এনবিআর ভবন জানুয়ারি থেকে নতুন ভবনে অফিস

রহমত রহমান: সুউচ্চ আর নান্দনিক ভবন। সড়ক থেকে তাকালেই প্রাণ জুড়াবে। প্রবেশ মুখেই রয়েছে সুরম্য একটি খচিত গেট, যা সরকারি ভবনগুলোর মধ্যে প্রথম কোনো গেট। চারপাশে রয়েছে গাছের বাগান। কাচের গেট পেরিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে নান্দনিক ডিজাইন। আধুনিক সুবিধা সংবলিত এ ভবনটি হলো নতুন এনবিআর ভবন। ৩০ বছর অপেক্ষার পর আগারগাঁওয়ে এই ভবনটিতে ১ জানুয়ারি থেকে আনুষ্ঠানিক অফিস শুরু করা হবে। ডিসেম্বরের মধ্যে সব অফিস স্থানান্তর করা হবে। অফিস শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। নতুন এই রাজস্ব ভবনে অফিস স্থানান্তরে কাজ শুরু করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ভবনের সব কাজ শেষ। সংশ্লিষ্ট যেসব দপ্তর এখানে স্থান পাবে, সেসব দপ্তরের কর্মকর্তারা অফিস স্থানান্তরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। লিফট, এসকালেটর বসানো হয়েছে। প্রতিটি রুমের ডিজাইনের কাজ শেষ। সব শেষ ধোয়া-মোছা করা হচ্ছে। অফিস স্থানান্তরে সম্প্রতি এনবিআরে একটি সভা হয়েছে। সভায় ডিসেম্বরে সব অফিস স্থানান্তর ও ১ জানুয়ারি থেকে অফিস করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এনবিআর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ২০ তলার আধুনিক ও নান্দনিক অফিস হবে জাতীয় রাজস্ব ভবন-১। তবে এখন ১২ তলা পর্যন্ত কাজ শেষ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে ২০ তলা করা হবে। এটি কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসহ সর্বাধুনিক পরিবেশবান্ধব ভবন। এ ভবনে যেসব সুবিধা রয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো, কেন্দ্রীয় শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। এছাড়া আটটি লিফট রয়েছে, যার মধ্যে ছয়টি সাধারণ ও দুটি ফায়ার লিফট। রয়েছে ৫১০ আসনের মাল্টিপারপাস হল, রেভিনিউ আর্কাইভ, লাইব্রেরি, রেকর্ডরুম, সেন্ট্রাল ডেটা প্রসেসিং সেন্টার ও সার্ভার স্পেস। কম্পিউটার ল্যাব, ট্রেনিং সেন্টার, কমার্শিয়াল ব্যাংক শাখা, এটিএম, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, স্টেশনারি শপ, বার লাউঞ্জ, প্রতি তলায় গ্রিন স্পেস ও স্মোকিং জোন রয়েছে। সুবিধার মধ্যে আরও রয়েছেÑসার্বক্ষণিক জেনারেটর সুবিধা, বিল্ডিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, অ্যাকসেস কন্ট্রোল সিকিউরিটি সিস্টেম, প্রতিবন্ধী ও সিনিয়র সিটিজেনদের প্রবেশ, নির্গমন ও চলাচলের ব্যবস্থা, জরুরি অবস্থায় প্রাকৃতিক বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা, ক্যাফেটেরিয়া, কল সেন্টার, ডে-কেয়ার সেন্টার, মিডিয়া সেন্টার, পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক প্রার্থনা কক্ষ, প্রতি ফ্লোরে পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক টয়লেটর জোন প্রভৃতি।

কর্মকর্তারা আরও জানিয়েছেন, ভবনের নিচতলা ও দ্বিতীয় তলায় থাকবে সেবাকেন্দ্র, ব্যাংক, পোস্ট অফিস, কুরিয়ার সার্ভিস, কল সেন্টার, বার লাউঞ্জ, ক্যাফেটেরিয়া, পুরুষ ও মহিলাদের পৃথক প্রার্থনা কক্ষ, রেকর্ডরুম ও স্টেশনারি শপ। দ্বিতীয় তলায় ওঠার জন্য রয়েছে চলন্ত সিঁড়ি। তৃতীয় তলায় থাকবে মাল্টিপারপাস হল, এনবিআরের গবেষণা ও পরিসংখ্যান শাখা, ডে-কেয়ার সেন্টার, লাইব্রেরি ও রেভিনিউ আর্কাইভ। চতুর্থ তলায় অর্থমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীর চেম্বার, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি) এবং এনবিআরের ছয় সদস্যের দপ্তর থাকবে। পঞ্চম তলায় থাকবে চেয়ারম্যান ও ১২ সদস্যের দপ্তর। ষষ্ঠ তলায় থাকবে বোর্ড প্রশাসন, সব প্রথম সচিব ও কিছু সংখ্যক দ্বিতীয় সচিবের দপ্তর। সপ্তম তলাজুড়ে থাকবে দ্বিতীয় সচিবদের দপ্তর। অষ্টম তলায় কর পরিদর্শন পরিদপ্তর ও এনবিআরের আইসিটি শাখা থাকবে। নবম তলায় বৃহৎ করদাতা ইউনিট (আয়কর ও ভ্যাট) থাকবে। ১০ম তলায় আয়কর আপিলাত ট্রাইব্যুনাল, ১১তম তলায় ভ্যাট আপিলাত ট্রাইব্যুনাল ও কেন্দ্রীয় জরিপ অঞ্চল থাকবে। ১২তম তলায় আয়কর ও ভ্যাট আপিল দপ্তর থাকবে। দুটি বেজমেন্টে ২৪৬টি কার ও ১৭২টি মোটরসাইকেলের পার্কিং সুবিধা থাকবে।

প্রকল্প সূত্র জানায়, ১৯৯২ সালের ২০ এপ্রিল আগারগাঁওয়ে তিন একর জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। পরে জটিলতায় কাজ শুরু হয়নি। ২০০৮ সালের ২৪ নভেম্বর একনেক বৈঠকে ‘জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ভবন নির্মাণ’ প্রকল্প অনুমোদন দেয়া হয়। ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ তলা ভিত্তির ওপর ১২ তলা ভবন নির্মাণ করার কথা ছিল। শুরুতেই জমি অধিগ্রহণ ও দখল-সংক্রান্ত জটিলতায় ২০১৪ সাল পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখতে হয়। শুরু হয় আইনি লড়াই। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ আদালতের নির্দেশে জমির দখল নেয় এনবিআর। ২০১৫ সালে ২০ আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২০ তলার স্থলে ৩০ তলা ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী কাজ শুরু হয়। ২০১৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি একনেক সভায় প্রকল্পের সংশোধিত ব্যয় ১৪১ কোটি ৩৬ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪৯৫ কোটি ১৮ লাখ টাকা করা হয়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০