ক্রীড়া প্রতিবেদক: শিরোনাম দেখেই হয়তো পাঠক চমকে গেছেন! নিউজিল্যান্ডের কাছে হার আবার অবিশ্বাস্য হয় নাকি? আসলে গতকাল ওয়েলিংটনের বেসিন রিভার্জ স্টেডিয়ামে সেরকমই একটি ঘটনার জন্ম দিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রান করেও কোনো দল যে টেস্ট ক্রিকেটে হারতে পারে, তারই নজির দেখিয়েছে টাইগাররা। অবশ্য এমন ‘বিরক্তিকর’ রেকর্ড এর আগে ১৮৯৪ সালের ডিসেম্বরে সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডে গড়েছিল অস্ট্রেলিয়া। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫৮৬ রান করে হেরেছিল অজিরা। ১২২ বছর পর প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর গড়ে এবার কিউইদের বিপক্ষে চারদিন প্রাধান্য বিস্তার করে মুশফিকুর রহিমের দল হারলো ৭ উইকেটে। তাতে দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজে হাথুরু সিংহের শিষ্যরা পিছিয়ে গেলো ০-১ ব্যবধানে।
এতদিন অবশ্য প্রথম ইনিংসে বড় স্কোর গড়ে হারের রেকর্ডটি ছিল পাকিস্তানের। মেলবোর্নে ৫৭৪ রান করার পর ইনিংস ঘোষণা করে সে ম্যাচে পাকিস্তান হেরেছিল ৯২ রানে। ১৯৭২-৭৩ সাল থেকে সে লজ্জা নিয়ে থাকা পাকিস্তান গতকাল এর থেকে মুক্তি পেলো।
ওয়েলিংটন টেস্টে কিছু যে একটা হচ্ছে, তা টের পাওয়া গিয়েছিল রোববার শেষ বিকেলে। প্রথম ইনিংসে টাইগারদের ৫৯৫ রানের জবাবে নিউজিল্যান্ড ৫৩৯ রানে অলআউট হলে ৫৬ রানের লিড সফরকারীদের। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে চতুর্থ দিনের শেষ দিকে ভালো খেলা হাথুরুর শিষ্যরা হঠাৎ তিন উইকেট হারিয়ে খেই হারিয়ে বসে। এর সঙ্গে এদিন যোগ হয়েছিল ইমরুল কায়েসের চোট। তারপরও ভরসা ছিল মুমিনুল হক, সাকিব আল হাসান, মুশফিক রহিম, সাব্বির রহমানরা।
তবে গতকাল দিনের শুরুতে কোনো রান না করেই প্রথম ইনিংসের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান সাকিব আল হাসান ফেরেন সাজঘরে। এরপর মুমিনুল-সাব্বিরের ব্যাটে কিছুটা স্বস্তি। যদিও বেশিক্ষণ নিজের ইনিংসটাকে বড় করতে পারেননি মুমিনুল। এর পরই মাথায় বলের আঘাতে রিটার্ড হার্ট হয়ে আবারও মাঠ ছাড়তে হয় মুশফিককে। বলা যায়, সে সময় একরকম কোণঠাসা সফরকারীরা। যদিও একপ্রান্ত আগলে রেখে দলের স্কোরকে বড় গড়ার দায়িত্বটা নিজের কাঁধে তুলে নেন সাব্বির। দারুণ দারুণ শটে পূর্ণ করেন ৫০ রান। কিন্তু ওই যে অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে অহেতুক খোঁচা মারার অভ্যাস! সেটা বদলাতে না পারায় গতকাল ক্ষতিটা হয়ে গেলো টিম বাংলাদেশের। শেষ পর্যন্ত ইনজুরি আক্রান্ত ইমরুল কায়েস দলের প্রয়োজনে ব্যাটিংয়ে নামলেও অন্যপ্রান্তে তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়ে সফরকারীদের ইনিংস। সর্বসাকুল্যে ১৬০ রান করতে পারে মুশফিকের দল। এর সঙ্গে প্রথম ইনিংসের লিড ৫৬ রান নিয়ে নিউজিল্যান্ডের জয়ের লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়ায় ২১৭ রান।
পঞ্চম দিনের চা-বিরতির আগেও লড়াইয়ের চেষ্টা ছিল বাংলাদেশের। এ সময় নিউজিল্যান্ড দলের দুই ওপেনারকে ৩৯ রানের মধ্যেই সাজঘরে ফেরান মেহেদী হাসান মিরাজ। কিন্তু এর পরের গল্পটা শুধু উইলিয়ামসন আর রস টেইলরের। বোলাররা ভুলে গেলেন লাইন লেংথ, ফিল্ডারদের কাছ থেকেও পাচ্ছিলেন না প্রয়োজনীয় সাহায্য। ভাবভঙ্গিতে বোঝা যাচ্ছিল, ম্যাচের এমন রূপ এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না তাদের!
উইলিয়ামসন-টেলর অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন, এটা সত্যি। কিন্তু তাই বলে হারার আগে হেরে যাবে বাংলাদেশ! টেস্টের পঞ্চম দিনে ২৫.২ ওভারে ১৬৩ রান! এতেই বোঝা যাচ্ছে, সফরকারী বোলারদের ওপর কী তাণ্ডব চালিয়েছেন উইলিয়ামসন-টেলর। শেষ দিকে মিরাজের দারুণ এক ক্যাচ হয়ে টেলর না ফিরলেও নিজের কাজটা ঠিকঠাক করেন উইলিয়ামসন। ৯০ বলে ১০৪ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংসে দলের জন্য জয় এনে দিয়েছেন কিউই অধিনায়ক।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস: ১৫২ ওভারে ৫৯৫/৮ ডি.
নিউজিল্যান্ড প্রথম ইনিংস: ৫৩৯
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস: ৫৭.৫ ওভারে ১৬০ (তামিম ২৫, ইমরুল ৩৬*, মুমিনুল ২৩, মাহমুদউল্লাহ ৫, মিরাজ ১, সাকিব ০, সাব্বির ৫০, মুশফিক আহত অবসর ১৩, তাসকিন ৫, রাব্বি ১, শুভাশীষ ০; বোল্ট ৩/৫৩, সাউদি ১/৩৪, স্যান্টনার ২/৩৬, ওয়াগনার ২/৩৭)
নিউজিল্যান্ড দ্বিতীয় ইনিংস: ৩৯.৪ ওভারে ২১৭/৩ (ল্যাথাম ১৬, রাভাল ১৩, উইলিয়ামসন ১০৪*, টেলর ৬০, নিকলস ৪*; মিরাজ ২/৬৬, রাব্বি ০/৩১, সাকিব ০/৩০)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচসেরা: টম ল্যাথাম
Add Comment