এনবিআরের রাজস্ব লক্ষ্য তিন লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: আইন পাসের সাত বছর পর আগামী ১ জুলাই থেকে বাস্তবায়িত হচ্ছে নতুন মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন, ২০১২। আর নতুন এ আইনের ওপর অনেকটা ভর করেই ২০১৯-২০ অর্থবছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে। গতকাল জাতীয় সংসদে প্রধানমন্ত্রী বাজেট উত্থাপন করেন। পাঁচ কোটি ২৩ লাখ ১৯০ কোটি টাকার প্রস্তাবিত বাজেটের মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে ৬২ দশমিক দুই শতাংশ। অর্থাৎ তিন লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভ্যাট খাতে লক্ষ্যমাত্রা ৩৭ দশমিক আট শতাংশ, অর্থাৎ এক লাখ ২৩ হাজার ৬৭ কোটি টাকা, যেখানে চলতি অর্থবছর লক্ষ্যমাত্রা এক লাখ চার হাজার ৭৯৭ টাকা (সংশোধিত)।
নতুন ভ্যাট আইনে ব্যবসায়ীদের দাবি মেনে নিয়ে বিনিয়োগ বৃদ্ধির জন্য অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় শিল্প রক্ষায় দুই হাজার ১২৫টি পণ্যে আমদানি শুল্ককর অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। অব্যাহতির দীর্ঘ তালিকায়ও কাটছাঁট করা হয়নি। ভ্যাটহার ১৫ শতাংশ ছাড়াও ৫, ৭.৫ ও ১০ শতাংশের তিনটি স্তর করা হয়েছে। এছাড়া সংবেদনশীল বিবেচনায় ওষুধ ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্যে বর্তমান ভ্যাটহার ২.৪ ও ২ শতাংশ অব্যাহত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। ৫ শতাংশ ভ্যাটের আওতায় মোট পণ্য ও সেবা থাকছে ৯১টি। ১২টি পণ্যে সাড়ে ৭ শতাংশ হারে, ২০টি পণ্য ও সেবায় ১০ শতাংশ। ১৫ শতাংশ ভ্যাট প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান রেয়াত নিতে পারলেও অন্যদের জন্য সে সুযোগ থাকছে না। পাশাপাশি ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক ব্যবসায়ীদের মূল্য সংযোজন করের (ভ্যাট) আওতার বাইরে রাখতে ৫০ লাখ টাকার কম বার্ষিক টার্নওভারকে ভ্যাট থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে নতুন আইনের কিছু অংশ সংশোধন করা হয়েছে। এছাড়া প্লাস্টিক, অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি তৈজসপত্র, সয়াবিন তেল, পাম অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল ও সরিষার তেলে দীর্ঘদিন ধরে ভ্যাট অব্যাহতি দেওয়া হলেও এবার তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাজেটে ভ্যাট বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দীর্ঘ প্রতীক্ষিত আমাদের ভ্যাট আইন, ২০১২ আগামী অর্থবছর থেকে আমরা বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি। এই আইনটির যথাযথ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় জনবলসহ আনুষঙ্গিক সব রকমের সহায়তা আমরা নিশ্চিত করব। আরও থাকবে সরকারি-বেসরকারি খাতের সমন্বয়ে গঠিত একটি যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ, যারা আইনটির বাস্তবায়ন তদারকি করবে।’
অন্যদিকে বাজেটে আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রা ৩৫ শতাংশ অর্থাৎ এক লাখ ১৩ হাজার ৯১২ কোটি টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে, যেখানে চলতি অর্থবছর সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ৯৫ হাজার ১৬৭ কোটি টাকা। করদাতার সংখ্যা এক কোটিতে উন্নীতকরণ, কর অঞ্চল ৩১টি থেকে বাড়িয়ে ৬৩টি করা, প্রতি উপজেলায় কর অফিস স্থাপন, কর ইন্টেলিজেন্স, ইনভেস্টিগেশন অ্যান্ড এনফোর্সমেন্ট ইউনিট, ডিজিটাল কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট, উৎসে কর ব্যবস্থাপনা ইউনিট, কর তথ্য ইউনিট, আন্তর্জাতিক কর ইউনিট স্থাপন, করজাল গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত করাসহ আয়কর খাতে বেশ কিছু সংস্কারের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। তবে আগামী ২০২১-২২ অর্থবছরের মধ্যে আয়কর খাতে রাজস্বের ৫০ শতাংশ আয়ের কথা বলা হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, আয়কর খাতে গত এক দশক আগে মোট রাজস্বের ২০ শতাংশ আদায় হতো, যেক্ষেত্রে বর্তমানে আদায় হয় ৩৫ শতাংশ। তবে কর আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো দিকনির্দেশনার কথা বলা হয়নি।
অপরদিকে কাস্টমস আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশ থেকে আমদানি করা সব পণ্য স্ক্যানিং করা, আন্ডার ইনভয়েসিং ও ওভার ইনভয়েসিং রোধে বিশেষায়িত ইউনিট খোলাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপের কথা প্রস্তাবিত বাজেটে বলা হয়।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০