নিজস্ব প্রতিবেদক: নতুন ভ্যাট আইন-২০১২ সংশোধন করে সমন্বিত ভ্যাট ১৫ শতাংশের পরিবর্তে সাত শতাংশ করার দাবি জানিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (ডিসিসিআই)। একই সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ পরিমাণ জিডিপির ৩৫ শতাংশে উন্নীত করার আহ্বান জানিয়েছেন তারা। গতকাল সোমবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. নজিবুর রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতে এসব দাবি করে ডিসিসিআই’র পরিচালনা পর্ষদ।
ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খানের নেতৃত্বে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা গতকাল এনবিআর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় এনবিআরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ফেব্রুয়ারি মাসকে পার্টনারশিপ মাস হিসেবে ঘোষণা করেছে এনবিআর। আগামী ১ জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন বাস্তবায়ন করা হবে। এ বিষয়ে ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা তৈরির জন্য চেম্বারের পক্ষ থেকে সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি ব্যবসায়ীদের ভ্যাট ও ট্যাক্স কার্যক্রমের অনলাইন সেবাগুলো গ্রহণের আহ্বান জানান।
এনবিআর সদস্য ফরিদ উদ্দিন বলেন, রাজস্ব আহরণের গতিকে আরও বেগবান করার জন্য বিশেষায়িত পণ্য ও এলাকাভিত্তিক অ্যাসোসিয়েশনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা বৃদ্ধির চেষ্টা করছে এনবিআর।
এনবিআরের অপর সদস্য শাহরিয়ার মোল্লা জানান, শিগগিরই বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডিজিটাইজড করা হচ্ছে, যা সার্বিক কার্যক্রমকে গতিশীল করবে।
ডিসিসিআই সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, নতুন ভ্যাট এবং সাপ্লিমেন্টারি অ্যাক্ট-২০১২ আইনে সমন্বিত ১৫ শতাংশ ভ্যাটের পরিবর্তে সাত শতাংশ করা হোক। বাংলাদেশের প্রতিযোগী দেশগুলোর রাজস্ব কাঠামোর সঙ্গে মিল রেখে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ উন্নয়নে যৌক্তিক হারে ভ্যাট আরোপ করা দরকার।
ডিসিসিআই সভাপতি তার সংগঠনের পরিকল্পনা উল্লেখ করে বলেন, দেশের সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থনৈতিক উন্নয়ন, ভিশন-২০২১ অনুযায়ী মধ্য আয়ের দেশে, ২০৩০ সালের মধ্যে ৩০তম অর্থনীতির দেশে উন্নীত হতে হলে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বর্তমানে জিডিপির ২২ শতাংশের স্থলে ২০২১ সালের মধ্যে ২৯ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে তা বাড়িয়ে ৩৫ শতাংশে বৃদ্ধি করতে হবে।
ঢাকা চেম্বার সভাপতি এনবিআর কর্তৃক প্রদত্ত ট্যাক্স কার্ডকে ছয়টি শ্রেণিতে ভাগ করার প্রস্তাব করেন। তিনি বলেন, গ্রিন কার্ড, গ্রিন প্লাস কার্ড, সিলভার কার্ড, গোল্ড কার্ড, গোল্ড প্লাস কার্ড, প্লাটিনাম কার্ড ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে ভাগ করা দরকার। ট্যাক্স কার্ডধারীদের সামাজিক ও সরকারি সুবিধা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার বলেও তিনি উল্লেখ করেন।
চেম্বার সভাপতি অভিযোগ করেন, বর্তমানে আট লাখ ৪০ হাজার বিআইএনধারী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এনবিআরের ডেটাবেজে নিবন্ধিত থাকলেও মাত্র ৩০ হাজার রিটার্ন প্রদান করা হয়। এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছ থেকে কর আদায়ে এনবিআর পদ্ধতি সহজ করা দরকার বলেও তিনি মত দেন।
এছাড়া, ভ্যাট প্রদানে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে উৎসাহী করার লক্ষ্যে ট্যাক্স কার্ডের মতো ভ্যাট স্মার্টকার্ড প্রদান, ভ্যাট ফাঁকি রোধ, ভ্যাট প্রদানে জনগণ ও ব্যবসায়ীদের উৎসাহ বাড়ানোর লক্ষ্যে সরকারি খরচে ইলেকট্রনিক ক্যাশ রেজিস্টার (ইসিআর), পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) প্রদান ও বাজেটে বর্ধিত ব্যয়, বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য আগামী দুই বছরের মধ্যে ট্যাক্স-জিডিপি বর্তমান ১০ দশমিক তিন শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন।
ডিসিসিআই সহ-সভাপতি হোসেন এ সিকদার, পরিচালক আসিফ এ চৌধুরী, হোসেন আকতার, হুমায়ুন রশিদ, ইমরান আহমেদ, আতিক-ই-রাব্বানী, রাশেদুল আহসান, মামুন আকবর, মো. আলাউদ্দিন মালিক, রিয়াদ হোসেন ও মহাসচিব এএইচএম রেজাউল কবির এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক: ভ্যাট কমিয়ে ৭% করার প্রস্তাব ডিসিসিআই’র

Add Comment