এবার ঢাকা ব্যাংকে খেলাপি পেনিনসুলা স্টিল

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম:সীতাকুণ্ডের বন্ধ হয়ে যাওয়া ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পেনিনসুলা স্টিল মিলস লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটি তিন বছর আগে খেলাপি হয়েছিল ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেডে (ইবিএল)। প্রতিষ্ঠানটির কাছে ইবিএলের খেলাপি পাওনা ৫৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। আর প্রায় তিন বছর পর ঢাকা ব্যাংক লিমিটেড খাতুনগঞ্জ শাখায় খেলাপি হয়েছে ৪৫ কোটি ৪০ লাখ ৮১ হাজার ১৬৫ টাকা। এ খেলাপি পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে থাকা ৮৫ শতক সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। 

ঢাকা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা এবং জাহাজ ভাঙা ব্যবসায়ীদের সূত্রে জানা যায়, ব্যবসায়ী জাফর আলমের মালিকানাধীন জাহাজ ভাঙা প্রতিষ্ঠান সুপার স্টিলস, প্রগতি স্টিলস, কে জেড এন্টারপ্রাইজ এবং পেনিনসুলা স্টিল মিলস। এর মধ্যে পেনিনসুলা স্টিল ঢাকা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নেয়। গত কয়েক বছর প্রতিষ্ঠানটির বাণিজ্যিক উৎপাদন বন্ধ। কিন্তু এক বছর ধরে ঋণের টাকা শোধ করতে পারেনি। ফলে খেলাপি হয়ে পড়ে। চলতি বছরের গত ২ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কাছে খেলাপি পাওনার পরিমাণ ৪৫ কোটি ৪০ লাখ ৮১ হাজার ১৬৫ টাকা। এ খেলাপি পাওনা আদায়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ঋণের বিপরীতে সীতাকুণ্ডের শীতলপুরে ৮৫ শতক বন্ধকি জমি সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে। আগামী ৩০ জুন ঢাকা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখায় এ নিলাম কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে।

অপরদিকে পেনিনসুলা ইবিএলের আগ্রাবাদ শাখা থেকে ঋণ নেয়। আর প্রতিষ্ঠানটি পাওনা পরিশোধে ব্যর্থতায় ২০১৯ সালের ৩০ জুন খেলাপি হয়েছিল। তখন প্রতিষ্ঠানটির কাছে ব্যাংকটির সুদাসলসহ মোট পাওনা দাঁড়িয়েছিল ৪৯ কোটি ৫২ লাখ ৮৬ হাজার ৯০৩ টাকা। আর এ পাওনা আদায়ে প্রতিষ্ঠানটির ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে থাকা দুই একর ৬৪ শতক জমি নিলামে বিক্রির চেষ্টা করা হয়। কিন্তু ক্রেতা পাওয়া যায়নি। এরপর ইবিএল দ্বিতীয় দফায় নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত ব্যাংকটির হিসাবমতে, সুদাসলসহ মোট পাওনা দাঁড়িয়েছিল ৫৬ কোটি ৪৫ লাখ ৯২ হাজার ১২৭ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে প্রতিষ্ঠানটির দায় সুদ বেড়েছে ছয় কোটি ৯২ লাখ পাঁচ হাজার ২২৪ টাকা। সেইবারেরও বিক্রি হয়নি বন্ধকি সম্পত্তি। পরে অর্থঋণ আদালতে মামলা করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, সুপার স্টিলস, প্রগতি স্টিলস এবং পেনিনসুলা স্টিল দুই বছরের বেশি সময় ধরে পুরোনো জাহাজ আমদানি করে না। এসব ইয়ার্ড এখন বন্ধ। তাদের ব্যবসাও এখন নেই। এছাড়া ব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না।

কয়েকজন ব্যাংকার বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতি ও অদূরদর্শিতার কারণে এ প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া যেসব জমি ব্যাংকে বন্ধকে আছে তার বেশিভাগ কয়েকগুণ অতিমূল্যায়নকৃত। ফলে বিক্রি বা নিলামে আগ্রহী লোক পাওয়া যায় না।

খেলাপি ঋণের বিষয়ে ঢাকা ব্যাংকের খাতুনগঞ্জ শাখা ব্যবস্থাপক হাসান মাহমুদ শেয়ার বিজকে বলেন, জাফর আলমের পেনিনসুলা স্টিল আমাদের ব্যাংকে খেলাপি। তিনি অন্যান্য ব্যাংকেও খেলাপি। তার ব্যবসা এখন চলমান নেই। তিনি ঋণ পুনর্গঠনের জন্য আবেদনও করেননি। তবে তিনি স্টিল মিল বিক্রি করে লোন পে অফ করতে পারেন।

অপরদিকে ইবিএল আগ্রাবাদ শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, পেনিনসুলা স্টিল আমাদের শাখা থেকে ঋণ সুবিধা নেয়, পরে তা পরিশোধে ব্যর্থ হয়। খেলাপি পাওনা আদায়ে ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে থাকা সীতাকুণ্ডের জাহানারাবাদ এলাকায় দুই একর ৬৪ শতক জমি নিলামে বিক্রির চেষ্টা করা হলেও বিক্রি হয়নি। পরে অর্থঋণ আদালতে মামলা করা হয়। এ মামলা চলমান আছে।

এ বিষয়ে জাফর আলম শেয়ার বিজকে বলেন, পুরোনো জাহাজের দাম হঠাৎ কমে গেলে বিপুল পরিমাণে লোকসান হয়। আমাদের ইয়ার্ডের কাঁচামাল স্টিল মিল চলত। আর কাঁচামাল দিয়ে স্টিল মিল চলত। ফলে স্টিল মিলও বন্ধ হয়ে যায়। কভিডের কারণেও ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। তবে ব্যাংকঋণ পরিশোধের ইচ্ছা আছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০