Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 1:24 pm

এটা সুইসাইড নয়, এটা মার্ডার! টেকনিকালি মার্ডার!- মৃত্যুর আগে ফেসবুক পোস্টে অবন্তিকা

প্রতিনিধি, জবি: শিক্ষক ও সহপাঠীকে দায়ী করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) ফাইরুজ অবন্তিকা নামে এক শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। মৃত্যুর আগে দেয়া দীর্ঘ একটি পোস্টে তিনি এ ঘটনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও তার সহপাঠি আম্মান সিদ্দিকীকে দায়ী করেছেন।

গত শুক্রবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লা জেলা সদরের নিজ বাসায় গলায় ফাঁস নিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন ফাইরুজ অবন্তিকা। তাকে উদ্ধার করে জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

নিহত ফাইরুজ অবন্তিকা কুমিল্লা নগরের বাগিচাগাঁও এলাকার বাসিন্দা। তিনি কুমিল্লা সরকারি কলেজের সাবেক শিক্ষক প্রয়াত অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের মেয়ে।

অবন্তিকা ফেসবুক পোস্টে বলেছেন, ‘আমি যদি কখনও সুইসাইড করে মারা যাই, তবে আমার মৃত্যুর জন্য একমাত্র দায়ী থাকবে আমার ক্লাসমেট আম্মান সিদ্দিকী, আর তার সহকারী হিসেবে তার সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকার কারণে তাকে সাপোর্টকারী জগন্নাথের সহকারি প্রক্টর দ্বীন ইসলাম। আম্মান যে আমাকে অফলাইন ও অনলাইনে থ্রেটের (হুমকি) ওপর রাখতো সে বিষয়ে প্রক্টর অফিসে অভিযোগ করেও আমার লাভ হয় নাই। দ্বীন ইসলাম আমাকে নানানভাবে ভয় দেখায়, আমাকে বহিষ্কার করা ওনার জন্য হাতের ময়লার মতো ব্যাপার।’

তিনি আরও লেখেন, ‘আম্মান আমাকে সেক্সুয়ালি এবিউজিভ কমেন্ট করায় আমি তার প্রতিবাদ করলে আমাকে দেখে নেয়ার জন্য দ্বীন ইসলামের শরণাপন্ন করায়। আর দ্বীন ইসলাম আমাকে তখন প্রক্টর অফিসে একা ডেকে নারীজাতীয় গালিগালাজ করে।’

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক দ্বীন ইসলাম বলেন, গত দেড় বছর আগে অবন্তিকা ফেসবুকের ফেক আইডি খুলে কয়েকজনকে বাজে কমেন্ট করার অভিযোগে তারা কোতোয়ালি থানায় জিডি করে। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অবন্তিকা প্রক্টর অফিসে এলে তাদের মাঝে মিউচুয়াল করে দেন তৎকালীন প্রক্টর অধ্যাপক ড মোস্তফা কামাল। পরবর্তীকালে আমি একই জেলার হওয়ায় আমার কাছে অবন্তিকা ও তার মা জিডি তোলার বিষয়ে এলে আমি তাতে অপারগতা প্রকাশ করি। জিডি ওঠাতে পারেন একমাত্র প্রক্টর। আমি তাদের প্রক্টরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলি। পরবর্তী সময়ে তারা এ বিষয়ে আর কখনও আসেনি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, আমরা বিষয়টি জেনেছি। যেহেতু অভিযুক্তের একজন আমাদের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য। উপাচার্য সাময়িকভাবে তাকে অব্যাহতির মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছেন। আইনগত প্রক্রিয়ায় তদন্তসাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মানের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। যদিও এর মাঝে আম্মান সিদ্দিকী তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করে ফেসবুকে পাল্টা পোস্ট দিয়েছেন।

আত্মহত্যার ঘটনায় শুক্রবার রাতেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা  শিক্ষার্থীরা অতিদ্রুত অভিযুক্তদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

এদিকে এর আগে উপাচার্যের নির্দেশে অভিযুক্ত সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলাম ও অভিযুক্ত শিক্ষার্থী আম্মানকে সাময়িক বহিষ্কার করেছে প্রশাসন। একই সঙ্গে এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য চার সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কমিটির আহ্বায়ক আইন অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মাসুম বিল্লাহ, সদস্য সচিব আইন কর্মকর্তা রঞ্জন কুমার দাস। কমিটির বাকি সদস্যরা হলেন, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবুল হোসেন, সঙ্গীতের চেয়ারম্যান ঝুমুর আহমেদ।

অবন্তিকার আত্মহত্যার পর সাংবাদিকদের কাছে তার মা তাহমিনা শবনম বলেন, ‘রাফি, আম্মান, মাহিয়া, লাকি, রিমি তারপরে আঁখি, বন্যা, দ্বীন ইসলাম এ ঘটনার জন্য মূল দায়ী। ওদের জন্য আমি মেয়ে হারিয়েছি, আমি তাদের বিচার চাই।’

গতকাল শনিবার বিকালে কুমিল্লার শাসনগাছায় পারিবারিক কবরস্থানে বাবা অধ্যাপক জামাল উদ্দিনের কবরের পাশে অবন্তিকাকে দাফন করা হয়। এছাড়া পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী শনিবার বিকাল সাড়ে ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশ শেষে তারা ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেন ও পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

ছয় দফা দাবিগুলো হলোÍ

১. ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।

২. অভিযুক্ত আম্মান সিদ্দিকী ও সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামকে অবিলম্বে গ্রেপ্তার করতে হবে।

৩. জরুরি সিন্ডিকেট আহ্বান করে অভিযুক্তদের স্থায়ী বহিষ্কার করতে হবে।

৪. ভিকটিমের (অবন্তিকার) পরিবারকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

৫. বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করতে হবে।

৬. বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন নিপীড়ন সেল কার্যকর করতে হবে।

দাবি বাস্তবায়নের জন্য তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন।

আন্দোলনকারীদের দাবিগুলো পূরণ না হলে আগামীকাল সোমবার বেলা ১১টায় উপাচার্যের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করেন তারা। এ সময় শিক্ষার্থীরা ফাইরুজ অবন্তিকার মৃত্যুকে পরিকল্পিত হত্যাকাø বলেও উল্লেখ করেন।