নিজস্ব প্রতিবেদক
নকশা জালিয়াতির মামলায় বনানীর এফ আর টাওয়ারের অন্যতম মালিক এসএমএইচআই ফারুকসহ তিন আসামির জামিন বাতিল করে দিয়েছেন হাইকোর্ট। অন্য দুজন হলেনÑরাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) সাবেক ইমারত পরিদর্শক আওরঙ্গজেব সিদ্দিকী (নান্নু) ও শওকত আলী। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার সাতদিনের মধ্যে তাদের বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
গতকাল দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনে বিচারপতি নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কেএম হাফিজুল আলমের বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেন। আদালতে দুদকের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খুরশিদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একেএম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।
খুরশীদ সাংবাদিকদের বলেন, বনানীর এফআর টাওয়ার-সংক্রান্ত দুদকের মামলায় এই তিন আসামির সঙ্গে অন্য মালিক বিএনপির নেতা তাসভীর উল ইসলামের জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করা হয়। আদালত তাসভীরের জামিন বাতিলের আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন।
বাকিদের জামিন কেন বাতিল করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারির পাশাপাশি তাদের জামিন বাতিলে অন্তর্বর্তী আদেশ দেন। আদেশের অনুলিপি পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে বিজ্ঞ বিচারিক আদালতে তাদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে। মামলাটিতে ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হবে বলে তিনি জানান।
আসামিরা ১৯ আগস্ট থেকে ৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ভিন্ন দিনে ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ কেএম ইমরুল কায়েশের আদালত থেকে জামিন নেন। গত ২৮ মার্চ এফ আর টাওয়ারে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জন নিহত হওয়ার পর এই ভবন নির্মাণে নানা অনিয়মের বিষয়গুলো বেরিয়ে আসতে থাকে।
কামাল আতাতুর্ক এভিনিউয়ে ওই ভবনের জমির মূল মালিক ছিলেন প্রকৌশলী এসএমএইচআই ফারুক। অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ভবনটি নির্মাণ করে রূপায়ণ হাউজিং এস্টেট লিমিটেড। সে কারণে সংক্ষেপে ভবনের নাম হয় এফ আর টাওয়ার। নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ভবনটিতে কয়েকটি তলা বাড়ানোর অভিযোগে গত ২৫ জুন তাসভীরসহ ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেন দুদক কর্মকর্তা মো. আবুবকর সিদ্দিক।
একটি মামলায় রাজউকের ভুয়া ছাড়পত্রের মাধ্যমে এফ আর টাওয়ারকে ১৯ তলা থেকে বাড়িয়ে ২৩ তলা করা, উপরের ফ্লোরগুলো বন্ধক দেওয়া ও বিক্রি করার অভিযোগে ২০ জনকে আসামি করা হয়।
অন্য মামলাটি করা হয় এফ আর টাওয়ারের ১৫ তলা পর্যন্ত নির্মাণের ক্ষেত্রে ইমারত বিধিমালা লঙ্ঘন এবং নকশা জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ তলা পর্যন্ত বাড়ানোর অভিযোগে। ফারুক ও নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের মালিক রূপায়ণ গ্রুপের চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী খান মুকুল দুই মামলারই আসামি।
উল্লেখ্য, ১৯৯০ সালে ১৫ তলা ভবন নির্মাণের জন্য রাজউক থেকে অনুমতি নেয় এফ আর টাওয়ার কর্তৃপক্ষ। পরে ১৯৯৬ সালে অবৈধভাবে ওই ভবন ১৮ তলা করার অনুমোদন দেয় রাজউক। এফ আর টাওয়ার পরে ২০০৩ সালে রূপায়ণ হাউজিং লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে। সেই চুক্তি অনুযায়ী নির্মিত হয় ১৮ তলা ভবন। একই বছর রূপায়ণের সঙ্গে সম্পূরক চুক্তি করে এফ আর টাওয়ার। সেখানে ভবনটি ২৩ তলায় উন্নীত করতে সম্মত হয় দুই পক্ষ।
এজাহারে বলা হয়েছে, দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজের জন্য রাজউকের এস্টেট শাখা থেকে কোনো দরপত্র দেওয়া হয়নি। কোনো ধরনের নকশা বা বিলও অনুমোদন করা হয়নি।
এর আগে এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পুলিশের করা মামলাতেও ফারুককে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে সময় পুলিশ তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করেছিল। পরে তিনি ওই মামলায় জামিনে মুক্তি পান।