২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার জন্য একটি বিধিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৫ সালের ৬ জানুয়ারি সার্কুলার জারি করে গ্রামের পাশাপাশি শহরাঞ্চলেও দেওয়া হয় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের অনুমোদন। প্রাপ্ত তথ্যমতে, দেশের এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনার অনুমোদন পেয়েছিল মোট ১৩টি ব্যাংক। এদের মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিং শুরু করতে পেরেছে ১০টি। বর্তমানে সেই কার্যক্রম পরিচালনাকারী ১০টি ব্যাংকের সারা দেশে এজেন্ট রয়েছে ১ হাজার ৪০০ জন; তাদের পাশাপাশি রয়েছেন আনুমানিক ২ হাজার ৫০০ সাব-এজেন্ট। কথা হলো, দেশে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের চাহিদা রয়েছে বেশ। এ কারণে ব্যাংকগুলোই একরকম বাধ্য হচ্ছে আলোচ্য কার্যক্রমের পরিসর বাড়াতে। এরই মধ্যে গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত খবরের শিরোনাম ‘এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে নিরাপত্তা ও লেনদেনের সীমা বাড়ছে’। প্রতিবেদক জানিয়েছেন, যেহেতু এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের পরিসর দিন দিন বাড়ছে, সেহেতু কেন্দ্রীয় ব্যাংক উদ্যোগ নিয়েছে এ-সংক্রান্ত একটি নীতিমালা প্রণয়নের। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তা বাড়াতে এজেন্ট ও সাব-এজেন্ট নিয়োগে আগ্রহীদের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতার ওপর জোর দেওয়া হবে। বর্তমানে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে একজন গ্রাহক সর্বোচ্চ দুবার লেনদেন করতে পারেন; সর্বোচ্চ উত্তোলন করতে পারেন ৫০ হাজার টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্র থেকে আভাস পাওয়া গেছে, প্রতিবার লেনদেনের এই সর্বোচ্চ সীমাটি বাড়ানো হতে পারে ১ লাখ বা তারও বেশি পর্যন্ত। এখন এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চলছে ব্যাংকের মতোই, সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত। নিরাপত্তা নিশ্চিতপূর্বক ব্যাংকগুলো যদি সেই সীমা বাড়াতে চায়, তাতে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি থাকবে না বলেই মনে হয়। এছাড়া বর্তমানে গ্রাম ও শহরে এজেন্ট নিয়োগের অনুপাত ২:১। অর্থাৎ গ্রামে দুজন এজেন্টের বিপরীতে শহরে একজন এজেন্ট নিয়োগের অনুমোদন পায় ব্যাংকগুলো। এক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসতে পারে নীতিমালায়।
প্রথমেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রশংসা করা দরকার এজন্য যে, পদক্ষেপটি সময়োচিত। দেশে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন জরুরি ছিল। প্রশংসার পাশাপাশি গুরুত্বারোপ করা দরকার, সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনাপূর্বক নীতিমালাটি যেন দ্রুত প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের ব্যবস্থা করা হয়। উল্লেখ্য, কেন্দ্রীয় ব্যাংক আলোচনা করেছে, একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত যেন বাধ্যতামূলক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করা যায়। উদ্যোগটি ইতিবাচক সন্দেহ নেই। এর আগেও আমরা দেখেছি, এ ধরনের পদক্ষেপ নিয়েও সেটি কার্যকর করতে পারেনি। এখানে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে আপত্তি উত্থাপন অস্বাভাবিক কিছু নয়। সেক্ষেত্রে আমরা আশা করবো, নিজে থেকে উদ্বুদ্ধ না হলে তাকে সঠিক পথপ্রদর্শন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তদুপরি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বেলায় নিরাপত্তাজনিত যেসব ইস্যু সৃষ্টি হয়েছিল, এজেন্ট ব্যাংকিংয়েও যেন তেমন কিছু ঘটতে না পারে, সেদিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে পারে। এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের সম্ভাবনা কিন্তু কম নেই দেশে। সঠিক নির্দেশনায় এর মধ্য দিয়ে রেমিট্যান্স প্রবাহের সুযোগ দেওয়া হলে হুন্ডির মাধ্যমে বিধিবহির্ভূত আর্থিক লেনদেনের প্রবণতাও কমতে পারে। এক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের তুলনায় এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের বাড়তি সুবিধা হলো, তাতে করে সন্ত্রাসবাদ বা জঙ্গিবাদ তথা সন্দেহজনক আর্থিক লেনদেনের (বিশেষত বৈদেশিক) ওপর নজরদারি করা সহজ হবে। সবার প্রত্যাশা, এসব বিষয়ে গভীরভাবে ভেবেই আলোচ্য নীতিমালা প্রণয়ন করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।
Add Comment