মেহেদী হাসান, রাজশাহী: আকাশচুম্বী নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। এর মধ্যে দাম বেড়েছে শিক্ষা উপকরণের। সারাদেশের মতো শিক্ষা নগরী রাজশাহীতেও এর প্রভাব পড়েছে। ফলে সমাজের উচ্চবিত্তের মাঝে প্রভাব প্রকট না হলেও শিক্ষা উপকরণের মূল্য বৃদ্ধির প্রভাব নি¤œ আয়ের ক্রেতাদের মধ্যে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, কাগজ, খাতা, পেন্সিল, ব্যবহারিক খাতা, স্কুল ফাইল, অফিস ফাইল, ক্যালকুলেটর, সাদা বোর্ড, জ্যামিতি বক্স, টালি খাতা, কলম বক্স, স্কেল, পরীক্ষায় ব্যবহƒত ক্লিপবোর্ড, কালিসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে।
রাজশাহী সিটি সেন্টারের বিভিন্ন বইয়ের দোকানগুলো ঘুরে জানা যায়, আগের প্রকাশিত চিকিৎসাবিদ্যা, প্রকৌশল শিক্ষা ও আইনের বইসহ সব ধরনের বইয়ের দাম ৫ শতাংশ বৃদ্ধিতে বিক্রি হচ্ছে। আর নতুন করে বাজারে যেসব বই আসছে, সেগুলো ২৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া প্রতি পেজ ফটোকপি করতে খরচ হচ্ছে আড়াই টাকা থেকে তিন টাকা। যা আগে ছিল দেড় টাকা থেকে দুই টাকা ।
রাজশাহী সমবায় সুপার মার্কেটের স্টেশনারি ও শিক্ষা উপকরণ বিক্রির দোকানগুলোতে ৬০ টাকার ব্যবহারিক খাতা এখন ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া মানভেদে বিভিন্ন ধরনের তৈরি খাতার দাম বেড়েছে পিস প্রতি ৫ থেকে ১০ টাকা। মিনি ফাইল প্রতিটি ১৫ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা। জিপার ফাইল ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা। কলমের দাম ডজনপ্রতি বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। মার্কার পেন প্রকার ভেদে প্রতি পিস ১০ টাকা থেকে বেড়ে ২০ টাকা হয়েছে।
সাধারণ ক্যালকুলেটার রকম ভেদে দাম বেড়েছে ১০ থেকে ৩০ টাকা। সায়েন্স ক্যালকুলেটর ১২৫০ থেকে বিক্রি হচ্ছে ১৫৫০ টাকায়। জ্যামিতি বক্স ৫০ থেকে ৮০ টাকা, ১০০ টাকা থেকে বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্লাস্টিক ও স্টিলের স্কেল ডজনপ্রতি ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। রাবার ডজনপ্রতি ১০ টাকা থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে।
ছয় বছর বয়সী ছেলের জন্য শিক্ষা উপকরণ সামগ্রী কিনতে আসা আরিফুল হক নামের এক অভিভাবক বলেন, বাজারে দাম বাড়েনি এমন জিনিস খুব কম খুঁজে পাবেন, কিন্তু আমার ইনকাম বাড়ছে না। অনেক কৌশলে সংসার চালাতে হচ্ছে। শুনতে মনে হচ্ছে শিক্ষা উপকরণের দাম কম বেড়েছে। কিন্তু বাসা ভাড়া, দব্যমূল্য-সব যেভাবে বৃদ্ধি বাড়ছে তাতে সংসার চালিয়ে সন্তানের লেখাপড়া চালাতে বেগ পোহাতে হচ্ছে।
এছাড়া নগরীর আরও বেশ কয়েকজন অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে পরিবারে দুই বা তিন সন্তান লেখাপড়া অবস্থায় রয়েছে ওই পরিবারগুলো সাধারণ বাজার খরচের সঙ্গে শিক্ষা উপকরণের বর্ধিত দামের কারণে সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ চালাতে নাভিশ্বাস উঠেছে।
রাজশাহী সমবায় সুপার মার্কেটের সভাপতি মনিরুজ্জামান লাকি বলেন, মহামারি কাটিয়ে ওঠার পর থেকেই শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে। আর যেসব পণ্য নতুন আসছে সব কিছুর দাম বেড়েছে। ডলারের দাম বৃদ্ধিতে উৎপাদন ও পরিবহন ব্যয় বাড়ার কারণে সব কিছুর দাম বেড়েছে। আগে প্রতি বান্ডিল পরিবহনে খরচ পড়ত ৮০ টাকা আর এখন খরচ হচ্ছে ১২০ টাকা।
বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি (বাপুস) রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি ও আলিয়া লাইব্রেরির স্বত্বাধিকারী জামিলুর রহমান বলেন, বাজারে সবকিছুর দাম এখন বাড়তি। এর প্রভাব শিক্ষা উপকরণের ওপর পড়েছে। আগের প্রকাশিত বইয়ের দাম বাড়েনি। তবে কাগজের দাম বাড়ার ফলে নতুন প্রকাশিত বইগুলো বাজারে আসছে সেগুলোর দাম বেড়েছে।