এফবিসিসিআই ও ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের মধ্যে চুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের উন্নয়নের পথযাত্রায় অংশীদার হতে আগ্রহী যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা। গত সোমবার সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে এফবিসিসিআই ও ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল আয়োজিত ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস সামিটে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন তারা।

ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চপর্যায়ের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের সদস্যরা এ সম্মেলনে অংশ নেন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের সুবর্ণ সময় চলছে। এ সুযোগকে কাজে লাগাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান মন্ত্রী।

ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ঢাকা-চট্টগ্রাম হাই স্পিড ট্রেন, সমুদ্র অর্থনীতি, হাইটেক পার্ক এবং দেশজুড়ে ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কারণে বাংলাদেশকে পরবর্তী বিনিয়োগ গন্তব্য হিসেবে বেছে নেয়ার জন্য আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি। তিনি জানান, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কর অব্যাহতি, ডিউটি ড্র ব্যাকসহ নানা সুবিধা দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের সফররত উদ্যোক্তাদের নবায়নযোগ্য জ্বালানি, গ্যাস অনুসন্ধান, এলএনজি টার্মিনাল, ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো ওয়্যারহাউস অ্যান্ড কোল্ড চেইন, এভিয়েশন, শিপিং ও বন্দর, অটোমোবাইল, হোটেল ও হসপিটালিটি, ব্যাংক ও ইন্স্যুরেন্স, শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ এবং ম্যান মেড ফাইবার খাতে বিনিয়োগের আহŸান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।

অনুষ্ঠানে শেভরনের বিজনেস ডেভেলপমেন্ট বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের মিশন লিড জে আর প্রায়র বলেন, বাংলাদেশ অসাধারণ অর্থনৈতিক অগ্রগতি অর্জন করেছে। খুব বেশি দেশ শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা দিতে পারেনি। বাংলাদেশ এই সাফল্য অর্জন করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর দক্ষতা ও সক্ষমতা রয়েছে। বাংলাদেশের ভিশন ২০৪১ অর্জনে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা দুদেশের সহযোগিতার সম্পর্ক দৃঢ় করতে আগ্রহী। তিনি জানান, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীরা খুবই আশাবাদী। সে কারণেই প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে এসেছেন।

ইউএস বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালক সিদ্ধান্ত মেহরা বলেন, বাণিজ্য প্রতিনিধিদল যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনা তুলে ধরবে।

উম্মুক্ত আলোচনায় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, দুদেশের বাণিজ্য ৯ বিলিয়ন ডলার, যা সম্ভাবনার তুলনায় কম। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে প্রতিনিধিদল কার্যকর ভ‚মিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদের সব ধরনের সহায়তা দেয়ার জন্য বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানান তিনি।

সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, বাংলাদেশের হালকা প্রকৌশল, ইলেকট্রিক্যাল কম্পোনেন্টস আইওটি ও স্বাস্থ্য খাতে যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগের ভালো সুযোগ রয়েছে।

এফবিসিসিআইয়ের সহ-সভাপতি এমএ মোমেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি সিইপিএ চুক্তি সইয়ের জন্য দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরুর আহ্বান জানান।

ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমান বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি হস্তান্তরের আহŸান জানান। তিনি বলেন, বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ একটি আদর্শ দেশ। বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের সুবিধা নিতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোক্তারা।

ফিকির সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় জানান, বাংলাদেশে যেসব বিদেশি কোম্পানি রয়েছে, প্রত্যেকেই খুব মুনাফা করছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিনিয়োগকারীদেরও এ সুযোগ নেয়া উচিত।

অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্যের দাম তুলনামূলকভাবে কম বলে জানান বেসিসের সভাপতি রাসেল টি আহমেদ। যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য আমদানির আহŸান জানান তিনি।

বেক্সিমকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল হাসান জানান, বাংলাদেশের ইউইসএ সার্টিফাইড অনেকগুলো ফার্মেসি প্লান্ট রয়েছে। এ দেশের ওষুধ কারখানাগুলো বিশ্বমানের যন্ত্র দিয়ে সজ্জিত। এছাড়া এ দেশের শ্রমশক্তিও তুলনামূলকভাবে স্বস্তা। তাই যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ কোম্পানির বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ সবচেয়ে আদর্শ গন্তব্য।

এসময় তুলা আমদানিতে ফিউমিগেশন পদ্ধতি বাতিলের আহ্বান জানান বিটিএমএ সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন। অনুষ্ঠানে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়াতে এফবিসিসিআই ও ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের মধ্যে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলে আরও ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড হেড অব গভর্নমেন্ট এঙ্গেজমেন্ট এশিয়া প্যাসিফিক জেরেমি জি স্টুরসিও, জেনারেল ইলেকট্রিক সাউথ এশিয়ার প্রেসিডেন্ট মহেশ পালাশিকার, মাস্টারকার্ডের গ্লোবাল পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ইন্দো-প্যাসিফিক পলিসি অপারেশনসের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট রাভি অরোরা, মেটলাইফের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এলেনা বুটারোভা, ইউএস সয়বিন এস্কপোর্ট কাউন্সিলের হেড অব সাউথ এশিয়া কেভিন রোপকে, এক্সেলেরেট এনার্জির প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা ডেনিয়েল বুস্টোস, এশিয়া প্যাসিফিকের ভাইস প্রেসিডেন্ট অব পাবলিক পলিসি সাইমন মিলনার, এবিবিওটিটির গেøাবাল গভর্নমেন্ট অ্যাফেয়ার্স সাউথ এশিয়ার পরিচালক রানজিতা সুউদ প্রমুখ।

ইউএস চেম্বার অব কমার্সের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের পরিচালক সিধান্ত মেহরা, সাউথ এশিয়ার হেড অব ডিজিটাল ইকোনমি জয় গুল্লিশ, সাউথ এশিয়ার অপারেশনস লিড জাহানভি ও হেল্থ কেয়ার সাউথ এশিয়ার সিনিয়র পরিচালক অগ্নিদীপ মুখার্জী। ইউএসএ বাংলাদেশ মিশন থেকে ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর মো. সেলিম রেজা ও লস এঞ্জলস্থ বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর খুরশিদ আলম উপস্থিত ছিলেন।

বিজনেস সামিটে বাংলাদেশের পক্ষে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মোস্তফা আজাদ চৌধুরী বাবু, ভাইস প্রেসিডেন্ট এমএ মোমেন, মো. আমিনুল হক শামীম, মো. আমিন হেলালী, সালাহউদ্দীন আলমগীর, এমএ রাজ্জাক খান রাজ, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট মাহবুবুল আলম, পরিচালক প্রকৌশলী গোলাম মোহাম্মেদ আলমগীর, আবুল কাসেম খান, শমি কায়সার, বাজুসের সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর, বাংলাদেশ এনার্জি কোম্পনি অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আজম জে চৌধুরী, বাংলাদেশ কটন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ আইয়ুব, বিএবির চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার, এবিবির সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ মাহবুবুর রহমানসহ আরও অনেকে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০