এবার প্রবৃদ্ধি হবে ৭ শতাংশ

নিজস্ব প্রতিবেদক: চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছর বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) সাত শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা করছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলো নিয়ে তৈরি করা এডিবির এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক শীর্ষক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল বুধবার এডিবির ঢাকা আবাসিক মিশনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করেন মিশনপ্রধান মনমোহন পারকাশ। প্রতিবেদনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্থার অর্থনীতিবিদ সুন চ্যান হং।

সাময়িক হিসাব করে এবার সাত দশমিক ৬৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা দিয়েছিল সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। অন্যদিকে ছয় দশমিক পাঁচ থেকে ছয় দশমিক ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা দিয়েছিল বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংকের এ প্রতিবেদনের সঙ্গে ইতোমধ্যে দ্বিমত প্রকাশ করেছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ অবস্থায় বছর শেষে প্রবৃদ্ধি দুই সংস্থার অনুমানের মাঝামাঝি অবস্থানে থাকবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি।

সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রবাসী আয় ঘুরে দাঁড়ালেও ভোগচাহিদা ঝিমিয়ে আছে। অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারের বিশাল ব্যয় ও সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতির ফলেও ব্যক্তি খাতে বিনিয়োগের প্রত্যাশা পূরণ হচ্ছে না। তবে রফতানি খাতে রফতানি আয় ধারণার চেয়ে বেশি বাড়বে। সব মিলে প্রবৃদ্ধি উন্নীত হবে সাত শতাংশে।

স্বাগত বক্তব্যে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের প্রাথমিক যোগ্যতা অর্জন করায় বাংলাদেশকে অভিনন্দন জানান আবাসিক মিশনপ্রধান মনমোহন পারকাশ। তিনি বলেন, বাংলাদেশ একমাত্র দেশ যারা তিন শর্তই পূরণ করতে পেরেছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভারসাম্যের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। দেশের সামষ্টি অর্থনীতিও শক্ত অবস্থানে। রাজস্ব ঘাটতিও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম। তবে দেশকে আরও এগিয়ে নিতে হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

কান্ট্রি ডিরেক্ট আরও বলেন, দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি রফতানি রেমিট্যান্স বাড়বে। পোশাকশিল্পের বৈচিত্র্য ও শ্রমঘন শিল্প খাতে গুরুত্ব দেওয়া হলে আগামীতে প্রবৃদ্ধিও বাড়বে। আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানোর পাশাপাশি বিকেন্দ্রীকরণ নিশ্চিত করতে ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে শিল্পায়নে গুরুত্ব দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

নতুন প্রযুক্তির অন্তর্ভুক্তির কারণে আগামীতে দেশের শ্রমবাজারে বিশেষ করে পোশাক খাতে কর্মসংস্থান কমে আসবে বলেও ধারণা দিয়েছে এডিবি। সংবাদ সম্মেলনে সুন চ্যান হং বলেন, পোশাকশিল্প ক্রমেই প্রযুক্তিনির্ভরতার দিকে ঝুঁকছে। স্বয়ংক্রিয়তার কারণে শ্রমিকপ্রতি যন্ত্র ব্যবহারের হার বাড়ছে। এ খাতের কারখানায় কাপড় কাটা, কাপড়ের বাড়তি সুতা কাটা ও কাপড় ধোয়ার কাজে যন্ত্র ব্যবহার হচ্ছে। শ্রমিকদের জায়গায় যন্ত্র স্থাপনের কারণে উৎপাদনে দক্ষতা বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, পরিচালন দক্ষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি প্রযুক্তিগত দক্ষতা ও উদ্ভাবনের প্রবণতা বাড়ছে। এর ফলে রফতানি প্রবৃদ্ধি ও আয় বাড়ছে। তবে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প এখনও প্রতিযোগিতায় সক্ষম। কাপড় সেলাই করার কাজ এখনও শ্রমঘন রয়েছে। শ্রমের দাম কম থাকায় এ খাতে এখনও বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায় আছে। কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে আগামীতে জনশক্তির উচ্চ-মানসম্পন্ন কারিগরি শিক্ষা ও নতুন উদ্ভাবনী স্টার্টআপ উদ্যোগ এবং উদ্যোক্তাদের সহায়তা দেওয়ার তাগিদ দেন তিনি।

চলতি অর্থবছর কৃষি খাতে দুই দশমিক তিন শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা দিয়েছে এডিবি। এ খাতে গত অর্থবছর প্রবৃদ্ধি ছিল দুই দশমিক ৯৭ শতাংশ। এ হিসাবে এবার কৃষির প্রবৃদ্ধি কমছে। যদিও এবার কৃষিতে তিন দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে ধারণা দিয়েছে বিবিএস।

এবার শিল্প খাতে ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে এডিবির পূর্বাভাসে উঠে এসেছে। গত অর্থবছর এ খাতে প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ২২ শতাংশ। রফতানি বেড়ে যাওয়ার সুবাদে শিল্পের প্রবৃদ্ধি বাড়বে বলে ধারণা সংস্থাটির। অবশ্য পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাথমিক হিসাবে এবার শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ১১ দশমিক ৯৯ শতাংশ। শিল্প খাতে পূর্বাভাস ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর প্রাক্কলনে বড় ধরনের পার্থক্য রয়েছে।

 

 

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০