বৈশাখি উৎসব কেন্দ্র করে দেশী দশে চলছে কেনাকাটার ধুম। ক্রেতাদের আগ্রহ, চাহিদা ও দেশজ পণ্যের সম্ভাবনা নিয়ে শেয়ার বিজের সঙ্গে কথা বলেছেন দেশী দশের প্রধান কার্যালয়ের (বসুন্ধরা সিটি) সিনিয়র অ্যাডমিন ম্যানেজার মো. আতাউর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আহমেদ সাঈফ মুনতাসীর
শেয়ার বিজ: দেশী দশের ভাবনাটা কীভাবে এলো?
মো. আতাউর রহমান: বাংলাদেশে বুটিক ও ফ্যাশন হাউজগুলোকে একটা কমন প্ল্যাটফর্মে আনার পরিকল্পনা থেকেই দেশী দশের যাত্রা। নিপুণ, কে ক্র্যাফট, অঞ্জন্স, রঙ, বাংলার মেলা, সাদাকালো, বিবিয়ানা, দেশাল, নগরদোলা ও সৃষ্টিÑ এ দশটি দেশি ফ্যাশন হাউজ নিয়ে দেশী দশ তৈরি করা হয়েছে। বসুন্ধরা সিটি থেকে যাত্রা করলেও বর্তমানে রাজধানীর গুলশান লিংক রোডসহ চট্টগ্রাম ও সিলেটে দেশী দশের ৪টি শোরুম আছে। এক সময় নানা কল্পচিত্র সুঁইসুতোর মাধ্যমে কাপড়ে ফুটিয়ে তোলা হতো। কখনও নকশি কাঁথায় ফুটে উঠতো জীবনপ্রবাহ। কখনওবা রুমালে কবিতার পঙ্ক্তি ফুটিয়ে তোলা হতো। সেসব ঐতিহ্যই নানা আধুনিকায়নের মাধ্যমে বর্তমান ফ্যাশনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে জড়িত পোশাক, বাঁশি কিংবা মাটির তৈরি আসবাবের প্রায় সবই এখানে পাওয়া যায়। তাই বলতে চাই, ক্রেতাদের সাধ ও সাধ্যের পোশাক কেনার সুযোগ করে দেওয়ার ভাবনা থেকেই দেশী দশের জন্ম।
শেয়ার বিজ: দেশী দশের পণ্যের প্রতি মূলত কোন বয়সী ক্রেতাদের আগ্রহ বেশি?
আতাউর রহমান: ছোট-বড়, নারী-পুরুষ সব বয়সী মানুষের চাহিদা অনুযায়ী দৃষ্টিনন্দন পোশাক তৈরি করেন আমাদের ফ্যাশন ডিজাইনাররা। তাই এখানে সব শ্রেণির ক্রেতার ভিড় দেখা যায়। নানা দিবস উপলক্ষে পোশাক ক্রয়ের ব্যাপারে তরুণ-তরুণীদেরই বেশি আগ্রহ দেখা যায়। তরুণদের মধ্যে একটা ব্যাপার লক্ষ করা যায় তারা শুধু নিজেদের জন্যই কেনেন না; মা, বাবা, দাদা-দাদিদের জন্যও পছন্দসই পোশাক কিনে থাকেন। এটি একটি চমৎকার ট্রেন্ড।
শেয়ার বিজ: বাঙালি সংস্কৃতির আবহ ধরে রাখার প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছে দেশী দশ। এবারের বৈশাখে আপনাদের প্রধান আকর্ষণ কী কী?
আতাউর রহমান: পয়লা বৈশাখ আমাদের সর্বজনীন উৎসব। জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে আগ্রহ রয়েছে। আমাদের এখানে দশটা আলাদা প্রতিষ্ঠান নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিবারের মতো এবারও নতুন নতুন ডিজাইনের অনেক পোশাক এসেছে। ক্রেতারা আউটলেট ঘুরে পার্থক্যটা বুঝতে পারবেন। শুধু পয়লা বৈশাখ-ই নয়, আমাদের সব জাতীয় উৎসব ঘিরে নানা রঙের ভিন্ন ঢঙের পোশাক আনা হয়।
শেয়ার বিজ: অন্যান্য উৎসবের চেয়ে পহেলা বৈশাখে ক্রেতাদের চাহিদা কেমন থাকে?
আতাউর রহমান: ধর্মীয় উৎসবের বাইরে বৈশাখেই ক্রেতার ভিড় বেশি দেখা যায়। বৈশাখ আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। হয়তো এ কারণে বৈশাখে সবাই বাংলার নিজস্বতাটুকু নিজেদের কাজেকর্মে, পোশাকে ধারণ করতে চায়। আর দেশী দশ যেহেতু বাঙালি সংস্কৃতি ধারণ করে বেড়ে উঠছে, বৈশাখে তাই এখানে প্রচুর ক্রেতা সমাগম হয়। আমাদের ব্যবসাও ভালো হয়।
শেয়ার বিজ: মানুষের মধ্যে বাংলা সংস্কৃতির শুদ্ধ চর্চা বাড়াতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছেন কী?
আতাউর রহমান: দেশী দশে শতভাগ বাংলাদেশি পণ্য পাওয়া যায়। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মাটি, কাঁসা, কাঠ, বাঁশ ও পিতল দিয়ে তৈরি শোপিস এখানে পাওয়া যায়। এসব কিছুই আমাদের সংস্কৃতির উপাদান। অন্যান্য ফ্যাশন হাউজগুলোর তুলনায় অপেক্ষাকৃত কম দামে সব পণ্য পাওয়া যায়। তাছাড়া প্রতিবছর দেশের জাতীয় উৎসবগুলোয় আমাদের আউটলেটের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। কখনও কখনও এসব অনুষ্ঠান সপ্তাহ ধরে চলে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বাড়ানো ও নানা দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরার জন্যই আমরা এমন আয়োজন করে থাকি। সামনে আরও নতুন কিছু করার পরিকল্পনা আছে।
শেয়ার বিজ: আপনাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আতাউর রহমান: কয়েক বছরের মধ্যে বাংলাদেশের সব জেলায় দেশী দশের আউটলেট খোলার ইচ্ছা আছে আমাদের। দেশের সব মানুষের কাছে তুলনামূলক কম দামে দেশিপণ্য পৌঁছে দেওয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ্য।