এগার সিন্ধুরকে মালবাহী ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘ভৈরব থেকে ট্রেন ছাড়ার ৫ মিনিট পর একটা শব্দ হলো। প্রথমে মনে হলো, একটা ট্রেন যাচ্ছে। ভাবতে না ভাবতেই একটা ঝড়ের মতো মনে হলো। আর কিছু বলতে পারব না। তারপর চিৎকার-চেঁচামেচি।’ জ্ঞান ফিরে পেয়ে সাদেক নিজেকে আবিষ্কার করলেন অনেকের ওপরে পড়ে আছেন। তখনও বগির ভেতরেই তিনি। জ্ঞান ফিরে পেয়ে কোনোরকমে জানালা দিয়ে নিচে নামলেন। তার সঙ্গে তার বন্ধু নাঈমও নেমে এলেন। দু’জন বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেন, রক্ত আর মানুষের চিৎকার।

কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিছানায় শুয়ে এভাবেই ট্রেন দুর্ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বলই ইউনিয়নের গাবতলী গ্রামের মো. সাদেক (২২)। দুর্ঘটনায় তার হাত ভেঙেছে, পায়ে আঘাত পেয়েছেন।

ঢাকার সরকারি তিতুমীর কলেজের গণিত বিভাগের তৃতীয় বর্ষে পড়েন সাদেক। ৩১ অক্টোবর তার পরীক্ষা। সে জন্য ঢাকায় যাচ্ছিলেন। কিশোরগঞ্জ এগারসিন্দুর ট্রেনটিতে তিনি ও তার বন্ধু মো. নাঈম (২২) উঠেছিলেন। তারা বসেছিলেন ট্রেনের শেষের বগির আগেরটিতে। ট্রেনটিতে যাত্রীতে ঠাসা ছিল বলে জানালেন সাদেক। তাদের বগিতেই আসনবিহীন যাত্রী ছিলেন শতাধিক। তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না বগিতে।

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে যাত্রীবাহী ট্রেনে পণ্যবাহী ট্রেনের ধাক্কায় অন্তত ২৩ জন নিহত ও অর্ধশতাধিক আহত হয়েছেন। গতকাল রাত ৯টা পর্যন্ত এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ তথ্য জানা যায়। গতকাল সোমবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

এদিকে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, এ পর্যন্ত আহত ৭০ জনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। ২১ জনকে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয়েছে। আহত ব্যক্তিদের চিকিৎসার্থে পাশের কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে আরও চিকিৎসক, নার্স ও প্রয়োজনীয় ওষুধ আনা হয়েছে।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক আবুল কালাম আজাদ ও পুলিশ সুপার মো. রাসেল শেখ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মালবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল আর যাত্রীবাহী এগারসিন্দুর ট্রেনটি যাচ্ছিল ভৈরব থেকে ঢাকার দিকে। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টের ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় মালবাহী ট্রেনটি। এ সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের দুটি বগি উল্টে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয় লোকজন।

ট্রেন দুর্ঘটনায় ২৩ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করে ভৈরব রেলওয়ে থানার ওসি আলিম হোসেন শিকদার বলেন, আহত অনেকে ট্রেনের নিচে চাপা

পড়ে থাকতে পারেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।

স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পণ্যবাহী ট্রেনটি ঢাকা থেকে চট্টগ্রামের দিকে যাচ্ছিল আর যাত্রীবাহী এগারসিন্ধুর ট্রেন যাচ্ছিল ভৈরব থেকে ঢাকার দিকে। ভৈরব রেলস্টেশনের আউটার পয়েন্টে ক্রসিংয়ে যাত্রীবাহী ট্রেনের শেষ দুই বগিতে ধাক্কা দেয় পণ্যবাহী ট্রেনটি। এ সময় যাত্রীবাহী ট্রেনের দুটি বগি উল্টে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে হতাহত ব্যক্তিদের উদ্ধারকাজে এগিয়ে আসেন স্থানীয় লোকজন।

এদিকে ভৈরবে দুই ট্রেনের সংঘর্ষের কারণ হিসেবে পণ্যবাহী ট্রেনের সিগন্যাল না মানার কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

দুর্ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ

রেলওয়ের ভারপ্রাপ্ত মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, মালবাহী ট্রেনটি সিগন্যাল না মানায় এ সংঘর্ষ হয়েছে।’ তবে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাতে পারেননি তিনি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০