Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:24 pm

এবারও ঈদে উত্তরের মহাসড়কে যানজটের শঙ্কা!

এনায়েত করিম বিজয়, টাঙ্গাইল: ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক দিয়ে প্রতিদিন উত্তরবঙ্গসহ ২৬ জেলায় হাজারো যানবাহন চলাচল করে। রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সড়ক পথে উত্তরবঙ্গের একমাত্র যোগাযোগ মাধ্যম এ সড়কটি। প্রতি বছর ঈদের সময় যানবাহনের চাপে এ মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় এবারও ঈদযাত্রায় যানজটের শঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি সোমবার গোড়াই ও নকলা সেতুর এক লেন যানবাহন চলাচলের জন্য উš§ুক্ত করে দেয়া হয়েছে। তারপরও থেকে যাচ্ছে যানজটের সংশয়।
জানা যায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় থেকে চান্দাইকোনা পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে সড়ক প্রশস্তের কাজ। সিরাজগঞ্জের ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুর পাশে নতুন করে আরেকটি সেতু তৈরি কাজও চলমান রয়েছে। এ ঝুঁকিপূর্ণ সেতুটিই দিয়ে এখনও যানবাহন চলাচল করছে, খুব ধীরগতিতে। এজন্য গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে এ ঝুঁকিপূর্ণ নলকা সেতুটি। সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ ছাড়াও ঝিনাইগাতি লিংকরোড, সয়েদাবাদ, মুলিবাড়ী, কড্ডা, ভূইয়াগাতি ও চান্দাইকোনা লিংকরোডসহ কয়েকটি এলাকার লিংক রোডের কারণেও ঈদযাত্রায় কিছুটা যানজটের সৃষ্টি হয়।
এদিকে, গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে কালিহাতীর এলেঙ্গা পর্যন্ত চার লেন চালু করা হয়েছে। এতে চন্দ্রা থেকে এলেঙ্গা পর্যন্ত খুব সহজেই যানবাহন যাতায়াত করতে পারছে। আর এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড় পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার সড়ক এখনও দুই লেনে রয়েছে। আর এ দুই লেন সড়কের দুই পাশের বিভিন্ন জায়গায় খানাখন্দ ও কয়েকটি জায়গায় লিংক রোডের কারণে সেতুর পূর্বপাড়েও যানবাহনের জটের সৃষ্টি হয়। এছাড়া ঈদযাত্রায় সড়ক দুর্ঘটনার কারণেও কিছুটা জটের সৃষ্টি হয়। সব মিলিয়ে সিরাজগঞ্জের কারণেই মূলত টাঙ্গাইল অংশে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে বলে যানবাহন চালক ও সাধারণ যাত্রীদের ধারণা।
জানা যায়, প্রতিদিন এই মহাসড়কে গড়ে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার যানবাহন চলাচল করে। আর ঈদের সময় ঘরমুখো যাত্রীদের চাপে যানবাহনের সেই সংখ্যা ৫-৬ গুণবৃদ্ধি পায়। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুতে টোল আদায়ের ধীরগতির কারণেও যানজটের সৃষ্টি হয়ে থাকে। তবে যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা পুলিশ।
চালক ও ভুক্তভোগীরা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা যানবাহনগুলো চার লেন সুবিধা নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে এলেঙ্গা পর্যন্ত চলে আসতে পারে। তবে এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কটি দুই লেনের। এছাড়া বঙ্গবন্ধু সেতুটিও দুই লেনের। এতে চার লেনের সুবিধায় এলেঙ্গা পর্যন্ত আসা যানবাহনগুলো দুই লেনের মুখে আটকে যায়। সেখান থেকেই যানজটের শুরু হয়। এছাড়া সিরাজগঞ্জ অংশে চার লেনের কাজ চলমান থাকায় সড়কে চাপ বাড়লেই যানজটের সৃষ্টি হয়।
মহাসড়ক উন্নতিকরণের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মীর আখতার জয়েন্ট ভেঞ্চারের ব্যবস্থাপক এখলাছ উদ্দিন বলেন, ‘ঈদের আগেই নলকার নতুন সেতুর এক লেন খুলে দেয়া হবে। ইতোমধ্যেই মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানের খানাখন্দগুলো সংস্কারের কাজ শেষ করা হয়েছে। ঈদযাত্রায় সড়ক প্রশস্তকরণ কাজ বন্ধ রাখা হবে।’
টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘যানজটের বিষয়টি নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। যানজট হলে আমরা ব্যবসায়িকভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হই। আমরাও অপেক্ষায় থাকি ঈদে বাসের মালিক ও শ্রমিকরা একটু বেশি টাকা উপার্জন করব। বিষয়টি নিয়ে পুলিশ সুপারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন এবার যানজট হওয়ার শঙ্কা নেই।’
বঙ্গবন্ধু যমুনা বহুমুখী সেতুর প্রকৌশলী আহসান মাসুদ বাপ্পী বলেন, ‘স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে ঈদযাত্রায় যানবাহন কয়েক গুণ বেড়ে যায়। স্বাভাবিক সময়ে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ৬ থেকে ৭টি লেনে টোল আদায় করা হয়। ঈদের আগে যানজট নিরসনে সেতুর উভয় পাশে ১৮টি লেনে টোল আদায় করা হবে।’
টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, ‘যানজট এড়াতে এবার আমরা ভিন্ন পরিকল্পনা নিয়েছি। এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়কে আমরা অধিক বিবেচনায় রেখে সেখানে অস্থায়ী রোড ডিভাইডার স্থাপন করা হবে। এবার সড়কে ৭১০ জন পুলিশ সদস্য সব সময় কাজ করবে।’