Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 1:25 pm

‘এত উন্নয়নের পরও স্বস্তি পাচ্ছেন না’ ওবায়দুল কাদের

নিজস্ব প্রতিবেদক: সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, তার মন্ত্রণালয়ের অধীনে দেশে ‘মেগা’ প্রকল্পের মাধ্যমে বিস্তর উন্নয়নের পরও সড়ককে নিরাপদ না রাখতে পেরে ‘স্বস্তিতে নেই’ তিনি।

গতকাল রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সড়ক ভবনে জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনায় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘এত কিছু করার পরও আমি স্বস্তি পাচ্ছি না। আমরা সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারব না?’

এবারের জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের সেøাগান ঠিক করা হয়েছে ‘গতিসীমা মেনে চলি, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করি। গত ৯ মাসে সড়কে ট্রাফিক আইন ভঙ্গের জন্য কী পরিমাণ জরিমানা আদায় করা হয়েছে, সেই পরিসংখ্যান অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম।’

পরে সে প্রসঙ্গ টেনে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘কত টাকা জরিমানা তুলেছেন, এটার হিসাব দিয়ে কোনো লাভ নেই। এটা কোনো বিষয় নয়। আমার কাছে বিষয় সড়ক নিরাপদ আছে কি না। গাড়িগুলো নিয়ম মতো চলছে কি না, গাড়ির ফিটনেস আছে কি না, চালকের ফিটনেস- গাড়ির চালক গাড়ি চালাবার যোগ্য কি না, গাড়ি ওভারলোডেড কি না, গাড়ি বেশি গতিতে চলছে কি না আমি এটাই দেখব। আমার কাছে বিষয় হলো দুর্ঘটনা কমেছে কি না।’

দুর্ঘটনা ‘অবিরাম দুর্ভাবনার কারণ হয়ে আছে’ মন্তব্য করে মন্ত্রী বলেন, প্রতিদিনই ঘটছে। পাখির মতো মানুষ মরে, মাছির মতো মানুষ মরে। এ মর্মান্তিক দৃশ্যপট মানুষ হিসেবে সইতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়।

অনেক ত্রুটি আমাদের আছে সেটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই। সুন্দর ব্যানার পোস্টার করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না। নিরাপদ সড়ক দিবস করতে হবে প্রতিদিন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, এত উন্নয়ন হলো, কিন্তু অনেকে বলেন, ‘এই কাজটি হয় না কেন। সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারব না। এখন সংকট শৃঙ্খলা, পরিবহন ও সড়কের। এখানে ব্যর্থ হলে আমাদের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। কাজের মান ও গতি দুটোই ঠিক রাখতে হবে।’

এদিকে প্রতিদিন সড়কে মৃত্যুর খবর মনে ওপর কতটা চাপ ফেলে সেই বর্ণনা দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কাদের বলেন, ‘সবার দিন শুরু হয় একভাবে, আর আমার দিন শুরু হয় অন্যভাবে। কাগজের পাতার অপ্রত্যাশিত মর্মান্তিক দুর্ঘটনার খবর পড়ে আমার দিন শুরু হয়। মন্ত্রী হলেও আমি তো মানুষ। আমারও কষ্ট হয়। আমিও দগ্ধ হই অদেখা দহনে। মনে হয় আমিও সেই অসহায় পরিবারের একজন। যে পরিবারের কয়েকজনও এক সঙ্গে পথের বলি হয়। কখনও দুই পরিবহনের সংঘর্ষে। কখনও তিন চাকার গাড়ি ইজিবাইকে, নসিমন, করিমনে।’

আগামী বছর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের কয়েকটি বড় প্রকল্পের উদ্বোধন হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘অবকাঠামোগতভাবে পরিবর্তন দৃশ্যমান। আগামী বছর সড়কে আমি তো বলব বৈপ্লবিক পরিবর্তন পুরোপুরি দৃশ্যমান হবে। পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শেষ পর্য়ায়ে, আমি গর্ব করে বলব, আমার মন্ত্রণালয়ে মেগা প্রকল্পগুলো আগামী বছর উদ্বোধন হবে। সেগুলো হলোÑপদ্মা সেতু, এমআরটি লাইন ৬, মেট্রোরেল, বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ও চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু কর্ণফুলী টানেল।’

চট্টগ্রামের মীরসরাই থেকে আরেকটি মেরিনড্রাইভের উদ্বোধন করা হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আগামী ২৪ অক্টোবর পায়রা সেতুর উদ্বোধন হবে। আর দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের ভিত্তিপ্রস্তর দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’

এত উন্নয়নমূলক কাজের পরও ‘স্বস্তি পাচ্ছেন না’ জানিয়ে কাদের বলেন, ‘মন্ত্রণালয় নিয়মিত চালাচ্ছি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, ১০ বছর একাধারে আছি, এই মন্ত্রণালয়ে কোনো কমিশন, পার্সেনটেজ, কোনো প্রমোশন বাণিজ্য কখনও করিনি। আমার বিবেকের কাছে আমি পরিষ্কার।’

এ মন্ত্রণালয়ে রাজনৈতিক তদবিরও বন্ধ করেছেন দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘ইঞ্জিনিয়ার ট্রান্সফার, বিআরটিএর অফিসার ট্রান্সফার, এসব তদবির শুরুতে আমার জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। কিন্তু আমি কঠোর হয়েছি, প্রধানমন্ত্রী আমাকে সাপোর্ট দিয়েছেন, সচিবরা আমার সঙ্গে ছিলেন, যে কারণে আমি এসব প্র্যাকটিস বন্ধ করতে পেরেছি। মন্ত্রীকে কিছু দিয়ে চিফ ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার একটা প্র্যাকটিস মন্ত্রণালয়ে আগে ছিল, কিন্তু আমি আসার পর তা বন্ধ করেছি। সেই প্র্যাকটিস এখন আর নেই। আমাকে টাকা দিয়ে যদি চিফ ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়, ওই টাকা সে ওঠাবে যখন দায়িত্ব পাবে। এটাই তো স্বাভাবিক।’

এদিকে বিআরটিএ-এর দুর্নীতির কথা তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনৈতিক তদবির হয় কারণ সবাই আসতে চায় মিরপুরে না হলে ইকিরিয়ায় (কেরানীগঞ্জ)। টাকার খনি আছে ওখানে। যেখানে গাড়ি বেশি, সেখানে সবাই ট্রান্সফার হয়ে যেতে চায়। এসব অপকর্ম আমি বন্ধ করেছি।’

বিআরটিএ চেয়ারম্যানের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বলব, যা বন্ধ হয়নি সেটা বন্ধ করেন। এখনও বিআরটিএ অফিসগুলোতে সর্ষের মধ্যে ভূত। এই ভূত হলো দালাল। ভেতরের আশ্রয়-প্রশয় না পেলে কীভাবে বাইরে থেকে তারা দৌরাত্ম্য করে? এগুলো বন্ধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। আমি কোনো রাজনৈতিক সুবিধা কাউকে এলাও করি না। বিআরটিএতে যে অপকর্ম যারা করে, তাদের ভালো হয়ে যেতে বলুন চেয়ারম্যান সাহেব। এগুলো নিয়ে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিন।’

আলোচনায় উপস্থিত প্রকৌশলীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, ‘অনেক ইঞ্জিনিয়ার ভালো কাজ করেন। কিন্তু কেউ কেউ যে কাজ করেন, এক পসলা বৃষ্টি হলেই সেই রাস্তা ভেসে যায়। এ রাস্তা করার কোনো দরকার আছে? কাজের মান ঠিক রাখুন। যারা ভালো কাজ করে, আমি তাদের প্রশংসা করব। এক বছরের মধ্যে কিছু চার লেইন রাস্তা এবড়ো থেবড়ো হয়ে গেছে। দেশের টাকা খরচ করে এই রাস্তা করার দরকারটা কি?’

মহাসড়কদের চালকের জন্য নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার প্রকল্প দ্রুত শেষ করতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিবকে নির্দেশ দেন মন্ত্রী।