Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 12:39 pm

এডিপিতে ধীরগতির মূলে বড় বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি অর্থবছরে মোট বার্ষিক উন্নয় কর্মসূচির (এডিপি) আকার এক লাখ ৬৪ হাজার ৮৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া ৮৬টি প্রকল্পের বিপরীতে বরাদ্দ রয়েছে ৯৪ হাজার ২০৮ কোটি টাকা, যা মোট এডিপির ৫৭ শতাংশ। কিন্তু এগুলোর অর্থ ব্যয় তুলনামূলক পিছিয়ে। এর মধ্যে কিছু প্রকল্প গত অক্টোবর পর্যন্ত বরাদ্দের পাঁচ শতাংশও ব্যয় করতে পারেনি। যার প্রভাব পড়ছে সার্বিক এডিপি বাস্তবায়নে।

রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল ৩৫০ কোটি টাকার ওপরে বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পগুলোর বিষয়ে অনুষ্ঠিত পর্যালোচনা সভায় এ কথা জানায় বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি)। সভায় প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সচিব এবং প্রকল্প পরিচালকরা (পিডি) উপস্থিত ছিলেন। এতে সভাপতিত্ব করেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ সময় আইএমইডি সচিব মফিজুল ইসলাম, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (জ্যেষ্ঠ সচিব) ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব জিয়াউল ইসলামসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সাড়ে ৩০০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া বড় প্রকল্প বাস্তবায়নে পিছিয়ে রয়েছে আট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ। এগুলো হলো কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, অর্থ বিভাগ, তথ্য মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়, সেতু বিভাগ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চার মাস পেরিয়ে গেলেও এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় হাতে নেওয়া বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের হার এখনও পাঁচ শতাংশের নিচে। এ তথ্য তুলে ধরে প্রতিবেদন উপস্থাপন করে আইএমইডি।

গত অক্টেবর পর্যন্ত অর্থবছরের চার মাসে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পগুলোর সার্বিক বাস্তবায়ন অগ্রগতি ১৮ শতাংশ। ২৪টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের আওতায় এসব প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এডিপিতে প্রকল্প রয়েছে মোট এক হাজার ৩০৯টি।

চলতি অর্থবছরের চার মাসে ৩৫০ কোটি টাকার বেশি বরাদ্দ পাওয়া প্রকল্পের মন্ত্রণালয়ভিত্তিক অগ্রগতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, বিদ্যুৎ বিভাগের ২২ প্রকল্পের অগ্রগতি ৪৩ দশমিক ৯১ শতাংশ, স্থানীয় সরকার বিভাগের ৯ প্রকল্পে ৩০ দশমিক ৬২ শতাংশ, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের আট প্রকল্পের ২৮ দশমিক চার শতাংশ। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের পাঁচ প্রকল্পে ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের পাঁচ প্রকল্পে ৩৬ শতাংশ।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পাঁচ প্রকল্পে চার দশমিক ৫৫ শতাংশ। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের চার প্রকল্পে সাত দশমিক ৬২ শতাংশ। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের চার প্রকল্পে ১২ দশমিক ২৩ শতাংশ। সেতু বিভাগের তিন  প্রকল্পে দুই দশমিক ২৬ শতাংশ। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তিন প্রকল্পে ৩৭ দশমিক ৩৮ শতাংশ। তথ্য ও প্রযুক্তি বিভাগের দুই প্রকল্পে ১০ দশমিক আট শতাংশ। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দুই প্রকল্পে ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ। জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগের দুই প্রকল্পে এক দশমিক ৪৫ শতাংশ।

স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের দুই প্রকল্পে ১২ শতাংশ। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে কোনো অগ্রগতি নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রকল্পে ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ। পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের এক প্রকল্পে ৩৪ দশমিক ৪১ শতাংশ। নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের এক প্রকল্পে ছয় দশমিক ১৯ শতাংশ। সুরক্ষা বিভাগের এক প্রকল্পে ৯ দশমিক ১৩ শতাংশ। আইন ও বিচার বিভাগের এক প্রকল্পে ১৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগের এক প্রকল্পে দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। অর্থ বিভাগের এক প্রকল্পে চার দশমিক ৭১ শতাংশ এবং তথ্য মন্ত্রণালয়ের এক প্রকল্পের অগ্রগতি শূন্য।

বৈঠক শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের জানান, চলতি অর্থবছরে এক লাখ ৬০ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা সম্ভব হবে। পদ্মা সেতুসহ আলোচিত ৮৬ প্রকল্পের মধ্যে অধিকাংশই ভালো অবস্থানে আছে। সচিব ও পিডিরা আশ্বস্ত করেছেন, প্রকল্পের বাস্তবায়ন সঠিক পথেই রয়েছে। অধিকাংশ পিডিই বাড়তি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন। যদি বৃষ্টি বা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না আসে, তাহলে অবধারিত এডিপি বাস্তবায়নের লক্ষ্য পূরণ হবে।

মন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সম্পদের সমস্যা নেই, সমস্যা হচ্ছে  প্রাকৃতিক দুর্যোগ। পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মাঝে কিছুটা সমস্যা ছিল। এখন অনেক বড় হ্যামার আনা হয়েছে; সমস্যারও সমাধান হয়ে যাচ্ছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, একটি প্রকল্পের জমি নিয়ে সমস্যা ছিল, সেটি এখন কেটে গেছে। কর্ণফুলী টানেল প্রকল্প আগে সমস্যা হলেও এখন সেসব কেটে গেছে।

মন্ত্রী বলেন, চলতি অর্থবছরের চার মাসে ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। সাত বছর আগে পুরো অর্থবছরই ২৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হতো। এখন প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনামতো একজন প্রকল্প পরিচালক একাধিক প্রকল্পের দায়িত্বে নেই। আইএমইডিও এখন প্রায় সব প্রকল্পই পরিদর্শন করছে। তাই প্রকল্পের গুণগত মানও বাড়ছে।