নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশ ব্যাংকের চুরি যাওয়া রিজার্ভের অবশিষ্ট অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে আগামী মাসে মামলা করা হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ফৌজদারি আইনে এই মামলা করা হবে। এ লক্ষ্যে প্রয়োজনীয়
তথ্য-উপাত্তসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য গোয়েন্দা সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
গতকাল রোববার সচিবালয়ে এ-সংক্রান্ত এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠকে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে এক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘সভায় চুরি যাওয়া রিজার্ভের অর্থ ফেরত আনতে মামলার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমরা আগামী এপ্রিলেই অর্থ উদ্ধারে মামলা করতে চাই। নিউইয়র্কের আদালতে এ মামলা করা হবে। এ জন্য সিআইডিকে তাড়াতাড়ি প্রয়োজনীয় রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।’
রিজার্ভের অবশিষ্ট অর্থ উদ্ধারে ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে মামলা দায়েরের বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন। একই দিন বাংলাদেশ ব্যাংকও বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে।
এদিকে বৈঠক সূত্রে জানা যায়, এপ্রিলের মধ্যে এ-সংক্রান্ত রিপোর্ট সিআইডির পক্ষে দেওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। তবে এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে ফৌজদারি মামলা করার জন্য ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় পাবে বাংলাদেশ।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ মামলায় যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংককে আমরা সহযোগী পার্টি করতে চাই।’
ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক কি পার্টি হতে রাজি হয়েছেÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও রাজি হয়নি। তবে এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর যোগাযোগ করছেন।’
মামলা দায়েরের জন্য কোনো ল ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কি নাÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখনও নিয়োগ দেয়া হয়নি। তবে আমেরিকার একটি ফার্মকে নিয়োগ দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।’
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে (নিউইয়র্ক ফেড) রক্ষিত বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের হিসাব থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার চুরির ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে আট কোটি ১০ লাখ ডলার ফিলিপাইনের আরসিবিসি’র চারটি অ্যাকাউন্টে আর অবশিষ্ট দুই কোটি ডলার চলে যায় শ্রীলঙ্কায়। ব্যাংকটির মাধ্যমে স্থানীয় মুদ্রায় বদলে ফিলিপাইনের ক্যাসিনোতে (জুয়া খেলার জায়গা) চলে যায় বেশিরভাগ অর্থ। হ্যাকাররা একটি বানান ভুল করায় দুই কোটি ডলার শ্রীলঙ্কায় পাঠানোর চেষ্টা ব্যর্থ হয়। পরে ফিলিপাইনের সিনেট শুনানির মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক এক কোটি ৫২ লাখ ডলার ফেরত আনতে সক্ষম হয়। সুইফট পেমেন্ট সিস্টেম ব্যবহার করে এই অর্থ চুরির পর ম্যানিলাভিত্তিক রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানোর পরে ফিলিপাইনের ক্যাসিনো ইন্ডাস্ট্রিতে সেই অর্থ বিলীন হয়ে যায়। এরপর দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এই ঘটনা কারা ঘটিয়েছে তা এখনও জানা যায়নি। উত্তর কোরিয়া-সংশ্লিষ্ট ল্যাজারাস হ্যাকার গ্রুপ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির সঙ্গে রয়েছে বলে মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন। তারা বলেছেন, এই বিষয়ে পিয়ংইয়ংয়ের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। তবে এখনো কোনো মামলা দায়ের করা হয়নি। রিজার্ভ চুরির বিষয়ে আরসিবিসি’র সর্বশেষ বক্তব্য হচ্ছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের গাফিলতির কারণে এই চুরির ঘটনা ঘটেছে, তাই তারা কোনো ক্ষতিপূরণ দেবে না। চুরির অর্থ তাদের ব্যাংক থেকে বের হয়ে যাওয়ায় আরসিবিসিকে গত বছর দুই কোটি মার্কিন ডলার জরিমানা করে ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এদিকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় সাবেক গভর্নর ড. ফরাস উদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন এখনও প্রকাশ করেনি সরকার।