Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 3:47 pm

এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম ১০ শতাংশ কমেছে

শেয়ার বিজ ডেস্ক: বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতি নিয়ে চলমান উদ্বেগের মধ্যেই গত বুধবার এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে পতনের পর ব্রিটেনের পুঁজিবাজারেও মূল্য সূচকের মান কমেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) নিয়ে প্রচারণা কমে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের চিপ জায়ান্ট এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম প্রায় ১০ শতাংশ কমে গেছে। খবর: বিবিসি।

এনভিডিয়ার উৎপাদনও কমেছে। তবে পতন সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারগুলো এখনও এক বছর আগের দ্বিগুণ মূল্যের সমান রয়েছে। লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জে বৃহত্তম সংস্থাগুলো নিয়ে গঠিত ফিনান্সিয়াল টাইমস স্টক এক্সচেঞ্জ (এফটিএসই) ১০০ সূচকের প্রারম্ভিক ট্রেডিংয়ে শন্য দশমিক ০৭৬ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া প্রধান ইউরোপিয়ান সূচকগুলোও হ্রাস পেয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ আগামী সপ্তাহে নীতি সুদহার নির্ধারণের জন্য বৈঠক করার সময় কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাবে সেটি দেখার অপেক্ষায় বাজার পর্যবেক্ষকরা।

এফটিএসইএর রাসেল গ্রুপের জুলিয়া লি বলেন, বাজারের গতিবিধিতে প্রবৃদ্ধির উদ্বেগ প্রাধান্য পাচ্ছে। নিউইয়র্কে এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২ শতাংশের বেশি হ্রাস পেয়েছে। অন্যদিকে, নাসডাক সূচকের মান কমেছে ৩ শতাংশের বেশি। নাসডাকে তালিকাভুক্ত এনভিডিয়ার দর ৯ দশমিক ৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর শেয়ারের দাম ২৭৯ বিলিয়ন ডলার হ্রাস পেয়েছে। আলফাবেট, অ্যাপল এবং মাইক্রোসফটের মতো অন্যান্য টেক জায়ান্টদের শেয়ারেও পতন হয়েছে। বুধবার সকালে জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক কমেছে ৪ দশমিক ৪ শতাংশ। দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি সূচক ৩ শতাংশ এবং হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক কমেছে ১ দশমিক ৩ শতাংশ। টিএসএমসি, স্যামসাং ইলেকট্রনিকস, এসকে হাইনিক্স এবং টোকিও ইলেক্ট্রনের মতো প্রধান এশীয় প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর শেয়ারের দামও হ্রাস পেয়েছে।

জুলিয়া লি বলেন, বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে উদ্বেগ এ অঞ্চলের রফতানিকারক দেশগুলোর জন্য একটি ধাক্কা। লন্ডনের আর্টেমিস ইনভেস্টমেন্ট ম্যানেজমেন্টের তহবিল ব্যবস্থাপক শ্বেতা রামচন্দ্রন বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারে শেয়ারের পতন নিয়ে বিনিয়োগকারীরা আশঙ্কা করছেন ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হারে বড় ধরনের কাটছাঁট করবে। তিনি বিবিসিকে বলেন, এনভিডিয়ার এই পতন এআই জায়ান্টটির জন্য প্রত্যাশার বিপরীতে কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার মতো। চ্যাটজিপিটি চালু হওয়ার ফলে এআইয়ের প্রতি আগ্রহের কারণে ২০২২ সালে এনভিডিয়ার চিপের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। তবে এনভিডিয়ার গত সপ্তাহের প্রতিবেদনে কোম্পানির প্রবৃদ্ধির বিপরীতে প্রত্যাশিত মন্দার ইঙ্গিত দেখা গেছে ।

এর আগে বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানি হওয়ার পরপর এনভিডিয়ার শেয়ার ছেড়ে দিতে শুরু করেছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এর জেরে গত জুনে শীর্ষস্থান হারায় তারা। তিন দিন ধরে শেয়ারের দাম কমার কারণে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক তৈরি হয়েছিল। সেটা হলো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিপ্লবে এনভিডিয়া কোম্পানি যে নেতৃত্বস্থানীয় আসনে ছিল, সেই জায়গা তারা হারাতে বসেছে কি না। গত ১৮ জুন এনভিডিয়ার বাজার মূলধন ৩ লাখ ৩৪ হাজার কোটি ডলারে উঠে যায়, এর মধ্য দিয়ে মাইক্রোসফটকে হটিয়ে এটি বিশ্বের সবচেয়ে দামি কোম্পানিতে পরিণত হয়। কিন্তু পরের তিন দিন শেয়ারের দাম কমায় এনভিডিয়ার বাজার মূলধন ৪৩০ বিলিয়ন বা ৪৩ হাজার কোটি ডলার কমে যায়। বিশ্লেষকেরা বলছেন, এনভিডিয়ার ক্ষেত্রে যা দেখা যাচ্ছে, তা হলো রীতিমাফিক উত্থান-পতন। যে কোম্পানির শেয়ারের দাম দ্রুত বাড়ে, সেই কোম্পানির শেয়ারের দাম আবার হঠাৎ কমেও যায়।

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ওয়াল স্ট্রিটে এনভিডিয়ার শেয়ারের দামে রীতিমতো উল্লম্ফন হয়েছে। সেই থেকে এই কোম্পানির শেয়ারের দাম বেড়েছে ১৬১ শতাংশ। তারা মূলত এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় প্রয়োজনীয় চিপ সরবরাহ করে; জেনারেটিভ এআইয়ের চিপও তারা সরবরাহ করে। যে চ্যাটজিপিটির কার্যক্ষমতা দেখে মানুষের তাক লেগে যাচ্ছে, সেই চ্যাটজিপিটির শক্তি জোগাচ্ছে এনভিডিয়ার চিপ। এনভিডিয়ার প্রসেসরের মান অন্যান্য কোম্পানির চেয়ে ভালো। সে জন্য তারা প্রসেসর সরবরাহ করে কুলিয়ে উঠতে পারছে না। অনেক বিনিয়োগকারী মনে করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জগতে যে প্রতিযোগিতা চলছে, তা থেকে সবচেয়ে লাভবান হচ্ছে এনভিডিয়া।