এভার স্মার্ট বাংলাদেশের বন্ড সুবিধার অপব্যবহার

রহমত রহমান: নিটওয়্যার খাতের প্রতিষ্ঠান এভার স্মার্ট বাংলাদেশ লিমিটেড (ইএসবিএল)। হংকংয়ের ক্রিস্টাল ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ লিমিটেডের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি আন্তঃবন্ড স্থানান্তরের আড়ালে বিপুল পরিমাণ বন্ড সুবিধার নিট ফেব্রিকস খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে, যার মাধ্যমে শুল্ককর ফাঁকি দিয়েছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আওতাধীন ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এ ফাঁকি উদ্ঘাটন করেছে। শুল্ককর পরিশোধে প্রতিষ্ঠানকে দাবিনামা সংবলিত কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি এ নোটিস দেওয়া হয়। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার (মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) সামান্তা ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমাদের প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। কোনো কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করা হয়নি। বন্ডের সঙ্গে কোনো মিস কমিউনিকেশন থাকতে পারে।’ কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট বন্ড সুবিধার অপব্যবহার ও শুল্ককর ফাঁকির যে অভিযোগ করেছে তা শতভাগ মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

এনবিআর সূত্র জানায়, গাজীপুরের মির্জাপুর বেগমপুর এলাকায় অবস্থিত এভার স্মার্ট বাংলাদেশ লিমিটেডকে ২০০৯ সালে বন্ড লাইসেন্স দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে বন্ড সুবিধার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটি চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর স্থায়ী আন্তঃবন্ড স্থানান্তরের (শতভাগ রপ্তানিমুখী একটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠান থেকে অন্য একটি গার্মেন্ট প্রতিষ্ঠানে কার্য স্থানান্তরই স্থায়ী আন্তঃবন্ড স্থানান্তর) জন্য কমিশনারেটে আবেদন করে। পরে বন্ড কমিশনারেট গোপন সংবাদে জানতে পারে, প্রতিষ্ঠানটি আবেদনে যে কাঁচামাল সংরক্ষিত রয়েছে দেখানো হয়েছে তা সংরক্ষিত নেই। প্রতিষ্ঠানটি শুল্ককর ফাঁকি দিতে গোপনে অবৈধভাবে তা খালাস করে ফেলেছে।

সূত্র আরও জানায়, অভিযোগের সত্যতা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নেয় বন্ড কমিশনারেট। সে অনুযায়ী একজন উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে প্রিভেন্টিভ টিম চলতি বছরের ৮ অক্টোবর প্রতিষ্ঠানটি পরিদর্শন করেন। প্রিভেন্টিভ টিম প্রতিষ্ঠানটি চালু দেখতে পায়। প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সহায়তায় প্রতিষ্ঠানের ওয়্যারহাউসে মজুত কাঁচামালের ইনভেন্ট্রি করা হয়। ইনভেন্ট্রিতে প্রাপ্ত কাঁচামালের বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের জেনারেল ম্যানেজার নিরোশান রমেশ সিলভা লিখিত বিবৃতি দেয়।

প্রিভেন্টিভ টিম ওয়্যারহাউসে দেখা পায়, ওয়্যারহাউসে মজুত বিভিন্ন ধরনের নিট ফেব্রিকস রয়েছে ৩৫ হাজার ৫৮১ দশমিক ৬৮ কেজি। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী আন্তঃবন্ড স্থানান্তরের আবেদনে বন্ড সুবিধায় আমদানি করা মজুত কাঁচামাল দেখানো হয়েছে দুই লাখ ৮২ হাজার ৮৭৯ দশমিক ৪৯ কেজি। তবে সরেজমিন পরিদর্শনে ওয়্যারহাউসে দুই লাখ ৪৭ হাজার ২৯৭ দশমিক ৮১ কেজি কাঁচামাল কম পাওয়া যায়। এসব কাঁচামাল প্রতিষ্ঠানটি শুল্ককর পরিশোধ ছাড়াই অবৈধভাবে অপসারণ করে খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। অপসারণ করা কাঁচামালের মোট শুল্কায়নযোগ্য মূল্য আট কোটি ১৪ লাখ ছয় হাজার ৬৮২ টাকা। এর ওপর প্রযোজ্য শুল্ককর সাত কোটি ২৭ লাখ ১২ হাজার ৪৪৮ টাকা, যা প্রতিষ্ঠানের কাছে আদায়যোগ্য।

কাঁচামাল অবৈধ অপসারণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি কাস্টমস আইন ও বন্ড লাইসেন্সের শর্ত লঙ্ঘন করেছে, যা দণ্ডারোপযোগ্য। অবৈধভাবে কাঁচামাল অপসারণের অভিযোগে কাস্টমস আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেন দণ্ডারোপমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তা জানাতে ১৫ দিনের সময় দিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। ১৯ অক্টোবর ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনার মো. শওকাত হোসেন সই করা নোটিস জারি করা হয়। লিখিত জবাব বা শুনানিতে অংশগ্রহণ না করলে কাস্টমস আইন অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের একজন শেয়ার বিজকে বলেন, প্রতিষ্ঠানটি স্থায়ী আন্তঃবন্ড স্থানান্তরের আবেদন করেই শুল্ককর ফাঁকি দিতে কাঁচামাল অবৈধভাবে অপসারণ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এসব কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানকে জবাব দিতে বলা হয়েছে। কাঁচামাল অবৈধ অপসারণ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানকে অর্থদণ্ড দেওয়া হবে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটি এর আগে কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে দিয়েছে কি নাÑতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০