নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বনানীতে বহুতল ভবনের অগ্নিকাণ্ডের রেশ কাটতে না কাটতেই আবারও আগুনে পুড়ল পাশের এলাকা গুলশান-১ নম্বরের ডিএনসিসি মার্কেট লাগোয়া কাঁচাবাজার। গতকাল ভোর পৌনে ৬টার দিকে এই অগ্নিকাণ্ডে ওই কাঁচাবাজারের দেড়শ’র মতো দোকানের সবগুলোই ভস্মীভূত হয়েছে।
আগুনে কাঁচাবাজারের সামনের পাঁচতলা গুলশান শপিং সেন্টারের কয়েকটি দোকানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে কাঁচাবাজার লাগোয়া গুলশান-১ নম্বর ডিএনসিসি মার্কেট তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২ জানুয়ারি ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে পুড়েছিল গুলশান-১ নম্বর ডিএনসিসি মার্কেট। সেই সময়ও দোতলা মূল বিপণিবিতানের পাশের কাঁচাবাজার সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। তারপর ওই বাজারটি নতুন করে গড়ে তোলার দুবছরের মধ্যে আবার তা পুড়ে গেল।
গতকাল ভোর পৌনে ৬টার দিকে কাঁচাবাজারটিতে আগুন লাগার খবর পেয়ে তা নেভাতে কাজ শুরু করে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট প্রায় আড়াই ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে যোগ বিভিন্ন স্কুল-কলেজের ৩৫ জন শিক্ষার্থী।
আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার পরও কাঁচাবাজার অংশ থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দোকানে ঢুকে ঢুকে তল্লাশি চালাচ্ছিল, বেরিয়ে আসছিল পোড়া মাছ-মুরগি, বিভিন্ন রকম খাদ্যপণ্যের ক্যান।
গুলশান-১ নম্বর ডিএনসিসি মার্কেটের দোতলা ভবনের পূর্ব পাশ ঘেঁষে লোহার কাঠামোর ওপর টিন দিয়ে গড়ে ওঠা এ কাঁচাবাজারে মাংস ও মাছের দোকানের পাশাপাশি মুদি ও সুগন্ধীর দোকান ছিল। আমদানি করা খাদ্যপণ্য ও প্রসাধনীর অনেক দোকানের পাশাপাশি প্লাস্টিকের খেলনার দোকানও ছিল সেখানে। তার একটিকেও অক্ষত দেখা যায়নি।
এই কাঁচাবাজারে দেড়শ’র মতো দোকান ছিল বলে জানিয়েছেন ডিএনসিসি মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এসএম তালাল রিজভী। তিনি বলেন, ‘কোনোটিই আর নেই। সবগুলো পুড়ে গেছে।’
তবে তাদের দোতলা বিপণিবিতানটি অক্ষত রয়েছে বলে জানান রিজভী। দোতলা মূল বিপণিবিতানে দোকান রয়েছে ২৩৪টি। অগ্নিকাণ্ডে কারও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
অগ্নিকাণ্ড স্থলে উৎকণ্ঠা নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন দোকানি জানিয়েছেন, রাতে দোকানগুলোতে কেউ থাকে না, বাজারের কলাপসিবল গেটে তালা মেরে পাহারাদাররাও বাইরেই থাকেন।
কাঁচাবাজারের সামনে পাঁচতলা গুলশান শপিং সেন্টারেও আগুন ছড়িয়েছিল। সেখানে দোতলার বেশ কয়েকটি দোকান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ বিপণিবিতানে রয়েছে, হার্ডওয়্যারের দোকান, হার্ডওয়্যারের দোকান, বিভিন্ন ধরনের খাবারের দোকান। কীভাবে এই অগ্নিকাণ্ডের সূচনা, তা তাৎক্ষণিকভাবে জানা যায়নি। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ধারণা, কাঁচাবাজারের সুগন্ধীর কোনো দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত।
অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত দোকানিরা পুনর্বাসনের জন্য সরকারের কাছ থেকে সহায়তা চেয়েছেন। তারা বলছেন, দুবছর আগে অগ্নিকাণ্ডের পর তেমন সহায়তা পাননি তারা, নিজের চেষ্টায়ই উঠে দাঁড়িয়েছিলেন।
অগ্নিকাণ্ডের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, মামলা জটিলতার কারণে এখানে স্থায়ী একটি মার্কেট গড়া যাচ্ছে না। মামলা নিষ্পত্তিতে উদ্যোগ এখন নেবেন তিনি।
এদিকে, ঢাকার গুলশানের ডিএনসিসি মার্কেট লাগোয়া কাঁচাবাজারে অগ্নিকাণ্ড তদন্তে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে ফায়ার সার্ভিস। অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান করা হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের উপপরিচালক (প্রশাসন) শামীম আহসান চৌধুরীকে। এ কমিটির সদস্য সচিব করা হয়েছে সহকারী পরিচালক সালেহ উদ্দিনকে।
