নিজস্ব প্রতিবেদক : আসন্ন বাজেট উপলক্ষে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই’র পরামর্শক কমিটির সভায় নতুন মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট আইন ইস্যুতে উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়েছে অর্থমন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের কার্নিভাল হলে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।
আসন্ন ২০১৭-১৮ অর্থবছরের বাজেট উপলক্ষে এনবিআর-এফবিসিসিআই’র যৌথ উদ্যোগে রাজস্ব বোর্ডের পরামর্শক কমিটির ৩৮তম সভাটি অনুষ্ঠিত হয় গতকাল। এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আয়কর, সম্পূরক শুল্ক, নগদ প্রণোদনাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবসায়ীদের দাবি বিবেচনা করা হবে। এখনও আমাদের হাতে কিছু দিন সময় রয়েছে। তবে ভ্যাট ইস্যুতে ব্যবসায়ীদের বক্তব্যকে তিনি ‘থ্রেট’ বা হুমকি হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, আলোচনার বক্তব্য হয়নি। যুদ্ধের থ্রেট দেওয়া হয়েছে এটা অত্যন্ত ভয়ানক। ব্যবসায়ীরা রাস্তায় আন্দোলনে নামলে তাকে শক্তভাবে দমনও করা হবে।’
এনবিআর চেয়ারম্যান নজিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন এফবিসিসিআই’র সভাপতি আবদুল মাতলুব আহ্মাদ। এ সময় অন্যদের মধ্যে এফবিসিসিআই’র প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের শতাধিক প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ব্যবসায়ীদের মধ্যে এফবিসিসিআই’র সাবেক সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন, কালি প্রস্তুতকারক সমিতির সভাপতি এমএ মোমেন, এফসিএ হুমায়ূন কবির, বেসিসের সভাপতি মোস্তফা জব্বার, আলু রফতানিকারক সেলিনা কাদের, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান, ভোক্তা সংগঠন ক্যাবের চেয়ারম্যান গোলাম রহমান, নারী চেম্বারের সভাপতি সেলিমা আহ্মাদ, নারী উদ্যোক্তা ফেরদৌস আরা বেগম, এফবিসিসিআই’র পরিচালক ও ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের মহাসচিব আবু মোতালেব প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
এ সময় আবু মোতালেব তার বক্তব্যে বলেন, ভ্যাট হ্রাস করার জন্য ব্যবসায়ীরা ১৮ বার সভা করেছে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে। কিন্তু কিছুই হয়নি। প্যাকেজ ভ্যাট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। ডিজিটাল মেশিন স্থাপন করা শুরু করবেন কয়েক দিন পরই। অথচ আমরা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে কোনো প্রশিক্ষণ পাইনি।
তিনি এনবিআর চেয়ারম্যানের প্রতি অভিযোগ তুলে বলেন, আপনি নামেমাত্র সাত-আটজনকে নিয়ে প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আমরা যারা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের নিয়ে কোনো প্রশিক্ষণ না দিলে আমরা কীভাবে ভ্যাট দেব? ভ্যাটের বিষয়ে ব্যবসায়ীদের কোনো বক্তব্য শোনা হচ্ছে না অভিযোগ করে তিনি বলেন, এমন অবস্থা হলে আমাদের রাজপথে নামতে হবে।
এ সময় অর্থমন্ত্রী বলেন, আপনারা মাঠে নামলে কিছুই হবে না। আমরা দমন করার ব্যবস্থা করবো। অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর ব্যবসায়ীদের অনেকেই ক্ষুব্ধ হয়ে হইচই শুরু করেন। এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এ সভায় এভাবে কথা কলা প্রত্যাশিত নয়। যুদ্ধংদেহী মনোভাবে আলোচনা করা যায় না। পরে এফবিসিসিআই’র প্রথম সহ-সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, এখনও যেহেতু বাজেট চূড়ান্ত হয়নি, আমরা শেষ সময় পর্যন্ত দেখতে চাই। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে সরকার রয়েছে, সে সরকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবে না বলেই আমরা আশা করি। তার এ কথা শুনে ব্যবসায়ীরা শান্ত হয়।
সভায় অর্থমন্ত্রী বলেন, এবারের বাজেট উচ্চাভিলাষী। দেশে মানুষের মধ্যে ট্যাক্স দেওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। তাই আমরা উন্নয়নমুখী বাজেট নিচ্ছি। তবে বিভিন্ন বিষয়ে ব্যবসায়ীদের মতামতগুলো আমরা গুরুত্ব দেব।
স্বাগত বক্তব্যে আবদুল মাতলুব আহমাদ বলেন, ‘দেশের রফতানি ও রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি নি¤œমুখী। এ অবস্থায় উচ্চভিলাষী বাজেট প্রণয়ন বা বাস্তবায়নে অতিমাত্রায় রাজস্ব নির্ধারণ হলে অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। বাজেটের আকার সবার সঙ্গে আলোচনাপূর্বক গুণগতমান ও বাস্তবায়ন সক্ষমতার ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করা প্রয়োজন।’ সভায় উপস্থিত দর্শকদের রাজস্ব আদায়ে সচেতনতা বৃদ্ধি সংক্রান্ত নানা বিষয়ে ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়।