এনইসিতে দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার এডিপি অনুমোদন

নিজস্ব প্রতিবেদক: আগামী অর্থবছরের জন্য দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। এডিপির মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে এক লাখ ৬৫ হাজার কোটি এবং বৈদেশিক ঋণ থেকে এক লাখ কোটি টাকা ব্যয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও এনইসি চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা।

বৈঠক শেষে ব্রিফিং করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী আবদুস সালাম ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী মো. শহীদুজ্জামান সরকার। এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব সত্যজিত কর্মকার, সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ড. মো. কাউছার আহমেদ, আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন, কৃষি পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) আব্দুল বাকীসহ পরিকল্পনা কমিশনের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দসহ মোট প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৩২১টি। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ১ হাজার ১৩৩টি, কারিগরি সহায়তার ৮৭টি এবং সমীক্ষা প্রকল্প রয়েছে ২১টি। মোট প্রকল্পের মধ্যে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপি থেকে স্থানান্তর হবে ১ হাজার ২৭৭টি প্রকল্প। বাকিগুলোর মধ্যে নতুন অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ৬০টি। এছাড়া আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দবিহীন অননুমোদিত প্রকল্প যুক্ত হচ্ছে এক হাজার ৮৯৪টি, বৈদেশিক অর্থায়নের সুবিধার অননুমোদিত নতুন প্রকল্প ২৫৭টি এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) প্রকল্প থাকবে ৮০টি।

ব্রিফিংয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, জেলাভিত্তিক মাস্টার প্ল্যান করা হবে। এ জন্য অনুমোদন দিয়েছে এনইসি। আগামীতে সুষম উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। আগামীতে পশ্চাৎপদ বলতে কোনো কথা থাকবে না। এজন্যই এখন জেলা মাস্টার প্ল্যান করা হবে। তিনি আরও বলেন, ২০০৯ সালে দারিদ্র্য ছিল ৭০ শতাংশ। এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। অতি দারিদ্র্য ছিল ৫০ শতাংশ। এখন সেটি কমে ৫ দশমিক ৬ শতাংশে নেমে এসেছে। গ্রামীণ উন্নয়নে গুরুত্ব দেয়ার মাধ্যমে দারিদ্র আরও কমে আসবে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্রকল্প বাচাইয়ে যথাযথ মানদণ্ড অনুসরণ করতে হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হবে। আশা করছি এবার সর্বোচ্চ এডিপি বাস্তবায়ন হবে।

পরিকল্পনা সচিব সত্যজিত কর্মকার বলেন, এবার উচ্চাভিলাষী এডিপি তৈরি করা হয়নি। গত বছরের তুলনায় এবার ২ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। এবার রাজস্বনীতি ও মুদ্রানীতির মধ্যে সমন্বয় করা হবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন সক্ষমতা বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, নতুন এডিপির আকার চলতি অর্থবছরের মূল এডিপির তুলনায় ২ হাজার কোটি টাকা বা শূন্য দশমিক ৭৬ শতাংশ বেশি। এছাড়া সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (আরএডিপি) তুলনায় ২০ হাজার কোটি টাকা বা ৮ দশমিক ১৬ শতাংশ বেশি। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে। এ খাতে বরাদ্দ ৭০ হাজার ৬৮৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। তবে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাবে স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ বিভাগের বরাদ্দ ৩৮ হাজার ৮০৮ কোটি ৮৮ লাখ টাকা। এদিকে সবচেয়ে কম বরাদ্দপ্রাপ্ত খাত হলো প্রতিরক্ষা। এখানে ধরা হয়েছে ৭১০ কোটি টাকা। প্রকল্প থাকছে ১ হাজার ৭৩৭টি।

ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, আগামী অর্থবছরের এডিপিতে সরকারি ও বৈদেশিক সহায়তা মিলে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা। এর বাইরেও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নিজস্ব অর্থায়ন আছে ১৩ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ধরলে নতুন এডিপির আকার দাঁড়াবে ২ লাখ ৭৮ হাজার ২৮৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

এডিপিতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত। এ খাতে বরাদ্দ ৪০ হাজার ৭৫১ কোটি ৮৬ লাখ এবং তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ পেয়েছে শিক্ষা খাত। এ খাতে বরাদ্দ ৩১ হাজার ৫২৮ কোটি ৬০ লাখ টাকা। অন্যান্য খাতের বরাদ্দের মধ্যে গৃহায়ন ও কমিউনিটি সুবিধাবলি খাতে ২৪ হাজার ৮৬৮ কোটি ৩ লাখ, স্বাস্থ্য খাতে ২০ হাজার ৬৮২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়নে ১৭ হাজার ৯৮৬ কোটি ২১ লাখ এবং কৃষি খাতে ১৩ হাজার ২১৯ কোটি টাকা। আরও আছে শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবায় ৬ হাজার ৪৯২ কোটি ১৮ লাখ, বিজ্ঞান ও তথ্যপ্রযুক্তিতে ৪ হাজার ৭৮৬ কোটি ৯২ লাখ, ধর্ম-সংস্কৃতি ও বিনোদনে ৩ হাজার ৪৯২ কোটি, সামাজিক সুরক্ষায় ৩ হাজার ৩০৪ কোটি, জনশৃঙ্খলা ও সুরক্ষায় ৩ হাজার ৩০৮ কোটি এবং সাধারণ সরকারি সেবা খাতে দেয়া হচ্ছে ২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকা।

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ: আগামী অর্থবছরের এডিপিতে মন্ত্রণালয়ভিত্তিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগকে ৩২ হাজার ৪২ কোটি টাকা। তৃতীয় সর্বোচ্চ বিদ্যুৎ বিভাগ ২৯ হাজার ১৭৬ কোটি টাকা। এছাড়া প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৬ হাজার ১৩৫ কোটি, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ ১৩ হাজার ৭৪১ কোটি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ১৩ হাজার ৭২৫ কোটি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় ১২ হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। আরও আছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ ১১ হাজার ৩৮৭ কোটি, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় ১০ হাজার ৩৭৩ কোটি এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ৮ হাজার ৬৮৭ কোটি টাকা।

সর্বোচ্চ বরাদ্দ পাওয়া ১০ প্রকল্পে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে ৫১ হাজার ৯৭০ কোটি টাকা। চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প। এছাড়া ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেল লাইন-১, পাওয়ার গ্রিডের নেটওয়ার্ক শক্তিশালীকরণ, বিমানবন্দ থার্ড টার্মিনাল এবং পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ প্রকল্প।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০