Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 7:45 pm

এডিবির প্রতিবেদন: ২০১৬ সালে শীর্ষ ৯ গন্তব্যে রফতানি কমেছে বাংলাদেশের

জাকারিয়া পলাশ: বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে রফতানি এর আগের অর্থবছরের তুলনায় বেড়েছে। কিন্তু ২০১৬ সালের পঞ্জিকাবর্ষের হিসাবে দেশে রফতানি কমেছে। আলোচ্য বছরে শীর্ষস্থানীয় ১০টি দেশের মধ্যে ৯টিতেই রফতানি আয় হ্রাস পেয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

‘কি ইন্ডিকেটরস ফর এশিয়া অ্যান্ড দ্য প্যাসিফিক ২০১৭’ শীর্ষক এ প্রতিবেদনে দাতা সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশের রফতানির তুলনায় ২০১৬ সালের রফতানি আয়ের চিত্র নিম্নমুখী ছিল। এক্ষেত্রে শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে শুধু ফ্রান্সে রফতানি বৃদ্ধি পেয়েছে বলে দেখা দেছে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, যুক্তরাজ্য, স্পেন, ইতালি, কানাডা, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও তুরস্কে রফতানি কমেছে।

এদিকে এডিবির প্রতিবেদনে রফতানি আয় হ্রাস পাওয়ার কথা বলা হলেও এর কোনো যৌক্তিক কারণ দেখছেন না রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) কর্মকর্তারা। এ প্রসঙ্গে ইপিবির পরিচালক (তথ্য) মো. আবুল কালাম আজাদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বছরের সব মাসে সমান পরিমাণ রফতানি হয় না। এ কারণে অর্থবছর আর পঞ্জিকাবর্ষের হিসাবে ভিন্নতা দেখা যেতেই পারে। ইপিবি প্রতিবছর অর্থবছরের রফতানির হিসাব দেয়। অন্য কোনো সংস্থা পঞ্জিকাবর্ষের হিসাব দিলে তাতে বৈচিত্র্য সৃষ্টি অস্বাভাবিক নয়। এডিবির প্রতিবেদনে রফতানি হ্রাসের তথ্য থেকে থাকলে তা হিসাবের পদ্ধতিগত ভিন্নতার কারণেই হয়েছে।’

শীর্ষ গন্তব্য দেশগুলোয় রফতানি কমে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইপিবির হিসাবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে দেশের সার্বিক রফতানি বেড়েছে। শীর্ষ গন্তব্যে রফতানি কমলে দেশের মোট রফতানি বৃদ্ধি পেতে পারে না। সুতরাং আমরা মনে করি, ওই দেশগুলোর রফতানি কমেনি। আর একসঙ্গে সব দেশে রফতানি আয় কমার কোনো কারণ এখনও সৃষ্টি হয়নি। তবে বৈশ্বিকভাবেই বাণিজ্যের ওপর একটি নেতিবাচক অবস্থা লক্ষ করা যাচ্ছে।’

প্রতিবেদনে মূলত এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের আর্থসামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরে এর বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বৈশ্বিক মোট প্রবৃদ্ধির প্রায় ৪১ শতাংশই আসে এ অঞ্চল থেকে। এর অর্থনৈতিক, বিনিয়োগসংক্রান্ত, সামাজিক, পরিবেশগত ও টেকসই উন্নয়নসংশ্লিষ্ট প্রধান সূচকগুলোর অবস্থা বিস্তারিত তথ্যের মাধ্যমে তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। এতে আলাদাভাবে অঞ্চলভুক্ত দেশগুলোর তথ্যও বিশ্লেষণ করা হয়।

প্রতিবেদনে ‘বাংলাদেশ’ সংক্রান্ত অধ্যায়ে দেওয়া তথ্যমতে, ২০০০ সাল থেকে রফতানি আয়ে নিয়মিত ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। তবে ২০০২, ২০১২ ও ২০১৬ সালে আগের বছরের চেয়ে রফতানি হ্রাস পেয়েছিল। সর্বশেষ ২০১৬ সালে দুই হাজার ৯৮২ কোটি ডলার। আর আগের বছরের রফতানি আয় ছিল দুই হাজার ৯৯২ কোটি ডলার। সে হিসাবে এ বছর দেশের মোট রফতানি সামান্য অর্থাৎ ১০ কোটি ডলারের মতো কমেছে। মোট রফতানির পরিমাণ সামান্য হ্রাস পেলেও শীর্ষ গন্তব্য দেশগুলোয় দেশের রফতানি হ্রাসের হার বেশি দেখা গেছে। নতুন কিছু দেশের বাজারে রফতানি যদিও বেড়েছে।

তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ২০১৬ সালের রফতানি কমেছে ২৭ কোটি ডলার, জার্মানিতে রফতানি কমেছে ৬৬ কোটি ডলার আর যুক্তরাজ্যে ১৮ কোটি ডলারের রফতানি কম হয়েছে। শীর্ষ তিন গন্তব্য মিলে দেশের রফতানি কমেছে ১১১ কোটি ডলারের। এছাড়া স্পেনের বাজারে পাঁচ কোটি ডলার, ইতালিতে ১৫ কোটি ডলার, কানাডায় ১৩ কোটি ডলার, বেলজিয়ামে তিন কোটি, নেদারল্যান্ডসে চার কোটি ও তুরস্কে ছয় কোটি ডলারের রফতানি আয় কম হয়েছে। উল্লেখ্য, গত ১৭ বছরে রফতানি আয় হ্রাস পাওয়ার ঘটনা ঘটেছে মাত্র দুবার।

এডিবির ওই প্রতিবেদনে রফতানি আয় কমার কথা বলা হলেও আমদানির ক্ষেত্রে গতানুগতিক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। ২০১৫ সালের চেয়ে ২০১৬ সালে শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে ৯টি থেকেই বাংলাদেশের আমদানি বেশি হয়েছে। দেখা গেছে, বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি আমদানি হয় চীন থেকে। অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে ভারত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, ব্রাজিল ও কুয়েত। এর মধ্যে শুধু কুয়েত থেকেই বাংলাদেশের আমদানি ১১ কোটি ডলার কমেছে। সার্বিকভাবে দেশের আমদানি ৪০০ কোটি ডলার বেড়েছে। আর ২০১৬ সালে দেশের মোট আমদানি হয়েছে চার হাজার ৩৫২ কোটি ডলারের।