপুর: এখনও বহাল তবিয়তে স্বপদে থেকে চাকরি করছেন দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা আত্মসাতের অভিযোগে অভিযুক্ত ২০ কর্মকর্তা। এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৮ টন কয়লা গায়েব হওয়ার ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে এরই মধ্যে অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

এদিকে অভিযুক্ত কর্মকর্তারা স্বপদে বহাল তবিয়তে চাকরি করায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে খনিটির অন্যান্য কর্মকর্তা ও স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে। তারা বলেন, কয়লা গায়েবের ঘটনায় অভিযুক্তরা বহাল তবিয়তে চাকরি করায় খনির আরও বড় রকমের ক্ষতিসাধন হতে পারে।

সম্প্রতি বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে গিয়ে দেখা যায়, খনিটির নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন ব্যবস্থাপক সৈয়দ হাছান ইমাম সাজু। তিনি দুদকের দেওয়া অভিযোগপত্রের আসামি। একইভাবে দায়িত্বে রয়েছেন দুদকের অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত উপ-মহাব্যবস্থাপক জোবায়ের হোসেন, ব্যবস্থাপক শোয়েবুর রহমান, অশোক কুমার হাওলাদার, আরিফুর রহমান, উপব্যবস্থাপক খলিলুর রহমান, মোর্শেদুজ্জামান, হাবিবুর রহমান, জাহেদুর রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বর্মণ, সহকারী ব্যবস্থাপক মনিরুজ্জামান প্রমুখ। তারা প্রত্যেকে নিজ নিজ দায়িত্বে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন।

এছাড়া জামিনে মুক্ত হওয়া মহাব্যবস্থাপক আবুল কাশেম প্রধানিয়া, ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান হাওলাদার এবং অন্যত্র বদলিরাও সেখানে চাকরি করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) কামরুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, খনিটির নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। সেখানে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিষয়ে অবহিত করা হয়েছে। পেট্রোবাংলা অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নেবে, সেই মোতাবেক কাজ করা হবে।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রুহুল আমিনের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলায় অনেক বড় কর্মকর্তার নাম রয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হলে আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ প্রয়োজন। এজন্য আইন মন্ত্রণালয়ের পরামর্শের জন্য পত্র দেয়া হয়েছে। সেখান থেকে মতামত এলেই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে অভিযোগ উঠেছে, যেসব সাংবাদিক কয়লা গায়েবের ঘটনায় একাধিক সংবাদ পরিবেশন করেছেন, তাদের কয়লাখনিতে সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের হাতে।

বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ২০ গ্রাম সমন্বয় কমিটির উপদেষ্টা মশিউর রহমান বুলবুল বলেন, দুদকের তদন্তে ও অভিযোগপত্রে যারা অভিযুক্ত, তাদের মামলা শেষ না হওয়া পর্যন্ত পদচ্যুত রাখা উচিত।

উল্লেখ্য, দেশের একমাত্র উৎপাদনশীল বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির ২০০৬ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের ১৯ জুলাই পর্যন্ত এক লাখ ৪৩ হাজার ৭২৭ দশমিক ৯২ টন কয়লা গায়েব হয়ে যায়। এর আনুমানিক বাজারমূল্য ২৪৩ কোটি ২৮ লাখ ৮৩ হাজার টাকা।

২০১৮ সালের ১৯ জুলাইয়ের পর খনিটির কয়লা ইয়ার্ডে কয়লা না থাকায় জ্বালানির অভাবে বন্ধ হয়ে যায় কয়লাভিত্তিক বড়পুকুরিয়া তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্র। এই ঘটনাটির তোলপাড় শুরু হলে কয়লা গায়েবের ঘটনায় বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানির ব্যবস্থাপক (প্রশাসন) আনিসুর রহমান বাদী হয়ে গত ২০১৮ সালের ২৪ জুলাই ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন।

মামলাটি দুদকের তফসিলভুক্ত হওয়ায় দুদক কার্যালয়ে হস্তান্তর করা হয়। পরে মামলাটি দুদকের উপপরিচালক সামসুল আলম তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে তদন্ত করে চলতি বছর ২৪ জুলাই মামলাটির অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সাবেক সাত এমডিসহ ২৩ কর্মকর্তা দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন বলে উল্লেখ করা হয়।

আদালতে অভিযোগপত্র দাখিলের পর গত ১৬ অক্টোবর খনিটির সাবেক সাত এমডিসহ অভিযুক্ত ২৩ জন কর্মকর্তা আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন। সাবেক এমডি প্রকৌশলী হাবিব, উদ্দিন আহম্মেদ, সাবেক মহাব্যবস্থাপক আবু তাহের মো. নুরুজ্জামান চৌধুরী ও সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক একেএম খাদেমুল ইসলামের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে, বাকি ২০ কর্মকর্তাকে জামিন দেন আদালত। জামিনে মুক্ত হয়ে এই ২০ কর্মকর্তার মধ্যে ১৩ জন বড়পুকুরিয়া কয়লাখনিতে স্বপদে থেকে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন। বাকি সাত কর্মকর্তা চাকরি করছেন দেশের অনান্য স্থানে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০