Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 6:28 pm

এখনও ব্যক্তি নিয়ন্ত্রণে পুঁজিবাজার

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকে পুঁজিবাজারের প্রধান শক্তি বলা হয়। কারণ বিশ্বের যে পুঁজিবাজারে যত বেশি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ রয়েছে, সেই পুঁজিবাজার তত বেশি উন্নত। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ভালো থাকলে পুঁজিবাজার ভালো থাকার সম্ভাবনা তৈরি হয়। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ কমলে এর প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে বাজারে। কিন্তু বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে এক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র পরিলক্ষিত হয়। এখানে এখনও ব্যক্তি বিনিয়োগকারীরা বাজার নিয়ন্ত্রণ করছেন। মূলত তাদের বিনিয়োগের ওপর বাজারের ভালো-মন্দ নির্ভর করে।

পুঁজিবাজারে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে মিউচুয়াল ফান্ড। ভারতের বাজার মূলধনে মিউচুয়াল ফান্ডের অবদান ২০ শতাংশেরও বেশি। আর বিশ্বব্যাপী উন্নত পুঁজিবাজারগুলোর বাজার মূলধনে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ অবদান মিউচুয়াল ফান্ডের। অথচ বর্তমানে ডিএসইর বাজার মূলধনের মাত্র সাড়ে তিন শতাংশ মিউচুয়াল ফান্ডের (মেয়াদি ও বেমেয়াদি) অবদান। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও অন্যান্য দেশের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য দেখা গেছে।

পাশের দেশ ভারতের মুম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জের বার্ষিক প্রতিবেদন দেখা গেছে, সেখানে স্টক এক্সচেঞ্জের শেয়ার কেনাবেচার যেসব অর্ডার আসে, তার ৮১ শতাংশই আসে মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর কাছ থেকে। আর মোট লেনদেনের ৮৫ শতাংশই করে মিউচুয়াল ফান্ড। অথচ বাংলাদেশে পুঁজিবাজারের লেনদেনের মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর অবদান খুবই কম।

এদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ বা মিউচুয়াল ফান্ডের অবদান কম থাকা প্রসঙ্গে সম্পদ ব্যবস্থা কোম্পানিগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশে সাধারণত পুঁজিবাজারে এসেই কেউ কোম্পানির শেয়ার কেনে না। বরং তারা মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট কেনে। ধীরে ধীরে মানুষ শেয়ার কেনার দিকে যায়। আর আমাদের দেশের বিনিয়োগকারীরা পুঁজিবাজারে এসেই শেয়ার কিনতে শুরু করেন। তাই তাদের ঝুঁকি বেশি হয়, বাজারও অদক্ষ আচরণ করে।

এ প্রসঙ্গে আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মনিরুজ্জামান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিশ্বের অন্যান্য দেশে প্রচুর পরিমাণে লাইফ ফান্ড, পেনশন ফান্ডসহ আরও অনেক ফান্ড রয়েছে। ফলে তাদের সুযোগও বেশি। কিন্তু আমাদের দেশে এখনও সেভাবে এসব ফান্ড তৈরি হচ্ছে না। যে কারণে ফান্ডগুলোর অবদানও কম।’

একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরাও কিন্তু বাজারে আসে ব্যবসা করার জন্য। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু সিদ্ধান্ত বাজারকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত করে, তেমনি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীসহ অন্যদেরও ক্ষতির মুখে ঠেলে দেয়। মূলত এ কারণে পুঁজিবাজারের প্রতি প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কম। যে কারণে আমাদের পুঁজিবাজার ব্যক্তির বিনিয়োগনির্ভর হয়ে পড়ছে।’

এদিকে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, মিউচুয়াল ফান্ডগুলো দীর্ঘদিন থেকে ভালো রিটার্ন দিতে পারে না। সে কারণে ফান্ডগুলোর প্রতি তাদের অনীহা রয়েছে। যে কারণে কোনো কোনো মিউচুয়াল ফান্ড ভালো মুনাফা করলেও ফান্ড কিনছেন না বিনিয়োগকারীরা। এতে এনএভির তুলনায় ইউনিটের দাম থাকে অনেক কমে যাচ্ছে। অথচ এনএভি ও ইউনিটের দাম কাছাকাছি থাকার কথা।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৭ সালে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৫ দশমিক দুই শতাংশ বেড়েছে। আর মিউচুয়াল ফান্ডগুলোর ইউনিটপ্রতি নেট অ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) বেড়েছে গড়ে ১৩ দশমিক এক শতাংশ। অর্থাৎ বাজারে সূচক যতটুকু বেড়েছে বেশিরভাগ ফান্ডই এ পরিমাণ মুনাফাও করতে পারেনি।

উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ইউনিটের বিপরীতে অর্থ নিয়ে সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি যে ফান্ড তৈরি করে, তাকে মিউচুয়াল ফান্ড বলে। এ অর্থের বেশিরভাগই শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হয়। এ বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি তার খরচ বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে লভ্যাংশ হিসেবে বণ্টন করে দেয়।