এবারে আটা-ময়দা ব্যবসায়ীদের পালা!

বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি নতুন কোনো খবর নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই চলছে তা। চালের বাজারে রাশ টেনে ধরতে সরকার তথা প্রশাসনের তৎপরতাও চোখে পড়ে। এখন সে সুযোগেই কিনা কে জানে, আটা-ময়দার দামও বৃদ্ধি পেয়েছে লক্ষণীয়ভাবে। এ বিষয়ে গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘চালের দামে সুযোগ নিচ্ছেন আটা ব্যবসায়ীরা’ শিরোনামের খবরটি এরই মধ্যে অনেক পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকবে। সেখানে দেখা যাচ্ছে, চালের দাম বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন সীমিত আয়ের মানুষ। পরিস্থিতি সামাল দিতে আবার দুই বেলা রুটি খাওয়া ধরেছেন অনেকে। এতে আটার ওপর চাপ বেড়েছে স্বভাবতই। আর চাহিদা বাড়লে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পায়Ñএটা অর্থনীতির স্বাভাবিক নিয়ম। প্রশ্ন হলো, প্রকৃতই কি অর্থনীতির নিয়ম মেনে দেশে চালের দামের সঙ্গে সংগতি রেখে বাড়ছে আটা-ময়দার দাম? এর কোনো সদুত্তর আমাদের জানা নেই। এক্ষেত্রে কেউ কেউ কারসাজির মাধ্যমে আটা-ময়দার দাম বৃদ্ধির যে অভিযোগ তুলছেন, সেটি একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক পরিচালক এম আসাদুজ্জামান এ দৈনিকের কাছে ইঙ্গিত দিয়েছেন, চলমান প্রেক্ষাপটে ব্যবসায়ীদের যেভাবে তদারকি করা উচিত ছিল, সেটা করা হয়নি। এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করা কঠিন। খেয়াল করার বিষয়, চালের দাম বৃদ্ধির কদিন পরই বিশেষত ময়দার দাম বাড়িয়ে দেয় কিছু ব্র্যান্ড কোম্পানি। বাজারের সঙ্গে সংগতি রেখে পণ্যের দাম তারা বাড়াতে পারে বটে; কিন্তু তাদের পণ্যের ক্রেতারা তো মূলত মধ্যবিত্ত শ্রেণির। সরু চালের দাম বৃদ্ধির কারণে ওই শ্রেণিটি ব্যাপকভাবে ময়দা খাওয়া শুরু করে চাহিদা বাড়িয়ে দিয়েছে, এ যুক্তি তেমন জুতসই হয় না। কোনো কারণে চালের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেলে বরং দ্রæত আটায় ভরসা রাখার প্রবণতা রয়েছে নি¤œবিত্তের। এদিকে নি¤œবিত্তের মধ্যে খুব কম সংখ্যকই ব্র্যান্ড আটা-ময়দার ক্রেতা। তারপরও কেন চালের দাম বৃদ্ধির প্রায় সঙ্গে সঙ্গে আটা-ময়দার দাম বেড়ে গেল, তার কারণ অনুসন্ধান জরুরি।

সুখবর হলো, বাজারে ওএমএস চালু করা হয়েছে। আর ওর মাধ্যমে চালের পাশাপাশি বিক্রি হচ্ছে আটা। ওএমএসে আতপ চাল এবং তা অন্যবারের তুলনায় দ্বিগুণ দামে বিক্রি নিয়ে অভিযোগ রয়েছে অনেকের। তবে জানা গেছে, নিম্ন আয়ের মানুষ বাড়তি দামে আতপ চাল কিনতে অনীহা দেখালেও কিছুটা উচ্চ আয়ের মানুষজন সেই চাল কিনছেন পিঠা প্রভৃতি তৈরির জন্য। এখন আতপ চাল বিক্রি সমান তালে চলতে থাকলে কিন্তু খোলাবাজারে আনা আটা-ময়দার ওপর চাপ বাড়বে। সেক্ষেত্রে বর্তমান মূল্যে ওএমএসে আটা বিক্রি কত দিন চালিয়ে যাওয়া সম্ভব, সেটিও ভাবনার বিষয়। আসল কথা হলো, ওএমএস দিয়ে সীমিত আয়ের মানুষের দুর্ভোগ খানিকটা লাঘব করা গেলেও তা পুরোপুরি দূর করা যাবে না। এজন্য পুরো বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা প্রয়োজন। আরেকটি বিষয়, এবারে দেশে সামগ্রিকভাবে ধান উৎপাদনের স্বাভাবিকতা যেভাবে ব্যাহত হয়েছে, গমের বেলায় কিন্তু তেমনটি শোনা যায় না। এও অনস্বীকার্য, গম যে মাত্রায় উৎপাদন হয়, সেটি প্রচুর হলেও খাদ্যশস্য হিসেবে তা ধানকে প্রতিস্থাপনের জন্য যথেষ্ট নয়। এমন পরিস্থিতিতে আটা-ময়দার বাজারে তদারকি তো বাড়াতেই হবে; তবে চালের বাজারের ওপরই বেশি গুরুত্ব দেওয়া দরকার। কেননা প্রধান এ খাদ্যশস্যের বাজার শান্ত হয়ে এলেই আটা-ময়দার দামও নিম্নমুখী হবে বলে ধারণা। দেশে গম আমদানি কেমন হচ্ছে, সেদিকে এবং তার ব্যয়ের সঙ্গে বাজারে আটা-ময়দার দামের সংগতি রয়েছে কি না, সেটাও কঠোরভাবে মনিটর করা প্রয়োজন।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০