পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি এবিএল নামেও পরিচিত। প্রকৌশল খাতের প্রতিষ্ঠান এটি। এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৬৬ সালে হোন্ডা মোটর কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে ব্যবসা শুরু করে। স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালে এবিএলকে জাতীয়করণ করা হয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ স্টিল অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশনে (বিএসইসি) স্থাপন করা হয়।
২০১১ সালে জাপানের হোন্ডা ও ভারতের হিরো হোন্ডার সঙ্গে পার্টনারশিপ বিচ্ছিন্ন করে এবিএল। প্রসঙ্গত, প্রতিষ্ঠান দুটি তাদের নিজস্ব মালিকানায় পৃথকভাবে ব্যবসা পরিচালনা করছে। বর্তমানে চীনের জংশেন মোটরসাইকেল কোম্পানির সঙ্গে ব্যবসা করছে এবিএল।
এ বছরের ২৪ মে এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডের সঙ্গে টিভিএস অটো বাংলাদেশ লিমিটেডের করপোরেট পার্টনার সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়। শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর উপস্থিতিতে এটলাসের পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আ ন ম কামরুল ইসলাম ও টিভিএসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিপ্লব কুমার রায় সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন। দুই বছরমেয়াদি এ সমঝোতা চুক্তি অনুযায়ী এটলাস ও টিভিএস করপোরেট পার্টনার হিসেবে কাজ করবে। টিভিএস থেকে এটলাস বাংলাদেশ প্রায় ২০ হাজার মোটরসাইকেল সিকেডি বা সম্পূর্ণ বিযুক্ত অবস্থায় কিনে তা নিজস্ব কারখানায় সংযোজন করে বিক্রি করবে। ফলে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক অগ্রগতি সাধিত হবে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ভ্যাট ও ট্যাক্স বাবদ প্রায় ১৫ কোটি টাকা জমা হবে। এছাড়া বাজার চাহিদা বিবেচনায় শিগগিরই এটলাস বাংলাদেশ ও টিভিএস অটো বাংলাদেশ যৌথভাবে দেশে মোটরসাইকেলের গুরুত্বপূর্ণ খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনের বিনিয়োগের সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করবে। প্রসঙ্গত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এটলাসের জন্য সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর মধ্যে সরকারি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) ও উম্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে (ওটিএম) মোটরসাইকেল সরবরাহের সুযোগ রয়েছে।
২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে জংশেন ব্র্যান্ডের পাশাপাশি টিভিএস ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের ৬৫৬টি মোটরসাইকেল বিক্রিসহ ১৮১০টি মোটরসাইকেল বিক্রি হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে লক্ষ্যমাত্রার ৬১ দশমিক ১০ শতাংশ পূরণ করেছে। দেশের মোটরসাইকেল বাজারে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলো নিজ নিজ ব্র্যান্ডের বিভিন্ন মডেলের দাম প্রতিযোগিতামূলকভাবে হ্রাস করছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে চুক্তিবদ্ধ দামেই সংযোজিত মোটরসাইকেল বিক্রি করছে এবিএল। তবু সুস্থ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও অগ্রগতির পথে এগিয়ে চলেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে আধুনিক, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশ তৈরির শিল্পকারখানা নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।
এটলাস বাংলাদেশের তথ্য অনুযায়ী, মোটরসাইকেল সংযোজনের পাশাপাশি বৈদ্যুতিক পাখা তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির পণ্য বৈচিত্র্যকরণের উদ্যোগ এটি। প্রাথমিকভাবে এটলাসের নিজস্ব কারখানায় কিছু যন্ত্রাংশ সংযোজন করে পুরোনো মিল্লাত ফ্যানের আদলে এ বৈদ্যুতিক পাখা তৈরি করা হবে। এটলাস ব্র্যান্ড নামে এ ফ্যান বাজারজাতকরণের পরিকল্পনা রয়েছে প্রতিষ্ঠানটির। উন্নতমানের নিরাপদ ও বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী ফ্যান উৎপাদন করবে। প্রাথমিকভাবে বছরে প্রায় এক লাখ ফ্যান তৈরি করতে প্রতিষ্ঠানটিকে প্রায় ১৭ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। এতে বছর শেষে মুনাফায় অতিরিক্ত প্রায় ৫ কোটি টাকা যোগ করতে পারবে এটলাস। প্রকল্পের জন্য একটি ডিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট) তৈরি করে ইতোমধ্যে শিল্প মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্জাগরণের অংশ হিসেবে এ সৃজনশীল উদ্যোটিকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে শিল্প মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নীতি সহায়তা দেবে শিল্প মন্ত্রণালয়। তাই শিল্প মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সরকারি ও কোম্পানির নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন (বিএসইসি)।
এ বছরের মাঝামাঝিতে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে থ্রি-এস (সেলস, সার্ভিসিং ও স্পেয়ার্স) সেন্টার উদ্বোধন করে এটলাস বাংলাদেশ। এর মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদনে গতি আসবে বলে ধারণা করছে সংশ্লিষ্টরা। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে উৎপাদিত পণ্য ও সেবার মান বেসরকারি খাতের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর সরকারি উদ্যোগ এ থ্রি-এস সেন্টার। সেন্টারটি এটলাস বাংলাদেশের জন্য আয়ের একটি নতুন উৎস হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
এটলাস বাংলাদেশ লিমিটেডে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন মিজানুর রহমান। ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন আ ন ম কামরুল ইসলাম।
পরিবেশ ও কর্মীবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে বেশ সুনাম রয়েছে এটলাস বাংলাদেশের। কর্মীদের জন্য বছরে বিভিন্ন ভাতার ব্যবস্থা রয়েছে এখানে। প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্রাচুইটি, গোষ্ঠীবিমা প্রভৃতি চালু রয়েছে এখানে। কর্মীরা কর্মপরিবেশ নিয়ে বেশ সন্তুষ্ট।
মুনাফা অর্জনের পাশাপাশি করপোরেট সামাজিক দায়িত্ব পালন করে চলেছে এটলাস বাংলাদেশ। এ বছরেও পরিবেশ রক্ষা ও সমাজের প্রয়োজনে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের সন্তানদের মেধাবৃত্তি দিয়েছে। কর্মক্ষেত্রকে পরিবেশবান্ধব রাখার পাশাপাশি কর্মরতদের সুস্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকি ভাতা, পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করেছে কর্তৃপক্ষ। কর্মীদের পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার বিষয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে।
রতন কুমার দাস