এডিপি বাস্তবায়নে অপচয় বন্ধ হোক

দেশের উন্নয়ন দৃশ্যমান হয় মূলত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) মাধ্যমে। যতটা দক্ষতার সঙ্গে এডিপি বাস্তবায়ন করা যাবে, উন্নয়নও ততটাই দৃশ্যমান হবে। কিন্তু বিগত এক দশকে দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অনেকটা আলোচিত বিষয় ছিল সম্পদের অপচয়। বিশেষ করে যে কাজে ১০০ টাকা খরচ করলে সম্পন্ন করা সম্ভব, সেখানে তার দ্বিগুণ ও তিনগুণ অর্থ বরাদ্দের নজির লক্ষ্য করা গেছে। গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময় একাধিক খবরের শিরোনাম হয়েছে যে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক নির্মাণ করছে বাংলাদেশ। কেবল সড়কের ক্ষেত্রেই নয়, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সেতু ভবনসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণেও অন্যান্য দেশের তুলনায় বাড়তি অর্থ ব্যয়ের নজির রয়েছে বাংলাদেশে। এরই মধ্যে গত বৃহস্পতিবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদে (এনইসি) অনুমোদন হয়ে গেল আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি। এটি যাতে অপচয়বিহীনভাবে এবং প্রকল্পগুলো সঠিক সময়ে বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখা আবশ্যক।

দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘এনইসিতে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, এডিপির মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৩২১টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১৩৩টি, কারিগরি সহায়তার ৮৭টি এবং সমীক্ষা প্রকল্প রয়েছে ২১টি। মোট প্রকল্পের মধ্যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তর হবে ১ হাজার ২৭৭টি প্রকল্প। বাকিগুলোর মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৬০টি। এছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে এক হাজার ৮৯৪টি, বৈদেশিক অর্থায়নের সুবিধার অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ২৫৭টি এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্প থাকবে ৮০টি।

এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে চাহিদামাফিক অর্থ বরাদ্দ দেয়া আবশ্যক। বিশেষ করে কোনো নির্দিষ্ট অর্থবছরে যেসব প্রকল্পের কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে, সেগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া আবশ্যক। সাধারণত পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ এডিবি চূড়ান্ত করার আগে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। সেখানে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট শর্তগুলো উল্লেখ করা হয়। সেই শর্ত মেনেই বাস্তবায়নকারী সংস্থাগুলো প্রকল্প প্রণয়ন করে থাকে। কিন্তু প্রায়ই দেখা যায়, প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গাফিলতি ও গুরুত্বের অভাবে সঠিক সময়ে ও সঠিকভাবে অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন হয় না। এক্ষেত্রে যেসব প্রকল্পের বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে পারফরম্যান্স খারাপ হবে, সেগুলোর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা জরুরি। একই সঙ্গে যারা প্রকল্প বাস্তবায়নে ভালো পারফরম্যান্স করবে তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করতে হবে। এটি করা হলে সরকারি প্রকল্প বাস্তবায়নে আরও বেশি দক্ষতা নিশ্চিত হবে। জনগণের করের অর্থের সঠিক ব্যবহার নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে সচেতন হবে বলেই আমাদের বিশ্বাস।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০