প্রতি বছরের মতো এবারও পয়লা বৈশাখের আগ দিয়ে বেড়েছে ইলিশের দাম। ইলিশ কিনতে বাজারে গিয়ে খালি হাতে ফিরছেন অনেকে। পয়লা বৈশাখের দুই সপ্তাহ বাকি থাকতেই এর দাম বেড়েছে হালিপ্রতি হাজার টাকারও বেশি। মার্চ-এপ্রিল দুই মাস জাটকার ভরা মৌসুম বিধায় ২০০৬ সাল থেকে এ সময়ে ইলিশ সংরক্ষণে পালিত হয়ে আসছে ‘অভয়াশ্রম কর্মসূচি’। এ সময় দেশের পাঁচটি অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সব ধরনের জাল ফেলা নিষিদ্ধ। ফলে এ সময়টায় বাজারে আসছে প্রধানত হিমাগারে মজুত ইলিশ। এক কেজির বেশি একটি ইলিশ কিনতে ক্রেতাকে খরচ করতে হচ্ছে দেড় হাজার টাকার বেশি। আইনানুসারে, নভেম্বর থেকে জুন পর্যন্ত ১০ ইঞ্চির চেয়ে ছোট ইলিশ (জাটকা) ধরা ও কেনাবেচা নিষিদ্ধ। অবৈধভাবে এ সময় ইলিশ ধরার কারণে ইলিশের মৌসুমে মানসম্মত ইলিশের ঘাটতি তৈরি হয়। ২০০৯ সালের আগে বছরে ৩ লাখ টন ইলিশ উৎপাদিত হতো। এখন তা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ টন। জাটকা নিধন সম্পূর্ণ রোধ করা গেলে বছরে ইলিশের উৎপাদন বাড়তো আরও ১ লাখ টন।
পয়লা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ পালনের সঙ্গে পান্তা-ইলিশ খাওয়ার আসলে কোনো সম্পর্ক নেই। চৈত্র-বৈশাখ ইলিশ খাওয়ার মৌসুমও নয়। বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্য নিয়ে যারা গবেষণা করেন তারা বলছেন, অতীতে খরার এ মৌসুমে ফসল না হওয়ায় কৃষকের হাতে তেমন অর্থ থাকতো না। ফলে ইলিশ কেনার সামর্থ্যও হতো না। গ্রীষ্মের প্রচণ্ড গরমে শরীর শীতল করতে পান্তা ভাত তারা খেতো ভর্তা কিংবা কাঁচামরিচের সঙ্গে। সেটি শুধু পয়লা বৈশাখের দিন নয়; গোটা গ্রীষ্মে। নগর-বাংলায় নববর্ষে ইলিশ খাওয়ার সংস্কৃতি চালু হয় আশির দশকে আর সেটির পেছনে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য ছিল বলেই মনে করেন অনেকে। নববর্ষের সঙ্গে ইলিশের যে কোনো ঐতিহ্যগত সম্পর্ক নেই সেটি সাধারণ মানুষকে জানানোর ব্যাপারে গত বছর থেকে কবি, সাহিত্যিক, মিডিয়া ব্যক্তিত্বসহ বিশিষ্টজনরা উদ্যোগী হয়েছেন। এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবিদার। একাধিক সরকারি সংস্থাও তাদের নববর্ষ উদ্যাপন অনুষ্ঠানের খাদ্যতালিকা থেকে ইলিশ বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বছরের এ সময়ে হিমাগারের ইলিশকে অনেক বিক্রেতা পদ্মার তাজা ইলিশ বলে বিক্রি করতে চাইছেন। পুষ্টিবিদদের মতে, এ ইলিশের স্বাদ যেমন নেই, তেমনি এতে অনুপস্থিত প্রয়োজনীয় আমিষ। পয়লা বৈশাখকে কেন্দ্র করে এ মৌসুমে ক্রেতারা ইলিশের বাজারে যে অস্বাভাবিক চাহিদা তৈরি করে থাকেন, সেটাই প্রধানত এর দাম বাড়িয়ে দেয় অস্বাভাবিকভাবে। যে কোনো পণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে ক্রেতারাও রাখতে পারেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। ইলিশ ধরার অনুপযোগী এ মৌসুমে তাই অত্যধিক চাহিদা সৃষ্টি না করে আমাদের অপেক্ষা করা উচিত পরিপক্ব ইলিশের জন্য। এতে উপকৃত হবে অর্থনীতি; আমরাও পাবো প্রকৃত ইলিশের স্বাদ।