ইসমাইল আলী: চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার হয়ে মিয়ানমারের সীমান্ত গুনদুম পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে প্রকল্প নেয়া হয় ২০১০ সালে। বর্তমানে প্রকল্পটির দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার অংশের নির্মাণকাজ চলছে। আর মিয়ানমারের অনুমোদন না পাওয়ায় রামু-গুনদুম অংশ বাতিল করতে হচ্ছে। এতে প্রকল্পটির জন্য বরাদ্দকৃত ঋণ কাটছাঁট করতে যাচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি), যা স্থানান্তর করা হবে অন্য প্রকল্পে।
সূত্রমতে, প্রকল্পটির আওতায় দুই প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয় ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে। ওই দুই প্যাকেজে দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১০২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণকাজ চলছে। তবে তৃতীয় প্যাকেজের আওতায় রামু থেকে গুনদুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে দরপত্রই আহ্বান করা হয়নি। এতে অসমাপ্তই শেষ করতে হবে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি।
এদিকে প্রকল্পটির জন্য ১৫০ কোটি ডলার ঋণ দেয়ার কথা ছিল এডিবির। এজন্য ঋণচুক্তিও সই হয়। এর মধ্যে দোহাজারী-কক্সবাজার অংশের জন্য ঋণের পরিমাণ ১১০ কোটি ডলার। এরই মধ্যে দুই কিস্তিতে ১০০ কোটি ডলার ছাড় করেছে এডিবি। আরও ১০ কোটি ডলার আগামী বছর ছাড় করবে সংস্থাটি। বাকি ৪০ কোটি ডলার (প্রায় তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা) অব্যবহƒত থেকে যাচ্ছে। এ ঋণকে অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর করবে এডিবি। এজন্য রেলওয়েকে চিঠি দিয়েছিল সংস্থাটি।
৪০ কোটি ডলার ঋণ ব্যবহারে দুটি বিকল্প সুপারিশ করে এডিবি। এর মধ্যে চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনকে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন রূপান্তর প্রকল্পটি নির্বাচন করে রেলওয়ে। এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যমান ৫২ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথকে ডাবল লাইন করা হবে। এজন্য ১০৭ কিলোমিটার নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। পাশাপাশি ২৪টি মেজর ও ৯৫টি মাইনর সেতু নির্মাণ করতে হবে।
প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৩ কোটি ১৮ লাখ ডলার। এর মধ্যে এডিবির সম্ভাব্য ঋণের পরিমাণ ৭৬ কোটি ৭৬ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম প্রকল্পের ৪০ কোটি ডলার স্থানান্তর করা হবে। পাশাপাশি অবশিষ্ট ঋণও দেবে এডিবি।
জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক ডিএন মজুমদার শেয়ার বিজকে বলেন, গুনদুম একেবারে মিয়ানমারের সীমান্তবর্তী এলাকা। ওই এলাকায় কাজ করতে দেশটির অনুমোদন দরকার। তাই রামু থেকে গুনদুম অংশের দরপত্র আহ্বানের আগে মিয়ানমারের অনুমোদন চাওয়া হয়েছিল। তবে তারা এ বিষয়ে অনুমোদন দেয়নি। এজন্য ৪০ কোটি ডলার অন্য প্রকল্পে স্থানান্তর করা হবে। এডিবির সঙ্গে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
তথ্যমতে, ২০১০ সালে দোহাজারি থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার ও রামু থেকে মিয়ানমারের কাছে গুনদুম পর্যন্ত ১২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় ধরা হয় ১ হাজার ৮৫২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। তবে জমি অধিগ্রহণ বৃদ্ধি, সংরক্ষিত বনাঞ্চলের জমি পাওয়া, ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ ও হাতি চলাচলের নিরাপত্তা ইত্যাদি কারণে ২০১৬ সালে বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে প্রকল্পটি বড় ধরনের সংশোধন করা হয়। এতে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে এডিবির ঋণ দেয়ার কথা ছিল ১৩ হাজার ১১৫ কোটি ৪১ লাখ টাকা।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকল্পটির প্রথম দুই প্যাকেজের ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে প্রথম প্যাকেজ (দোহাজারী-চকরিয়া) যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন। আর দ্বিতীয় প্যাকেজে (চকরিয়া-রামু-কক্সবাজার) যৌথভাবে কাজ করছে চায়না সার্টিফিকেশন অ্যান্ড ইন্সপেকশন কোম্পানি (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার।
প্রথম প্যাকেজের চুক্তিমূল্য ছিল প্রায় দুই হাজার ৬৮৮ কোটি টাকা ও দ্বিতীয় প্যাকেজের প্রায় তিন হাজার ৫০২ কোটি টাকা। চুক্তির মেয়াদ ধরা ছিল তিন বছর। যদিও পরে তা বাড়ানো হয়। আর প্রকল্পটির মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানোর পর আগামী জুন পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে তা আরও দুই বছর বাড়ানো হচ্ছে। এতে ২০২৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ছে।