ঋণ প্রদানে নানা অনিয়ম করেছে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শনে এসব অনিয়ম ধরা পড়েছে। তা নিয়ে শেয়ার বিজের ধারাবাহিক আয়োজনের আজ থাকছে শেষ পর্ব
মেহেদী হাসান: এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক থেকে ১৮ কোটি টাকা ঋণ নেন ব্যাংকটির পরিচালক ও মাল্টিপ্লান গ্রæপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনসিফ আলী। এ ঋণের কোনো কিস্তি পরিশোধ না করলেও স্বীয় ক্ষমতাবলে ঋণের মেয়াদ বাড়ান ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেওয়ান মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক সৈয়দ মুনসিফ আলীর প্রতিষ্ঠান মাল্টিপ্লান লিমিটেডের দুটি ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ১৫ কোটি টাকা ঋণ মঞ্জুর করা হয়। পরে এ ঋণটি ২০ কোটি টাকায় বৃদ্ধির আবেদন করা হলে ব্যাংক ১৮ কোটি টাকা মঞ্জুর করে।
পরিদর্শন প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সৈয়দ মুনসিফ আলীর এ হিসাবটিতে সন্তোষজনক লেনদেন না থাকলেও ঋণটি নবায়ন করার জন্য প্রধান কার্যালয়ে প্রস্তাব করা হয়। পরে প্রধান কার্যালয় এ ঋণ হিসাবটি নবায়নের অনুমতি দেয়। ঋণ নবায়নসংক্রান্ত গ্রাহকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঋণ হিসাবটিতে সীমাতিরিক্ত স্থিতি বিদ্যমান থাকায় ঋণ হিসাবটিতে এক কোটি ৯২ লাখ টাকা জমাপূর্বক অতিরিক্ত অর্থ সমন্বয়ের জন্য গ্রাহককে অনুরোধ করা হয়। তবে গ্রাহক কোনো অর্থ হিসাবে জমা করেনি। ফলে শ্রেণীকরণ এড়াতে অস্থায়ী মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাব করা হয়। এ প্রস্তাব ব্যাংকের ক্রেডিট কমিটির কাছে উপস্থাপন না করেই ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা পরিচালক তার একক ক্ষমতাবলে ঋণের মেয়াদ বৃদ্ধি করেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান মুজিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এসব তথ্য সঠিক নয়। আমাদের কাছে এ রকম কোনো প্রতিবেদন আসেনি, তাই আমরা এ বিষয় সম্পর্কে জানি না।’
এ ঋণের বিষয়ে এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক ও মাল্টিপ্লান গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মুনসিফ আলী শেয়ার বিজকে বলেন, ‘এসব তথ্য সঠিক নয়। আমি এনআরবিসি ব্যাংকের পরিচালক। তাই এ ব্যাংক থেকে আমি ঋণ নিতে পারি না। আর বাংলাদেশ ব্যাংক এ রকম প্রতিবেদন করে থাকলে সেটা তো আমাদের ব্যাংকের কাছে আসত। আমাদের ব্যাংকে এ রকম কোনো প্রতিবেদন আসেনি।’
এ ঋণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, প্রচলিত ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী যে নীতিমালা আছে, সেই নীতিমালার আওতায় ব্যাংকের সব কাজ বাংলাদেশ ব্যাংক রেগুলেট ও মনিটরিং করে থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংক এটি করে যাচ্ছে। এগুলো আমরা সরেজমিনে গিয়েও করি এবং বিভিন্ন মাধ্যম থেকে তথ্য-উপাত্ত নিয়েও করে থাকি। বিভিন্ন অভিযোগের ক্ষেত্রেও আমরা তদারকি করে থাকি। ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে আমরা তাদের নানা ধরনের নির্দেশনা দিয়ে থাকি। এছাড়া কোনো ব্যাংকের অবস্থা যদি বেশ খারাপ হয়, তাহলে সেসব ব্যাংকে আমরা পর্যবেক্ষক নিয়োগ দিয়ে থাকি।
জানা গেছে, আওয়ামী লীগ সরকার সর্বশেষ যে ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেয়, এনআরবিসি ব্যাংক তারই একটি। ২০১২ সালের ১৭ এপ্রিল এ ব্যাংকের ইচ্ছাপত্র (এলওআই) দেওয়া হয় যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা ফরাসত আলীর নামে। বেশ কিছু অনিয়মের কারণে গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর ব্যাংকটিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।
এদিকে এ ঋণের বিষয়ে জানতে গত ১৮ সেপ্টেম্বর রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত ব্যাংকটির পরিচালক সৈয়দ মুনসিফ আলীর প্রতিষ্ঠান মাল্টিপ্লান গ্রুপের কার্যালয়ে গেলে তিনি শেয়ার বিজের এ প্রতিবেদকের ওপর ক্ষীপ্ত হন। প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মামলার হুমকি দেন এবং নানাভাবে হেনস্তার চেষ্টা করেন। অফিসের কর্মচারীদের ডেকে প্রতিবেদকের ছবি তুলে রাখেন এবং স্বাক্ষর নেন।