এমসিসিআই’র মধ্যাহ্নভোজে ইইউ রাষ্ট্রদূত: বিনিয়োগ পরিবেশ সৃষ্টিতে এখনও বাধা আছে

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: মানবাধিকার ও শ্রমিক স্বার্থ, শ্রম আইনের দুর্বলতা এবং বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিধি-ব্যবস্থা তৈরি করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনও পিছিয়ে আছে। রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) অভ্যন্তরে শ্রমিক অধিকারের বিষয়ে খুবই খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। শ্রম আইন এখনও জাতিসংঘের কনভেনশনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়নি। এছাড়া সুশাসনের ঘাটতি রয়েছে। এসব বিষয়ে পূর্ণমান নিশ্চিত না হলে ইউরোপীয় বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ করতে আসবেন না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ (এমসিসিআই) আয়োজিত দ্বিতীয় প্রান্তিকের মধ্যাহ্নভোজ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়ুদূন। গতকাল সোমবার এমসিসিআই সম্মেলন কক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এমসিসিআই’র সভাপতি নিহাদ কবিরের সভাপতিত্বে এ সভায় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির সাবেক সভাপতি লায়লা রহমান কবির, সাবেক সহ-সভাপতি কামরান টি রহমান, কমিটি মেম্বার ফ্রান্সিস ডি ম্যরিকোর্ট, সহ-সভাপতি গোলাম মাইনুদ্দীন প্রমুখ।

এতে ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ইউরোপের বাজারে অস্ত্রবাদে সব পণ্যে (ইবিএ) শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়া হয়েছে ৪৯টি স্বল্পোন্নত দেশকে। এদের মধ্যে বাংলাদেশ এ সুবিধা সফলভাবে কাজে লাগাতে পেরেছে। এজন্য বর্তমান জিএসপি-ব্যবস্থা চালু আছে। তবে, দ্রুতই বাংলাদেশের অবস্থান স্বল্পোন্নত শ্রেণি থেকে বেরিয়ে মধ্যমআয়ের দেশে উন্নীত হলে এ সুবিধা থাকবে না। তখন নতুনভাবে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা নিয়ে আলোচনা চলছে। নতুন ব্যবস্থায় সুবিধা পেতে হলে বাংলাদেশকে তিনটি বিষয়ে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। তা হলো, কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উত্তরণ ঘটাতে হবে, সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং প্রযুক্তির ব্যবহারে সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। কমপ্লায়েন্সের জন্য কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা ও শ্রম অধিকারের বিষয়ে জাতিসংঘের কনভেনশন বাস্তবায়ন করতে হবে। এছাড়া সম্প্রতি কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য বাংলাদেশ, ইইউ, আইএলও, যুক্তরাষ্ট্রসহ কয়েকটি পক্ষ মিলে সাসটেইনেবিলিটি কমপ্যাক্ট সই করতে যাচ্ছে। সে অনুসারে শ্রমিক অসন্তোষের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করতে হবে বাংলাদেশকে। সম্প্রতি আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের মাধ্যমে শ্রমিক অধিকারের বিষয়টি পুনরায় সামনে এসেছে। আগামী সপ্তাহে এ নিয়ে ইউরোপীয় সংসদে আলোচনা হবে। সেটি হবে এ বিষয়ে বাংলাদেশের সক্ষমতা যাচাই-বাছাই করা হবে।

এছাড়া গত ৬ এপ্রিল ইউরোপীয় সংসদের একটি সিদ্ধান্তের বরাতে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি জটিল। সুশাসনের ক্ষেত্রে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, বিনিয়োগের পরিবেশ। বিনিয়োগবান্ধব ব্যবস্থা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করা হয়। কিন্তু বাস্তবে এখনও আমরা তা দেখছি না। এ অবস্থার উন্নয়নে একটি রেগুলেটরি ফ্রেমওয়ার্ক গঠনের পরামর্শ দেন তিনি। বিভিন্ন বিধির বাস্তবায়নেও ধীরগতি রয়েছে বলে তিনি মত দেন।

এছাড়া নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক ইস্যু বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করে আগামী ২০১৯ সালের নির্বাচনে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সেগুলো মোকাবিলা করার পরামর্শ দেন। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশকে সহযোগিতা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশের প্রথম স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ এর উন্নয়নে ইউরোপীয় প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রযুক্তি হস্তান্তরের ক্ষেত্রে ক্রমেই আরও অগ্রগতি হবে বলে তিনি জানান। সার্বিকভাবে বাংলাদেশের সঙ্গে ইউরোপের একটি পরিপূর্ণ অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠার প্রত্যাশা করেন তিনি।

সভাপতির বক্তব্যে এমসিসিআই’র সভাপতি নিহাদ কবির বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের দীর্ঘদিনের সহযোগী। বাংলাদেশ প্রযুক্তি ও মেশিনারিজ আমদানিতে বিপুলভাবে উন্নত ওই অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। বিপরীতে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন পণ্যের বড় বাজার ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইউরোপের ৫০ কোটি ক্রেতা-ভোক্তার কাছে বাংলাদেশের পণ্যের বিরাট একটি বাজার রয়েছে সেখানে।

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০