আন্দোলনে স্থবির রাজস্ব আদায়, এনবিআরের কার্যক্রমে ভাটা’ শীর্ষক যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, সেটিকে কোনোভাবেই ইতিবাচক হিসেবে নেয়ার সুযোগ নেই। তথ্যমতে, বিদায়ী অর্থবছর প্রায় তিন লাখ ৮২ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে। যারা রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও এই বিপুল রাজস্ব আদায় হয়েছে যাদের শ্রম, ঘাম আর মেধায় এ রাজস্ব আদায় হয়েছে, তারাই পদোন্নতি, পদায়ন ও বঞ্চনার শিকার। বর্তমান চেয়ারম্যানের মেয়াদে বেশির ভাগ কর্মকর্তা-কর্মচারী এ বঞ্চনার শিকার হয়েছেন। ফলে তার পদত্যাগের দাবিতে এনবিআরসহ সারাদেশে ভ্যাট কমিশনারেট, কাস্টম হাউস ও কর অঞ্চলে আন্দোলন চলছে। এ আন্দোলনের ফলে রাজস্ব আদায় তো হচ্ছে না, বরং সব কার্যক্রম প্রায় স্থবির হয়ে রয়েছে।
চেয়ারম্যানের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলনে থাকা কর্মীরা সময় বেঁধে দিয়েছেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি পদ না ছাড়লে সারাদেশের কর্মীরা লাগাতার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রাণিকুলের বেঁচে থাকার জন্য যেমন অক্সিজেন প্রয়োজন, তেমনি রাজস্ব ছাড়াও দেশের উন্নয়ন কল্পনা করা যায় না। রাজস্বই রাষ্ট্রের আয়ের প্রধান উৎস। এ অর্থেই রাষ্ট্রের ব্যয় নির্বাহ হয়। তাই রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ওপর গুরুত্ব দিতে হয়। রাজস্ব ঘাটতি যাতে না হয়, সে জন্য সর্বোচ্চ সতর্কতা থাকে। যেহেতু এনবিআর চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কর্মীদের অভিযোগ রয়েছে। তার উচিত দেশের স্বার্থে সসম্মানে পদত্যাগ করা। ব্যবসায়ীরাও এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করেছেন।
ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হওয়ার পেছনে এনবিআর চেয়ারম্যানের দায় আছে বলে তাদের অভিমত। সোমবার এক মতবিনিময় সভায় পোশাক খাতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ও মোড়ক পণ্য প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএপিএমই) নেতারা বলেন, এনবিআরের আমূল সংস্কার করতে হবে; ব্যবসায়ীদের হয়রানি ও অত্যাচার বন্ধে এনবিআর কর্মকর্তাদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ ছাড়া এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়া পিছিয়ে দেয়ার দাবি করেন তারা।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৪-২৫ অর্থবছর এনবিআরকে রাজস্ব আদায় করতে হবে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা, যা বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের আদায়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ ও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৭ শতাংশ বেশি। ১২ মাসে এনবিআরকে আদায় করতে হবে চার লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। সে হিসেবে প্রতি মাসে ৪০ হাজার কোটি এবং প্রতিদিন আদায় করতে হবে প্রায় এক হাজার ৩৩৪ কোটি টাকা। এ হিসেবে চলতি অর্থবছরের প্রথম ৪৪ দিন কী পরিমাণ রাজস্ব আদায় হয়েছে, তা হিসাব করা দরকার। এই ৪৪ দিনের আদায় কম আদায় হওয়ার ঘাটতি পূরণ করতে রাজস্ব আদায়ে বছরের বাকি দিনগুলোয় প্রতিদিন এক হাজার ৩৩৪ কোটি টাকার বেশি আদায় করতে হবে। কর্মীরা পূর্ণোদ্যমে কাজ করতে না পারলে কিংবা না করলে রাজস্ব আহরণ লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সাধারণত অর্থবছরের প্রথম মাস বা জুলাই মাস থেকে আদায়ে পরিকল্পনা করা হয়। বেশির ভাগ অফিস প্রথম মাস থেকে রাজস্ব আদায়ে কঠোর হয়, ফলে আদায় বেশি হন। কিন্তু জুলাইয়ের প্রথম থেকেই কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। সব বিবেচনায় আমদানি-রপ্তানি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে অভিঘাত পড়েছে। এখন এনবিআর চেয়ারম্যানের অপরিণামদর্শিতার কারণে রাজস্ব আদায় কমে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত। তাকে সরিয়ে এনবিআরে অচলাবস্থা দূর করার উদ্যোগ অতি জরুরি হয়ে দাঁড়িয়েছে।