প্রচলিত পদ্ধতিতে যন্ত্রের সাহায্যে এডিস মশার অঙ্গসংস্থানগত বৈশিষ্ট্য নির্ধারণের মাধ্যমে এডিস শনাক্ত করা হয়। তবে মলিকুলার ডিএনএ বারকোডিং প্রযুক্তির মাধ্যমে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস মশা শনাক্তকরণে সাফল্য পেয়েছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিভাসু) একদল গষেবক। একাধিক প্রজাতির এডিস মশা একই রকম বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য ধারণ করায় নির্ভরযোগ্য পদ্ধতি হিসেবে ডিএনএ বারকোডিং প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত। বিশ্ববিদ্যালয়ের সহায়তা ও তহবিল পেলে মশা শনাক্তকরণে প্রযুক্তি বা ডিভাইস তৈরি করতে চায় ওই গবেষক দল। আর তা করতে পারলে এডিস মশা শনাক্ত করে কম টাকার ওষুধে ধ্বংস করা সম্ভব হবে। তাদের মতে, বছরব্যাপী মশার উৎস, উৎপত্তি, বিস্তার, প্রজনন দক্ষতা প্রভৃতি সুনির্দিষ্টরূপে শনাক্ত করার মাধ্যমে যে কোনো এলাকার মশাবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাবের পূর্বাভাস দেওয়া সম্ভব।
সিভাসু সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির প্যাথলজি ও প্যারাসাইটোলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. এএমএএম জুনায়েদ ছিদ্দিকীর নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের একটি গবেষক দল চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করে জুলাইয়ে শেষ করেন। এ গবেষণায় ব্যয় হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা, যা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বহন করেছে। গবেষক দলের অন্যরা হলেন সিভাসুর অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আলমগীর হোসেন, ডা. সুরুজ্জামান সরকার (স্নাতকোত্তর গবেষক), চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. বদরুল আমিন ভূঁইয়া ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. কবিরুল বাশার প্রমুখ।
গবেষক দলের প্রধান ড. এএমএএম জুনায়েদ ছিদ্দিকী বলেন, সম্প্রতি চট্টগ্রামের বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে সংগৃহীত মশার নমুনার ডিএনএ সংগ্রহ করে পিসিআর প্রযুক্তি ও ডিএনএ সিকোয়েন্সিংয়ের মাধ্যমে এডিস জাতের দুটি প্রজাতি মলিকুলার প্রদ্ধতিতে শনাক্ত করা হয়। এরই মধ্যে এ-সংক্রান্ত প্রাপ্ত ডেটা যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সেন্টার ফল বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশনে (এনসিবিআই) নিবন্ধিত হয়েছে, এ ডেটার মেধাস্বত্ব স্বীকৃত হয়েছে। গবেষণার ফল এরই মধ্যে সিভাসুতে মাস্টার্স পর্যায়ে গবেষণা থিসিস হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট প্রকাশনা প্রক্রিয়াধীন।
গবেষক দলের মতে, আধুনিক ডিএনএ বারকোডিং প্রযুক্তির সফল প্রয়োগের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে বিভিন্ন রোগ বহনকারী কীটপতঙ্গ নির্ভুলভাবে শনাক্তকরণ সম্ভব। এছাড়া প্রাপ্ত তথ্যগুলোর সমন্বয়ে মাঠ পর্যায়ে উপযোগী ডিভাইস বা যন্ত্র আবিষ্কার করা সম্ভব। এক্ষেত্রে যেখানে সহজে বহনযোগ্য মোবাইল ডিভাইসে যে কোনো মশা বা মাছির লার্ভা, ডিম বা দেহের অংশ ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে সেই পতঙ্গের নাম ও প্রজাতি নির্ভুলভাবে জানা সম্ভব। গবেষণাপ্রাপ্ত তথ্য ব্যবহার করে দ্রুততম সময়ে (সাত দিন) যে কোনো প্রজাতির এডিস বা অন্যান্য মশাসহ নির্ভুলভাবে শনাক্ত করা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রযুক্তি আবিষ্কার করা গেলে তার মাধ্যমে পূর্ণবয়স্ক মশার পাশাপাশি জীবনচক্রের অন্যান্য পর্যায় যেমন লার্ভা, পিউপা বা ডিম থেকেও ডিএনও সংগ্রহের মাধ্যমে শনাক্তকরণ সম্ভব।
গবেষণার উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে গবেষদক দলের প্রধান ড. এএমএএম জুনায়েদ ছিদ্দিকী বলেন, কোন মশা ডেঙ্গু বহন করে এটা আমরা জানি না। সিটি করপোরেশনের ৪১ ওয়ার্ডে কোটি টাকার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে। কোন ওয়ার্ডে কোন প্রজাতির মশা রয়েছে এটা তারা জানে না। চোখ বন্ধ করে ধোঁয়া দিচ্ছে, কেমিক্যাল দিচ্ছে। এতে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এডিস মশার ১০০ ধরনের প্রজাতি রয়েছে। আমরা যদি ডিম ও লার্ভা দেখে জানতে পারি কোন ওয়ার্ডে কোন ধরনের মশা বা ডেঙ্গু মশা আছে, তাহলে কম টাকায়, অল্প সময়ে ও কম পরিশ্রমে ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
মোহাম্মদ আলী