স্ট্রোক সম্পূর্ণই মস্তিষ্কের রক্তনালির জটিলতাজনিত রোগ। অনেক ক্ষেত্রে সচেতনতার অভাবেই এই রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আমাদের দেশে এখন ১৫ থেকে ২০ লাখ স্ট্রোকের রোগী রয়েছে। প্রতি হাজারে গড়ে তিন থেকে পাঁচজন স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। সাধারণত পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিদের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্তের হার বেশি লক্ষ করা গেলেও যে কোনো বয়সেই তা হতে পারে। এনসেফালাইটিস হলো মস্তিষ্কের প্রদাহ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভাইরাসের সংক্রমণে এটি হয়। এনসেফালাইটিসের সবচেয়ে বড় কারণ হারপিস ভাইরাস। কুকুরের কামড়ে র্যাবিস হলে, কিংবা জলবসন্তের কারণেও হতে পারে। আমাদের দেশে খেজুরের রস পান করার কারণে নিপাহ ভাইরাসের সংক্রমণ হতে দেখা যায়। এটি থেকেও এনসেফালাইটিস হতে পারে। এইডস রোগের ভাইরাস মস্তিষ্কে ছড়িয়েও এইচআইভি এনসেফালাইটিস হতে পারে। হঠাৎ অস্বাভাবিক আচরণ, জ্বর, মাথাব্যথা, খিঁচুনি, অচেতন হয়ে পড়া, কথা জড়িয়ে যাওয়া, হাত-পা অবশ হয়ে যাওয়া প্রভৃতি এনসেফালাইটিসের লক্ষণ।
মস্তিষ্কের এমআরআই পরীক্ষা প্রাথমিকভাবে এ রোগের ধারণা দিতে পারে। তবে মেরুদণ্ডের সিএসএফ পরীক্ষার মাধ্যমে এনসেফালাইটিস রোগ নিশ্চিতভাবে নির্ণয় করা যায়। হারপিস ভাইরাসে মস্তিষ্ক আক্রান্ত হলে ইইজি পরীক্ষার মাধ্যমে তা ধারণা করা যায়। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে এইচআইভি পরীক্ষা করা যেতে পারে।
কোনো রোগীর এনসেফালাইটিস রোগের লক্ষণ দেখা দেয়া মাত্রই দেরি না করে হাসপাতালে ভর্তি করা উচিত। বিশেষ করে জ্বরের পর কারও অচেতন অবস্থা, অসংলগ্ন আচরণ বা খিঁচুনি হলে দেরি না করে হাসপাতালে নিতে হবে। প্রয়োজনীয় পরীক্ষার শেষে অ্যান্টিভাইরাল ইনজেকশন এ রোগের চিকিৎসায় খুবই কার্যকর। এ রোগে খিঁচুনির ওষুধ দীর্ঘ মেয়াদে সেবন করা লাগতে পারে।
হাসপাতাল ছাড়ার পরও এ রোগের কিছু সমস্যা থেকে যেতে পারে। খিঁচুনি, পারকিনসন রোগ, মেধা কমে যাওয়া ও হাত-পায়ে দুর্বলতা প্রভৃতি সমস্যা নিয়ে এনসেফালাইটিস রোগী দীর্ঘদিন ভুগতে পারে। এর জন্য দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে। হাত-পায়ের দুর্বলতা ও পারকিনসনিজমের জন্য ব্যায়াম ও ফিজিওথেরাপি খুব ভালো ভূমিকা রাখে।
ডা. নাজমুল হক
সহকারী অধ্যাপক, নিউরোলজি
মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা