এবার ক্যাচ মিসের আক্ষেপ, সিরিজও হাতছাড়া

CHRISTCHURCH, NEW ZEALAND - MARCH 23: Shak Mahedi Hasan of Bangladesh (R) is congratulated by team mates after dismissing Will Young of New Zealand during game two of the One Day International series between New Zealand and Bangladesh at Hagley Oval on March 23, 2021 in Christchurch, New Zealand. (Photo by Kai Schwoerer/Getty Images)

ক্রীড়া ডেস্ক: আগের ম্যাচে হতাশার ব্যাটিং উপহার দিলেও মঙ্গলবার আর তেমনটা হয়নি। শুরু থেকেই অধিনায়ক তামিম ইকবাল দারুণ খেলেন। পরে মোহাম্মদ মিথুন জ্বলে ওঠেন। তাই স্কোর বোর্ডে লড়াই করার মতো পুঁজিও পেয়ে যায় বাংলাদেশ। বল হাতে শুরুটা বেশ করেছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান ও শেখ মেহেদি হাসান। একটা সময় জয়ের সম্ভাবনাও দেখেছিল রাসেল ডমিঙ্গোর শিষ্যরা। কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে একাধিক সহজ ক্যাচ মিস করে বসে লাল-সবুজ প্রতিনিধিরা। যে কারণে ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ে বাংলাদেশ। শেষ পর্যন্ত টম ল্যাথামের সেঞ্চুরির কাছেই ৫ উইকেটে হার মানতে বাধ্য হয় সফরকারীরা। এরফলে তিন ম্যাচের সিরিজ ২-০তে পেছনে পড়ে হাতছাড়াও করেছে টাইগাররা।

সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মঙ্গলবার আগে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ২৭১ রান। তামিম ইকবাল ৭৮ ও মিথুন করেন ৭৩ রান। বল হাতে শুরুটা ভাল হলেও ফিল্ডারদের ব্যর্থতায় শেষটায় সফরকারীদের মিশে রয়েছে আক্ষেপ। এ সুযোগে ১০ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখে অধিনায়ক টম ল্যাথামের সেঞ্চুরিতে (১১০*) জয় নিশ্চিত করে নিউজিল্যান্ড।

ক্রাইস্টচার্চের হ্যাগলি ওভালে নিউজিল্যান্ডের সামনে ২৭২ রানের টার্গেট দিয়ে বল হাতে শুরুটা ভালো করেছিল বাংলাদেশ। ৫ম ওভারেই নিজের বলে নিজে ক্যাচ নিয়ে মার্টিন গাপটিলকে ফেরান মোস্তাফিজ। এর কিছুক্ষণ পরই কিউই শিবিরে শেখ মেহেদির হানেন জোড়া আঘাত। হেনরি নিকোলস ও উইলি ইয়ং তরুণ অফ স্পিনারের বলে বোকা হয়ে ফেরেন। তাই বাংলাদেশ শিবিরে জয়ের সম্ভাবনা জেগে উঠেছিল। যদিও চতুর্থ উইকেটে সেটা কিছু সময়ের জন্য মিলিয়ে দেন টম ল্যাথাম ও ডেভিড কনওয়ে। জুটিতে তারা যোগ করেন ১১৩ রান। ঠিক সে সময়ে দারুণ এক থ্রুতে কনওয়েতে রান আউটের ফাঁদে ফেলেন তামিম। এর কিছুক্ষণ পরই জিমি নিশামকে ফেরানোর সুযোগ নষ্ট করেন মুশফিক। কিউই ব্যাটসম্যানের ব্যাট ছুঁয়ে বল উইকেটের পেছনে। সহজ ক্যাচ অযথা ডাইভ দিতে গিয়ে ছেড়ে দেন মুশফিকুর রহিম। এদিকে টম ল্যাথামের টাইমিংয়ের গড়বড়ে সহজ ক্যাচ হাতের মঠোর রাখতে পারেনি শেখ মেহেদি। পরপর দুই ওভারে সুযোগ হাতছাড়া, বাংলাদেশের আশার সমাধি সেখানেই। এ সুযোগে দারুণ খেলে টম ল্যাথাম ১০৮ বলে ১১০ রান করে ম্যাচ জিতিয়েই ফেরেন।

তাসকিন ১০ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৬৭ রান, কোনো উইকেট পাননি। মোস্তাফিজ ২ উইকেট নিলেও ৮.৩ ওভারে দিয়েছেন ৬২ রান। মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৭.২ ওভারে দিয়েছেন ৪৩ রান। শেখ মেহেদী ৪২ রানেন নেন ২টি উইকেট।

এরআগে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে হ্যাগলি ওভালে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ধাক্কা লাগে বাংলাদেশ শিবিরে। ম্যাট হেনরিকে পুল করতে গিয়ে দ্বিতীয় ওভারের চতুর্থ বলেই আউট হন লিটন দাস। তবে তার অভাব এদিন বুঝতে দেননি তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের দ্বিতীয় উইকেট জুটি। তাদের ব্যাট থেকে আসা এক-দুই রান আর কিছু বাউন্ডারি বাংলাদেশের রানের চাকা সচল রাখে। শেষ পর্যন্ত এ দুজনের জুটি থামে দলীয় ৮৫ রানে। স্যান্টনারের করা ওয়াইড বলটি এগিয়ে মারতে এসে স্ট্যাম্পিংয়ের শিকার হন ৪৬ বলে ৩২ রান করা সৌম্য। তার বিদায়ে ভাঙে দ্বিতীয় উইকেটের ৮১ রানের জুটি।

সৌম্য ফিরলেন দারুণ ব্যাট চালান তামিম। শেষ পর্যন্ত এ তারকা বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে স্পর্শ করেন ওয়ানডেতে ফিফটির ফিফটি। এজন্য তিনি খেলেন ৮৪ বল। ২১২ ম্যাচের দীর্ঘ ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তামিমের এটি ৬৩তম পঞ্চাশোর্ধ্ব রানের ইনিংস। এর মধ্যে সেঞ্চুরি রয়েছে ১৩টি। আর বাকি ৫০টি ৫০ রানের ইনিংস। এ ক্ষেত্রে তামিম আছেন বাংলাদেশিদের মধ্যে শীর্ষে। একই ফিফটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশি হিসেবে সর্বোচ্চ ৫০+ রানের ইনিংস খেলা ব্যাটসম্যানও বনে গেলেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এটি তামিমের ষষ্ঠ ৫০ ছাড়ানো ইনিংস। এই রেকর্ডে সাকিব আল হাসানকে পেছনে ফেলেছেন তিনি।

নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বাংলাদেশিদের মধ্যে সর্বোচ্চ রানের মালিকও এখন তামিম। এখানেও সাকিবকে টেক্কা দিয়েছেন তিনি। মঙ্গলবার এমন সব রেকর্ড গড়ার পর সেঞ্চুরির আশা জাগিয়ে ছিলেন এ বাঁহাতি। কিন্তু হাত খোলার আগেই রানআউটের দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে ব্যক্তিগত ৭৮ রানে ফেরেন তিনি। ১০৮ বলে তার ৭৮ রানের ইনিংসে ছিল ১১টি বাউন্ডারি। মুশফিকুর রহিমের ডাকে সাড়া দিয়ে দ্রুত একটি রান নিতে গেলে জিমি নিশাম পা দিয়ে বলে টোকা মেরে ভেঙে দেন তামিমের স্টাম্প।

দলের প্রয়োজন বেশ খেলছিলেন মুশফিক। কিন্তু ধীরে পথ চলছিলেন তিনি (৩৪)। সে ঘাটতিটা পরে অনেকটাই পুষিয়েছেন মোহাম্মদ মিথুন। বলের চেয়ে অনেক এগিয়ে থাকা ইনিংস। ৫৭ বলে ৭৩ রান করে শেষ পর্যন্ত অপরাজিত ছিলেন তিনি। উইকেটের চার দিকেই ব্যাট চালিয়েছেন তিনি। যদিও ৬০ রানে একটা জীবন পেয়েছিলেন। কিন্তু সার্বিক দিক দিয়ে মিথুনের ইনিংসটি ছিল দুর্দান্ত। ৬টি চার আর ২টি ছক্কা ছিল এতে। শেষ দিকে মাহমুদউল্লাহ ১৮ বলে ১৬, মেহেদী হাসান ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ৭ রান করে মিথুনকে কিছুটা সহায়তা করেছেন। যে কারণে লড়াইয়ে বেশ ভালো পুঁজিই পেয়ে যায় টিম টাইগার্স।

নিউজিল্যান্ডের হয়ে ট্রেন্ট বোল্ট ১০ ওভারে ৪৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ১ উইকেট। একটি করে উইকেট নিয়েছেন কাইল জেমিসন ও ম্যাট হেনরি। রান দিয়েছেন যথাক্রমে ৪৮ আর ৩৬ করে। স্বাগতিকদের সেরা বোলার ছিলেন মিচেল স্যান্টনার। ২ উইকেট পেয়েছেন, যদিও তিনি ১০ ওভারে রান দিয়েছেন ৫১। নিশাম ৯ ওভারে দিয়েছেন ৭৩ রান। ম্যাচসেরা হয়েছেন টম ল্যাথাম।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০