এবার লাইটার জাহাজ বরাদ্দে নতুন কমিটি

সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: মাসখানেক আগে লাইটারেজ জাহাজ চলাচলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার  ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) থেকে আলাদা হয়ে ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক) গঠন এবং জাহাজ বরাদ্দ শুরু করলে জাহাজ মালিকদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। ফলে অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটারেজ জাহাজ চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। আর এ খাতে জাহাজ মালিকদের দুটি গ্রুপের মধ্যে সমঝোতার অংশ হিসেবে আগামী দুই মাস নৌ-বাণিজ্য দপ্তর থেকে সিরিয়াল অনুসরণ করে লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

নৌ বাণিজ্য দপ্তর সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা লাইটারেজ জাহাজ চলাচলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি) থেকে আলাদা হয়ে ইনল্যান্ড ভেসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং (আইভোয়াক) গঠন এবং জাহাজ বরাদ্দ শুরু করলে জাহাজ মালিকদের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। এর মধ্যে জাহাজ মালিকদের তিনটি সংগঠনের মধ্যে দুটি ডব্লিউটিসির ব্যানারে, অপরটি আইভোয়াকের ব্যানারে জাহাজ বরাদ্দ দিয়ে পণ্য পরিবহন করতে থাকে। এতে অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন রুটে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত লাইটারেজ জাহাজ চলাচলে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। ফলে আমদানিকারকসহ সংশ্লিষ্টরা ভোগান্তিতে পড়ছিল। আর এ খাতে জাহাজ মালিকদের দুটি গ্রুপের মধ্যে সমঝোতার অংশ হিসেবে আগামী দুই মাস নৌ বাণিজ্য দপ্তর থেকে সিরিয়াল অনুসরণ করে লাইটারেজ জাহাজ বরাদ্দে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পাশাপাশি দুই মাসের কার্যক্রম মনিটরিং করার পর আইনগত দিক পর্যালোচনা করে নতুন একটি প্ল্যাটফরম তৈরির মাধ্যমে লাইটারেজ জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনা হবে। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দর ও বিআইডব্লিউটি এর প্রতিনিধিকেও এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে গতকাল বুধবার নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

লাইটার জাহাজ মালিকরা জানান, বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসে বড় বড় মাদার ভ্যাসেল। এর মধ্যে যেগুলো চট্টগ্রাম বন্দরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে পারে না সেগুলোকে বহির্নোঙরে অবস্থান করে লাইটারেজ জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করতে হয়। অনেক সময় বন্দরের জেটিতে বার্থিং নেয়া জাহাজের ওভার সাইড থেকেও এসব জাহাজের মাধ্যমে পণ্য খালাস করে কর্ণফুলী নদীর বিভিন্ন ঘাট ছাড়াও দেশের ৩৬টি নৌঘাটে নেয়া হয়। চট্টগ্রাম বন্দর ও বহির্নোঙর থেকে দেশব্যাপী পণ্য পরিবহনে প্রায় ১৮শ লাইটারেজ জাহাজ রয়েছে। এসব জাহাজের মালিকেরা তিনটি পৃথক সংগঠনের সদস্য। তিন সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে বছর দশেক আগে গঠন করা হয় ডব্লিউটিসি। এই সেল চট্টগ্রাম থেকে দেশব্যাপী লাইটারেজ জাহাজ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে আসছিল। সংগঠনগুলোর মধ্যে বিসিভোয়া, কোয়াব ও আইভোয়াক নেতারা ডব্লিউটিসির নেতৃত্বে থাকেন। ডব্লিউটিসির সিরিয়ালভুক্ত হয়ে জাহাজ বরাদ্দ এবং পরিচালনা করছিল। কিন্তু বেশ কিছু জাহাজ মালিকদের সাড়ে ৬শ কোটির বেশি টাকা আটকে যায়। এই টাকা পরিশোধ করা না হলে ডব্লিউটিসি একাধিক জাহাজ মালিককে (একই সঙ্গে পণ্যের এজেন্ট) জাহাজ বরাদ্দ দেয়া বন্ধ করে দেয়। এ নিয়ে বিরোধের মধ্যে ইনল্যান্ড ভ্যাসেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব চিটাগাং ডব্লিউটিসি থেকে বেরিয়ে মাসখানিক ধরে আলাদা সেল গঠন করে এবং জাহাজ বরাদ্দ প্রদান ও পরিচালনা করতে শুরু করে। ফলে এ খাতের বিশৃঙ্খলা দেয়। বিষয়টি নিয়ে সমুদ্র পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়ে বৈঠক হয়। দীর্ঘ বৈঠক শেষে জাহাজ চলাচলে শৃঙ্খলা আনার জন্য নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তার নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি পিও এমএমডির কার্যালয়ে বৈঠকে বসে। বৈঠকে উভয় পক্ষের নেতারা অংশ নেন। জাহাজ মালিক এবং পণ্যের এজেন্টের প্রতিনিধিরাও যোগ দেন। বৈঠকে দীর্ঘ আলোচনা শেষে আগামী দুই মাস ডব্লিউটিসি বা আইভোয়াক আলাদাভাবে কোনো জাহাজ বরাদ্দ না দিয়ে নৌ বাণিজ্য অধিদপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জাহাজ বরাদ্দ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। উভয় সেলই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে থাকা সবগুলো জাহাজের তালিকা পিও এমএমডি কার্যালয়ে জমা দেবে। ওখান থেকে সিরিয়ালি জাহাজ বরাদ্দ এবং পণ্য পরিবহন করা হবে।

একাধিক জাহাজ মালিক বলেন, বিরোধ কারও জন্য সুফল বয়ে আনে না। আমাদের বিরোধে যদি বড় গ্রুপগুলো এ খাতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়, তাহলে ছোট পার্টিগুলো ব্যবসা নষ্ট হয়ে যাবে। তাই তবু পুরো সেক্টরের বৃহত্তর স্বার্থে আমরা পিও এমএমডির প্রস্তাবে সম্মত হয়েছি। নৌ বাণিজ্য দপ্তর থেকে একই সিরিয়ালে জাহাজ পরিচালনা করতে আমাদের সম্মতির কথা জানিয়ে দিয়েছি। ফলে আপাতত বিশৃঙ্খলা হবে না।

এ বিষয়ে নৌ বাণিজ্য দপ্তরের মুখ্য কর্মকর্তা সাব্বির মাহমুদ শেয়ার বিজকে বলেন, আগামী সোমবার থেকে আমাদের অফিস থেকে লাইটারেজ জাহাজের বরাদ্দ দেয়া হবে। এ বিষয়ে জাহাজ মালিকদের জাহাজের তালিকা জমা দিতে বলেছি। একই সঙ্গে আমদানিকারক ও পণ্যের এজেন্টদেরও জাহাজ চাহিদা জমা দিতে বলেছি। এছাড়া মাদার ভেসেলের কি পরিমাণ কার্গো আছে তার হিসাব দিতে বলেছি। সেই অনুসারে জাহাজ বরাদ্দ দেয়া হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা হবে। আর তাদের একটি কমন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে। তাহেল আর কারও বিরোধ থাকবে না। তিনি আরও বলেন, ৬৫০ কোটি টাকা বকেয়ার বিষয়ে প্রমাণসহ চিঠি দিতে বলেছি। এখানে জাহাজ ভাড়া বকেয়া থাকলে অবশ্যই পরিশোধ করতে হবে। অন্যান্য পাওনাও পরিশোধ করতে হবে। এ বিষয়ে ডিজি (শিপিং) মহোদয় বিষয়টি নিয়ে কথা বলবেন। আমরা চাই লাইটারেজ জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরে আসুক। গুরুত্বপূর্ণ এই সেক্টরের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হোক।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০