আইন পাসের দেড় বছর পর এখনও ‘ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল’ (এফআরসি) গঠন হয়নি। এর চেয়ারম্যান নিয়োগের প্রক্রিয়াও থমকে রয়েছে বলে যে খবর প্রকাশ হয়েছে গতকালের শেয়ার বিজে, তা আমাদের চিন্তিত না করে পারে না। খেয়াল করা দরকার, ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত হয়েছিল ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্টের গেজেট। ওই আইনের ধারায় বলা হয় এফআরসি গঠনের কথা। সেখানে কাউন্সিলটির কার্যপরিধি সম্পর্কেও উল্লেখ রয়েছে বিস্তারিতভাবে। বলা হয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকাউন্টিং স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড (আইএএসবি), ইন্টারন্যাশনাল অডিটিং অ্যান্ড অ্যাসুরেন্স স্ট্যান্ডার্ডস বোর্ড (আইএএএসবি) বা এ-সংক্রান্ত অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা প্রণীত আন্তর্জাতিকভাবে গ্রহণযোগ্য মানসম্পন্ন স্ট্যান্ডার্ডস প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ, অডিটিং স্ট্যান্ডার্ডসের কার্যকর প্রতিপালন, পরিপালন, পরিবীক্ষণ ও প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ, আর্থিক প্রতিবেদন, হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দরকারি বিধি, প্রবিধি, স্ট্যান্ডার্ডস গাইডলাইন, কোড প্রণয়ন ও তার প্রয়োগ নিশ্চিতকরণে কাজ করবে কাউন্সিলটি। এ কার্যপরিধি ও লক্ষ্যবস্তু অবলোকনপূর্বক দ্রুত কাউন্সিল গঠনের তাগাদা দেওয়ার কথা যে কোনো সচেতন মানুষের। আরও আছে। কাউন্সিলের অন্যান্য কর্মের ব্যাপারে বলা হয়েছে, পেশাগত আচরণের উচ্চমান বজায় রাখার লক্ষ্যে নিরীক্ষকদের নিরীক্ষা চর্চা ও অনুশীলন পরিবীক্ষণ, হিসাবরক্ষণ ও নিরীক্ষা বিষয়ে পরামর্শ, কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার হিসেবে তথ্যগত সেবা প্রদান, নিরীক্ষকদের তালিকাভুক্তকরণ এবং এ-সংক্রান্ত তথ্য রেজিস্টারে সংরক্ষণ ও প্রকাশ, অন্য কোনো আইনের অধীন নির্ধারিত রিপোর্টিং চাহিদার প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ প্রভৃতিও কাউন্সিলের এখতিয়ারভুক্ত। বলার অপেক্ষা রাখে না, হিসাবরক্ষক ও নিরীক্ষা পেশার পেশাগত ও নৈতিক মান উন্নয়নের পাশাপাশি হিসাবরক্ষণ নিরীক্ষা সেবার গুণগত মান নিশ্চিত করার সদিচ্ছা থেকেই গৃহীত হয়েছিল এফআরসি গঠনের সিদ্ধান্ত। পরিকল্পনা হিসেবে বিষয়টি আদর্শ, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ নেই। কথা হচ্ছে, যতক্ষণ না কাউন্সিলটি কার্যকর হচ্ছে, ততক্ষণ কোন ভরসায় এর ওপর আস্থা রাখবে জনগণ? এ অবস্থায় নীতিনির্ধারকরা অবিলম্বে কাউন্সিলটি গঠনে যত্ন বান হোন এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
আমাদের প্রতিনিধির কাছে ‘দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ’-এর প্রেসিডেন্ট আদিব হোসেন খান এফসিএ মন্তব্য করেছেন, ‘এ কাউন্সিল বাস্তবায়ন হলে আর্থিক খাতের জবাবদিহিতা বাড়বে।’ এর সঙ্গে দ্বিমত পোষণ কঠিন। বিশেষত একশ্রেণির প্রতিষ্ঠানের সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডে কাজটি দুরূহ হয়ে পড়ছে দ্রুত। আর ওইসব সন্দেহজনক কর্মকাণ্ডের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ রোষানলে পড়েননি, এমন কেউ রয়েছে বলে মনে হয় না। ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত একশ্রেণির কোম্পানি নিরীক্ষার জন্য একধরনের হিসাব তৈরি করে আর বিনিয়োগকারীদের দেখায় আরেক হিসাব। এতে করে বিভ্রান্ত বিনিয়োগকারীরা নিতে পারেন না সঠিক সিদ্ধান্ত। অনেক সময় ইচ্ছাকৃতভাবে হিসাবের মারপ্যাঁচে পর্যায়ক্রমে বা ক্রমাগত প্রতারণা করা হয় গ্রাহকের সঙ্গে। এর প্রতিফলনই সম্ভবত হঠাৎ হঠাৎ ‘এ’ ক্যাটাগরির কোম্পানির ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে পতন! বিনিয়োগকারীদের কল্যাণার্থেও তাই দ্রুত এফআরসি গঠন হওয়া দরকার। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, কোন কোম্পানি গ্রাহকের জন্য কী চার্জ নির্ধারণ করছে এবং সরকারকে কতটা রাজস্ব দিচ্ছে, সেটি নিশ্চিত করতেও আলোচ্য কাউন্সিল কার্যকর করা জরুরি। অনেক সময় একশ্রেণির নিরীক্ষক ও হিসাবরক্ষকের পেশাগত দক্ষতায় ঘাটতিরও পরিচয় মেলে। সেজন্যও হয়রান হয় মানুষজন। সবচেয়ে বড় কথা, ফাইন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং অ্যাক্ট বাস্তবায়নের জন্যও তা দরকার। এমন পরিস্থিতিতে সরকার দ্রুত কাউন্সিল গঠনপূর্বক আইনটি বাস্তবায়নে মনোযোগ দেবে এটাই কাম্য।